ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজে সমতা আনল আফগানরা

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিরিজে সমতা আনল আফগানরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আফগানিস্তান যদি ২০৮ রানে বাংলাদেশকে অলআউট করে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কী এর কম রানে আফগানদের গুটিয়ে দিতে পারবে না? পারেনি বাংলাদেশ। আর তাই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে হেরেছে। সিরিজেও ১-১ সমতা এসেছে। তিন নম্বর উইকেটে খেলা হয়। যে উইকেটে ঘাস আছে। প্রচুর রান হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। টস হেরেও আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু স্কোরবোর্ডে বেশি রান যোগ করতে পারেনি। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের (৪৫*) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৪৯.২ ওভারে ২০৮ রান করতেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। বল হাতে রশিদ খান একাই ৩ উইকেট নেন। জবাবে সাকিব (৪ উইকেট) দুর্দান্ত বোলিং করলেও কাজ হয়নি। ২ বল বাকি থাকতেই ২১২ রান করে ম্যাচ জিতে নেয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে কম রানই যুক্ত হয়। তাতে করে ভয়ও থাকে। যদি বাংলাদেশ হেরে যায়। তবে জয় পাওয়ার বিশ্বাসও থাকে। বাংলাদেশ বোলাররা যে বিশ্বমানের। তা প্রমাণও হলো। অভিজ্ঞতার ঝলক এবারও মিলল। দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম ওয়ানডে জেতানো সাকিব আল হাসানকে গিয়ে বল করান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কোন উইকেট নিতে পারেননি। তবে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দুটি উইকেট শিকার করে ফেলেন। এবার রহমত শাহকে রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে ফেরান সাকিব। এর আগে ওপেনার নওরোজ মঙ্গলকেও (১০) আউট করে দেন। আফগানদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। ৭ ওভারে ২১ রান করতে পারে আফগানরা। কিন্তু যেই তাসকিন আহমেদ নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন, ওভারের শেষ তিন বলে মোহাম্মদ শাহজাদ তিনটি বাউন্ডারি হাকান। মুহূর্তেই ৩৪ রানে চলে যায় আফগানিস্তান। এরপর আফগান ব্যাটসম্যান শাহজাদ ও হাসমতুল্লাহ শহীদি যেন উইকেটে জমে যান। যেই ১৩ ওভারে ৫৯ রান হয়, এমন সময়ে সৈকতের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। প্রথম বলেই হাসমতুল্লাহকে (১৪) এলবিডব্লিউ করে দেন। ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম বলেই উইকেট নেয়া একমাত্র বোলার এখন সৈকত। প্রথম ওয়ানডেতে বড় জুটি গড়া রহমত ও হাসমতুল্লাহ’র উইকেট পতনে আফগানিস্তানের হারের লক্ষণই ধরা পড়ে যায়। এরপরও আবার বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ভুগতে পারে, সেই শঙ্কাও থাকে। শাহজাদ যে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যান। অবশেষে তাকেও আউট করে দেন সাকিব। ৬৩ রানের সময় ৩৫ রান করা শাহজাদকে সাজঘরে ফেরান। আফগান ব্যাটসম্যানরা তাতে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। আফগানদের চার উইকেট পতনের মধ্যে তিন উইকেটই শিকার করে নেন সাকিব। এখানেই যেন উইকেট পড়া থেমে যায়। অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান স্ট্যানিকজাই ও মোহাম্মদ নবী মিলে দলকে শত রানে নিয়ে যান। বাংলাদেশ বোলাররা ঝিমিয়ে পড়েন। আরেকদিকে স্ট্যানিকজাই-নবী মিলে ধীরে ধীরে স্কোরবোর্ডে রান জমা করতে থাকেন। ৩৩ ওভারে যখন