ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তুষার জেভিয়ার কস্তা

ইন্দ্রজালের ঘেরাটোপ

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইন্দ্রজালের ঘেরাটোপ

সূর্যের আলো কিংবা পাখির ডাকে যেখানে ঘুম থেকে জেগে ওঠার কথা সেখানে মোবাইলে এ্যালার্ম দিয়ে রাখি। অনিশ্চয়তার মধ্যেও মোবাইল আমাদের নিশ্চয়তা দেয় ঘুম থেকে জেগে ওঠার। চোখ ঘষতে ঘষতে বালিশের তলায় কিংবা টেবিল হাতড়ে মোবাইল খুঁজি। পৃথিবীর আলো দেখার আগে আমরা মোবাইলের আলো দেখি। মোবাইল মানুষের জীবনের সঙ্গে এমন নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে আছে যেন মোবাইল ছাড়া একদ- বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। মোবাইল ব্যবহারের বিপক্ষে আমি কথা বলছি না। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো মোবাইলও নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল আমাদের যা দিয়েছে তা অন্য কোন বস্তু দিতে পারত কিনা তা নিয়ে বাকবিত-ায় না গিয়ে মোবাইলের অনেক সুবিধা উপলব্ধি করি। মোবাইলের মাধ্যমে আমরা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পরিচিত-অপরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তথ্যবিনিময় করি, ভাবের আদান-প্রদান করি। এখন আর আগের মতো এনালগ ক্যামেরা চোখে পড়ে না, ১৬০০ মডেলের মোবাইল ফোনও বাজারে নেই। অতি দ্রুত দিনগুলো বদলাচ্ছে। সময় এসেছে সেগুলো জাদুঘর কিংবা ব্যক্তিগত আর্কাইভে রেখে দেয়ার। মোবাইলের বদান্যতায় মানুষ এখন ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, হোয়াটস্ অ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে আবেগ, অনুভূতি ও ইচ্ছা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করছে। দামী এবং লোভনীয় মোবাইল ফোন যেন মানুষকে সামাজিক মর্যাদা দিচ্ছে। ভার্চুয়াল জগতে ৬০ বছরের বয়স্ক পুরুষের সঙ্গে ১৫ বছরের কিশোরী মেয়ের বন্ধুত্ব হচ্ছে আবার ২০ বছরের যুবক ৪০ বছরের বিবাহিত নারীকে বিয়ে করছে। সবই সহজ এই তথ্যপ্রযুক্তির বদান্যতায়। ভার্চুয়াল পৃথিবীটা মেকআপের নেশায় মেতেছে। নিজে যা না তার থেকেও বেশি বলে জাহির করা ও প্রচার করার নেশা। এ জগৎ এতটাই আবেদনময়ী ও লোভনীয় আমরা যেন এর ইন্দ্রজালে বাঁধা পড়ে আছি। অদ্ভুত একটা শিহরণে মোহাবিষ্ট হয়ে আছি। মাত্রাতিরিক্ত মাদক বা নেশার ফলে যেমন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তেমনি মোবাইল আমাদের জীবন থেকে অনেক সৌন্দর্য, নৈতিক মূল্যবোধ, সুনাম ও সক্ষমতাকে কেড়ে নিয়েছে। বাস্তবিক অর্থে যার স্বাদ, রস, গন্ধ নেই তারই পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়াই। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছি অজানার পথে। ঘরে বসে ভাবি গোটা পৃথিবী আমার হাতের মুঠোয়। আমার যা খুশি আমি তাই করতে পারি। সকলের মধ্যে থেকেও আমি একলা হওয়ার নেশায় মেতেছি। কয়েকজন বন্ধু মিলে যখন গাছতলা কিংবা খোলা মাঠে আড্ডা জমাই তখন আমাদের হাত নাড়াচড়া করে স্পর্শকাতর মোবাইল নিয়ে। শুধু হাত এবং চোখের ব্যায়াম করেই আমরা খুশি। পৃথিবীর উষ্ণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। প্রিয় কেউ চিঠি দিলে অনেক যতেœ তা আগলে রাখি, লুকিয়ে লুকিয়ে বারবার পড়ি, একটা স্বাদ, হাতের স্পর্শ, শরীরের গন্ধ পাওয়া যায়। ফ্রি টকটাইমে অযাচিত শব্দ আকাশে-বাতাসে না উড়িয়ে আসুন দু-চার লাইন পৃথিবীর জন্য লিখি। বনানী, ঢাকা থেকে
×