ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিষেকেই চমক মোসাদ্দেকের

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অভিষেকেই চমক মোসাদ্দেকের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত কয়েক বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে আলোচনায় ছিলেন। ব্যাট থেকে রান এসেছে বন্যার তোড়ের মতো। ঘরোয়া আসরগুলোয় রান করার দিক থেকে শীর্ষস্থানেই ছিলেন তিনি। এরপরও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত দলে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এর কারণ বাংলাদেশ দল দারুণ সাফল্য পাচ্ছিল। অবশেষে এবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে সুযোগ করে নেন ২০ বছর বয়সী এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম ওয়ানডেতে একাদশে সুযোগ নিতে না পারলেও বুধবার কাক্সিক্ষত সেই সুযোগ মিলল। বাংলাদেশের ৩১৪তম ওয়ানডেতে ময়মনসিংহের এ ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটল ১১৯ নম্বর ওয়ানডে খেলোয়াড় হিসেবে। ম্যাচের আগে তাকে ওয়ানডে ক্যাপ পরিয়ে দিলেন ময়মনসিংহের আরেক ক্রিকেটারÑ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আফগান স্পিনারদের বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পণ করে যখন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফিরলেন, তরুণ মোসাদ্দেকই দলকে একটি সম্মানজনক পুঁজি এনে দিলেন। সাত নম্বরে নেমে ৪৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানের একটি দারুণ ইনিংস খেলে থাকলেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত। গত তিনটি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ব্যাট হাতে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন মোসাদ্দেক। ঘরোয়া ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনী লিমিটেডের অবস্থা গত কয়েকটি লীগেই দারুণ দুর্দশাগ্রস্ত। তবে মোসাদ্দেকের ব্যাট এই দলটিকে অনেক ভাল সাপোর্ট দিয়ে গেছে। ৩৯ লিস্ট ‘এ’ (৫০ ওভার ফরমেট) ম্যাচ খেলে ৪৬.১০ গড়ে তিনি করেছেন ১২৯১ রান। ছিল একটি শতক ও ৯টি অর্ধশতক। তবে প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে আরও দুরন্ত মোসাদ্দেক। বিশেষ করে গত বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনি দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সবার নজর কাড়েন। সবমিলিয়ে ১৮টি প্রথম শ্রেণীর (চারদিনের ম্যাচ) খেলে ১৯৮৫ রান করেছেন ৭ সেঞ্চুরি ও ৬ হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। সর্বোচ্চ ২৮২ রানের একটি ইনিংস আছে। তবে এরচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল তার ব্যাটিং গড়। প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেটে তার গড় ৭০.৮৯! এমন সাফল্যের পর আর নির্বাচকরা তাকে উপেক্ষা করতে পারেননি। এ বছর জানুয়ারিতে সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পান। টি২০ অভিষেক ঘটে তখনই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই পদার্পণটা অবশ্য সুখকর হয়নি। মাত্র ১৫ রান করতে পেরেছিলেন খুলনায় গত ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে। সেটাই তার একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গত সাড়ে দশটা মাস ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল বাংলাদেশ। শেষটা হয়েছিল ২০১৫ সালের ১১ নবেম্বর। বাংলাদেশ টানা চার সিরিজে শক্তিশালী পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে ইতিহাসের সেরা বছর কাটায়। এর পেছনে দুর্দান্ত ভূমিকা ছিল এপ্রিলে পাকদের বিরুদ্ধে তরুণ বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের অভিষেক। বল হাতে প্রতিপক্ষের ত্রাস হয়ে একাই অনেকগুলো ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে মূল নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাতি পাওয়া মুস্তাফিজ। এরপর বছরজুড়ে বাংলাদেশ দলে আর কোন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়নি ওয়ানডে দলে। এখন মুস্তাফিজ নেই কাঁধে অস্ত্রোপচার হওয়ার কারণে। এর মাঝে ১৬ টি২০ খেলা দলের ব্যাটিংয়ের অবস্থাটাও শোচনীয় হয়ে গেছে। আর মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ দিয়েই রেখেছিলেন। সবমিলিয়ে এবার আফগানদের বিরুদ্ধে তিনি ডাক পেয়ে যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রাটা অবশ্য প্রথম ওয়ানডেতে হয়নি। তবে বুধবার এক ঐতিহাসিক দিনে তিনি দলে ঠাঁই করে নিয়েছেন। এদিন জিতলেই ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ১০০তম জয় তুলে নেবে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশায় সেই অর্জন প্রথম ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের পক্ষে একেবারেই অসম্ভবের দিকে গেছে। টপঅর্ডাররা বড় রান করতে পারেননি আফগান স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে। ১৩৮ রানেই ৫ উইকেট চলে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সাজঘরে চলে গেছেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। মোসাদ্দেক নামার পরপরই ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে সাব্বির রহমানও ফিরে যান। তরুণ এ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দেয়ার মতো আর কোন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানও ছিলেন না উইকেটে। অথচ সাবলীলভাবেই আফগান বোলারদের মোকাবেলা করলেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই রান তুলে নেন আর নিজের মোকাবেলা করা দ্বিতীয় বলেই দারুণ একটি চার হাঁকান। তবে লেগস্পিনার রশিদ খানের করা পরের বলটিতেই তিনি একটি কঠিন সুযোগ দিয়েছিলেন। সে যাত্রা বেঁচে যান অসতর্ক মোহাম্মদ শাহজাদ ক্যাচটি লুফতে না পারায়। এরপর আর আটকানো যায়নি মোসাদ্দেককে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তার নমুনাটা দেখাতে শুরু করেন। ১৬৫ রানে বাংলাদেশ নবম উইকেট হারায়। এরপরই মোসাদ্দেক দুরন্ত হয়ে ওঠেন রুবেল হোসেনকে নিয়ে। শেষ জুটিতে তাকে নিয়ে গড়ে তোলেন ৪৩ রানের মূল্যবান জুটি। এর আগ পর্যন্ত ৩৫ বলে ২৩ করা মোসাদ্দেক ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নবীন উল হককে কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান। দৌলত জাদরানের করা ৪৯তম ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ১৫ রান তুলে নেন। এতে করেই বাংলাদেশের রান ২০০ ছাড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকলেন এ তরুণ। শেষ ওভারে রুবেল রানআউট হয়ে ফিরে গেছেন, মোসাদ্দেক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
×