ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও নিষ্পত্তি হয়নি ১৮ মামলা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এখনও নিষ্পত্তি হয়নি ১৮ মামলা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রামু বৌদ্ধ জনপদে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর বৌদ্ধ বিহার ও সংখ্যালঘু বসতিতে হামলা ভাংচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ ঘটনার বর্ষ অতিক্রান্তের দিন আজ। যার ফেসবুকে কোরান অবমাননার ছবি ট্যাগ করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল, দীর্ঘ চার বছরেও সেই উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মেলেনি। ২০১২ সালের এ দিনে রাত ১২টায় রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠী (আরএসও), জামায়াত-বিএনপির কতিপয় চিহ্নিত নেতাকর্মীসহ মৌলবাদীরা রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহারে এক যোগে হামলে পড়ে। ভাংচুর-লুট ও গান পাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগে মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছিল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজার বছরের পুরনো বহু নিদর্শন। যার ফেসবুকে কোরান অবমাননার ছবি ট্যাগ করা হয়েছিল, চার বছর ধরে উত্তম বড়ুয়ার সন্ধান না পেয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে তার বাবা সুদত্ত বড়ুয়া, মা মাদু বড়ুয়া, শিশু সন্তান আদিত্য বড়ুয়া ও স্ত্রী রিতা বড়ুয়া। সেই বিভিষিকাময় অভিশপ্ত দিনটিকে স্মরণকল্পে মানবতা ও শান্তি কামনায় রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ দিনব্যাপী বহু কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ সহিংস ঘটনায় সহানুভূতি জানাতে ওই বছরের ৮ অক্টোবর ছুটে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনা প্রধান, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ উর্ধতন কর্মকর্তা। উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুকে পবিত্র কোরান অবমাননার ছবি যুক্ত করে ধর্মীয় উত্তেজনায় বেপরোয়া করে তোলা হয়েছিল। তাদের পরোক্ষভাবে উস্কে দিয়ে জামায়াতীরা ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বৌদ্ধ বিহার-পল্লীতে সহিংস হামলা চালায়। মুহূূর্তে ধ্বংস হয়ে যায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অতি মূল্যবান বুদ্ধের পবিত্র অষ্টধাতু ও তাল পাতায় লিখা হাজার বছরের প্রাচীন পবিত্র-ত্রিপিটক গ্রন্থ। ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ৩০ বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া আরও ৬ বৌদ্ধ বিহার ও অর্ধশত বসতঘরে ভাংচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন উখিয়া, টেকনাফের বৌদ্ধ পল্লীতেও অনুরূপ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় উগ্রপন্থী মৌলবাদীগোষ্ঠী। বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন মতে, দেশে অরাজকতা সৃষ্টি ও দেশ-বিদেশে সংখ্যালঘুদের ক্ষেপিয়ে তুলতে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা জঙ্গী ও জামায়াতীরা রম্যভূমি খ্যাত রামু বৌদ্ধ বিহার ও বড়ুয়াপল্লীতে নারকীয় তা-ব চালায়। পরবর্তীতে সরকারীভাবে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে পুননির্মাণ করে দেয়া হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। পুননির্মিত ওইসব বৌদ্ধ বিহার পেয়ে জীবনের পরম ও চরম পাওয়া বলে মনে করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়। রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জীবনে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ভরা কালো রাতের সূচনা হয়েছিল, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও আন্তরিক পদক্ষেপের ফলে অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক বৌদ্ধ নেতা। দীর্ঘস্থায়ী উপসনালয় (বিহার) পেয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ওই সময় পুলিশ সহিংস ঘটনার দায়ে ১৯ মামলা দায়ের করে। যথা সময়ে চার্জশীটও দাখিল করে পুলিশ। পিপি এ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ জানান, রামু রাজারকুলের সুধাংশু বড়ুয়া (বাদী) একটি মামলার আপোসনামা দিয়েছেন। বিচারাধীন মামলার মধ্যে আসামিদের হুমকির ভয়ে একাধিক সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছে না। এতে আদালত ৫ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে পুনতদন্তের জন্য প্রেরণ করেছে। বিচারাধীন ১৮ মামলার মধ্যে একটিও নিস্পত্তি হয়নি।
×