নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বরগুনা জেলার অবস্থান। এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্র্যোগ (বিশেষ করে বন্যা) মোকাবেলা করে বেঁচে আছে। বন্যাপরবর্তী সময় এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে খোলা আকাশের নিচে। প্রকৃতির সঙ্গে অঘোষিত লড়াই করে বেঁচে আছে এ জেলার মানুষ। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের আইলাসহ পরবর্তীতে নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে এখানকার প্রায় দেড় লাখ পরিবার।
এ জেলায় গৃহহীন পরিবারের জন্য সরকারী ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় ২৮টি আবাসন ১৮২টি ব্যারাক হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পুনর্বাসন করা হয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ৩৭টি গৃহহীন পরিবারকে। কিন্তু এ আবাসন ও ব্যারাক হাউসগুলোর বেশির ভাগই নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধের বাইরে নদীর পাড়ে চর ভরাট করে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অসহায় পরিবারগুলোকে আবাসনের নামে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক মরণ ফাঁদে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ আবাসনে বসবাসকারী অসহায় পরিবারগুলো।
বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস দূরের কথা সামান্য জোয়ারের পানিতে অধিকাংশ আবাসন ও ব্যারাক হাউস প্লাবিত হওয়ায় বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বদনীখালী বাজার সংলগ্ন ৬০ পরিবারের আবাসনের ১৫টি ঘর ইতোমধ্যে বিষখালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, বেড়িবাঁধের বাইরে বিষখালী নদীর চর ভরাট করে এ ৬০ পরিবারের আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই সামান্য জোয়ারের পানিতে এ আবাসনের ঘরগুলো নিমজ্জিত থাকে। এ ব্যাপারে আবাসনে বসবাসকারী জালাল মৃধা বলেন, দেখতেই পাচ্ছেন, আবাসনের অনেক ঘর নদীর মধ্যে খালি খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যে কয়টি পরিবার এখানে বসবাস করছি অনেক ঝড়ঝাপটা মোকাবেলা করে কোনমতে বেঁচে আছি। সামান্য জোয়ারের পানিতে আবাসনের ঘরগুলোর মেঝে যখন এক দেড় ফুট পানিতে ডুবে যায় তখন খাওয়া-দাওয়া কাজকর্ম ফেলে রেখে ঘর ছাড়তে বাধ্য হই। এ অভ্যাস আমাদের নিত্যদিনের। বর্ষা মৌসুমে ঝড়ের আশঙ্কা সাধারণত একটু বেশি থাকে। তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে এখানে বসবাস করছি। তবে গরিবের জানমালের জন্য কারও কোন মাথা ব্যথা নেই- এটাই সত্য।
বুড়ামজুমদার ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব শুক্কুর বলেন, আশ্রয়ণের অবস্থা খুবই শঙ্কটাপন্ন। সিডরের মতো শক্তিশালী বন্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে এখানে বসবাসকারী পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে এ পরিবারগুলোকে স্থানান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মাহমুদুর রহমান জানান, এ আবাসনের দুরবস্থার কথা মাসিক রাজস্ব সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সাগরপাড়ের আশ্রয়হীন এ অসহায় পরিবারগুলো যাতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্ত মনে বাঁচতে পারে সব সময় এ আশায় বুক বেঁধে আছে তারা। যেসব আবাসন ব্যারাক হাউস নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে, নতুন কোন বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের আগেই আবাসনের বাইরে থেকে বেড়িবাঁধ অথবা অন্য কোন নিরাপদ স্থানে তাদের স্থানান্তর করা হোকÑ এমনটাই প্রত্যাশা আশ্রয়হীন এই দুঃখী পরিবারগুলোর।