পানি বিরতি হয়, তখন আফগানিস্তানের স্কোরবোর্ডে ১৩৪ রান জমা হয়ে যায়। বিরতির পর যেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন দুইজনই। চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। এর মধ্যে অর্ধশতক করে ফেলেন স্ট্যানিকজাই। অবশেষে ১৭০ রানে গিয়ে এ দুইজনের জুটি থামে। ১০৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা। এমন মুহূর্তে ত্রাতারূপে ধরা দেন যেন মাশরাফি। নবীকে (৪৯) এলবিডব্লিউ করে দেন। জিততে আফগানদের তখন ৬৫ বলে ৩৯ রান দরকার ছিল। এরপরও যেন বাংলাদেশের জয়ের আশাও জাগে। ঠিক যেমনটি প্রথম ওয়ানডেতে হয়েছিল। বড় জুটির পতনে আফগানরাও হেরে যায়। নবী আউট হওয়ার পর স্ট্যানিকজাইয়ের উইকেট পতন খুব দরকার ছিল। সেটিও হয়ে যায়। সৈকত বল করতে এসেই স্ট্যানিকজাইকে (৫৭) আউট করে দেন। ৩৩ বলে ২০ রান দরকার। এমন সময়ে সাকিব আসল কাজটি করে দেন আবার। রশিদ খানকে (৫) আউট করে দেন। সেই সঙ্গে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১০০ উইকেট নেয়াও হয়ে যায় সাকিবের। ৩০ বলে জিততে তখন ২০ রানের প্রয়োজন থাকে। হাতে থাকে ৩ উইকেট। যে কোন দলের পক্ষেই এ রান করা সম্ভব। কিন্তু অনভিজ্ঞ দল আফগানিস্তান বলেই বাংলাদেশের জয়ের ভরসা থাকে। ২৪ বলে জিততে ১৫ রানের দরকার থাকে। ২০ বলে যখন ১৩ রানের দরকার, তখন স্টাম্পিং মিস করেন মুশফিক। সৈকতের বলে নজিবুল্লাহ আউট হয়ে গেলে আফগানিস্তান ভীষণ চাপে পড়ে যেত। কিন্তু মুশফিক স্টাম্পিংই করতে পারলেন না। এমন মুহূর্তে এই রকম সুযোগ হাতছাড়া করে কেউ! তাইজুল বল করতে এসে দারুণ বোলিং করেন। দুই রান দেন মাত্র। ১২ বলে জিততে ১১ রান লাগে। এমন মুহূর্তে সৈকত ৪৯তম ওভারটি করেন। খেলায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়ে যায়। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দেন মিরওয়াইস। ম্যাচও যেন সেখানেই বের করে নেন। ৬ বলে জিততে ২ রান লাগে। তাসকিন বোলিং করতে এসে ২ বলে কোন রান দেননি। একটি ওয়াইড দিয়ে দেন। ম্যাচ টাই হয়ে যায়। ৪ বলে জিততে ১ রান লাগে। নজিবুল্লাহ জাদরানকে (২২) আউট করে দেন। ৩ বলে জিততে ১ রান লাগে। চার হাঁকিয়ে দেন নতুন ব্যাটসম্যান দাওলাত জাদরান (৪*)। দুই বল বাকি থাকতে ২১২ রান করে ২ উইকেটে জিতে যায় আফগানিস্তান। মিরওয়াইস ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে ইমরুল কায়েসকে বসিয়ে রেখে সৈকতের ওয়ানডে অভিষেক করানো হয়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ১১৯তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় সৈকতের। এ বছর যেটি আবার প্রথম। কে জানত তখন প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই নিজের জাত চিনিয়ে দেবেন সৈকত? আফগান বোলাররা শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখে। ৫০ রানের মধ্যেই তামিম ইকবাল (২০) ও সৌম্য সরকারের (২০) উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তামিম আউট হতেই ব্যাট হাতে নামেন মাহমুদুল্লাহ। সৌম্য আউট হওয়ার পর সাকিব নন; টানা ১৭ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হতে থাকা মুশফিককে ব্যাটিংয়ে নামায় টিম ম্যানেজমেন্ট। আশা, যদি সেই গত বছর নবেম্বর থেকে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে পর্যন্ত ব্যর্থ হতে থাকা মুশফিক নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতায় ফেরেন। সেই ইঙ্গিতও দেন মুশফিক। কিন্তু গত ১৭ ম্যাচে ৩০ রানের নিচেই যে মুশফিকের সব ইনিংস থাকে, এবার ৮ রান বেশি করতে পারেন। মুশফিকের আউটের আগেই নবীনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন রিয়াদ (২৫)। দুই ‘ভায়রা-ভাই’ রিয়াদ ও মুশফিক মিলে ৫০ রানের জুটি গড়েই ২২.১ ওভারে বাংলাদেশকে ১০০ রানের স্কোরে নিয়ে যান। সেই জুটিকে বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারেননি তারা। ১১১ রানে যখন রিয়াদ আউট হয়ে যান, তৃতীয় উইকেটে তখন দুইজনের জুটির রান দাঁড়ায় ৬১। রিয়াদ আউট হওয়ার ঠিক দুই ওভার পরই মুশফিকও সাজঘরে ফিরলে ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ‘মহা বিপাকে’ পড়ে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে আর ১৬ রান যোগ হতেই যখন সাকিব (১৭) আউট হন, বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নেই আঘাত আসে। আফগানিস্তানের সেরা বোলার বলতে এখন ১৯বছর বয়সী রশিদ খানকেই ধরা হচ্ছে। এ লেগব্রেক গুগলি বোলারকে নাকি পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও দুর্দান্ত বল করে যাচ্ছেন। ৩২তম ওভারের শেষ বলে সাকিব আউটের পর একটি বলও দেরি হল না। রশিদ বল হাতে নিয়েই সাব্বিরকে (৪) এলবিডব্লিউ করে দেন। ১৩৮ রানেই ৬ উইকেটের পতন ঘটে যাওয়ার পর আর কী কোন আশা থাকে? এরপরও মনে হচ্ছিল, সৈকত আছেন। চাপের মধ্যেও ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে দেন। তাকে একাদশে রাখা হয়েছেও এজন্যই। মাশরাফি (২) নেমেই আউট হয়ে যান। দুইশ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করা যাবে, সেটিই তো তখন ধোঁয়াশায় পড়ে যায়। স্পিনাররা যে একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকেন। ১৪১ রানে যখন ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়, তখন দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই শততম জয় তুলে নিতে পারবে বাংলাদেশ, সিরিজ জয়ও এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করতে পারবে, সেই সম্ভাবনাই যেন ভেস্তে যেতে থাকে। ১৬৫ রানের সময় টানা দুই বলে তাইজুল (১০) ও তাসকিনকে আউট করে দেন রশিদ। হ্যাটট্রিকের আশা জাগান। কিন্তু তা আর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যেন স্পিনারদের বলই বুঝতে পারেননি! চারজন ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ হন। এর মধ্যে তিন জনকেই এলবিডব্লিউ করেন লেগ স্পিনার রশিদ। ১৩৮ রানে গিয়ে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। এরপর থেকে ১৬৫ রানেই ২৭ রানে আরও চার উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১৮০ রানও করতে পারবে না বাংলাদেশ। সবাই যখন বলাবলি করতে থাকে, তখনই ব্যাট হাতে ঝলক দেখাতে শুরু করে দেন অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা ঘরোয়া লীগের দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান সৈকত। রুবেল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। ২০০ রানও হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২০৮ রানও হয়। এমন সময়ই এক রান নেয়ার পর দুই রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান সৈকতকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া রুবেল (১০)। দুইজন মিলে দলের বিপদের সময়ে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। সৈকত বাউন্ডারি হাকাতে থাকেন। আরেকপ্রান্ত আগলে রাখেন রুবেল। সৈকত শেষপর্যন্ত অপরাজিতই থাকেন। ৪৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪৫ রানও করেন। তার এ ব্যাটিংয়েই দুই শ’ রানের বেশি করতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারতেই হলো বাংলাদেশকে।
×