ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাসিনা সাঈদ

মোবাইল মাদকতায় বিপন্ন সময়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মোবাইল মাদকতায় বিপন্ন সময়

ব্যবহারযোগ্য কোন বস্তু যখন ব্যবহার করা হয়, তখন এর উপকারিতা-অপকারিতা দুটোই থাকে। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুর ব্যবহার হচ্ছে এক ধরনের মাদকতা বা নেশা। যা সবসময়ই ক্ষতিকর। বর্তমানে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ মোবাইল ফোনের ব্যবহার থেকেই নেয়া যায়। কাজেই নিত্যব্যবহার্য যে জিনিস হাতের নাগালের কাছে না থাকলে নয় অর্থাৎ মোবাইলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। ইংরেজী ‘গঙঠঊ’ শব্দ থেকে মোবাইল শব্দটির উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গড়াব শব্দটির বাংলা অর্থ সরানো, নাড়ানো, চলমান ইত্যাদি। কাজেই চলমান অবস্থায় তারহীন যে ফোন ব্যবহার করা হয়, তাকেই মোবাইল ফোন বলা হয়। ডাঃ মার্টিন কুপার (মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত) এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবক হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। তারা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রায় ১ কেজি (২.২ পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন। কাজেই ক্ষুদে এ যন্ত্র এখন সবার কাছে কতখানি প্রিয় তা বলাইবাহুল্য। এটি যেন ক্রমশ জাদুর বাক্সে পরিণত হয়েছে! নেশার মতোই মানুষ দিনে দিনে এর প্রতি আসক্ত হচ্ছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন বা স্মার্ট ফোনের কোন বিকল্প নেই। কি নেই এর ভেতর? কথা বলা, গান শোনা, চ্যাট করা, বিভিন্ন গেম-এ্যাপস ডাউনলোড করা, ব্যবসায়িক অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার ছাড়াও আছে কম্পিউটারের কিছু নিত্যনতুন ব্যবহার। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়, মোবাইল ইন্টারনেট, ফেসবুকিং, গুগল এ্যাপস, সেলফি ইত্যাদি। এর ক্ষতিকর দিকও কম নয়। অর্থ অপচয়, চাঁদাবাজির জন্য হুমকি, পর্নোছবি ও ভিডিও ব্যবহার এবং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। সবচেয়ে যেটা ক্ষতিকারক হচ্ছেÑ রাত জেগে থাকা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটানো। চক্ষু মস্তিষ্কসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ইত্যাদি। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মোবাইল মাদকতা হচ্ছে সেলফি তোলা বা সেলফি মেনিয়া। পথে-ঘাটে, লঞ্চ টার্মিনালে, মঞ্চ বা খেলার মাঠে, উঁচু পাহাড় বা সমুদ্র সৈকতের ধারে এমনকি স্কুল-কলেজ বা অফিস-আদালতেও মানুষ তুলতে চাইছে তার সবচেয়ে সেরা ছবি এই সেলফি দিয়ে। অক্সফোর্ড এ্যাড হ্যান্সড লার্নাস ডিকশনারিতে সেলফির অর্থ বলা হয়েছে, সেলফি হলো একটি আলোকচিত্র। যা নিজের তোলা, নিজের প্রতিকৃতি, সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামে ধারণকৃত এবং যে কোন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আপলোড (তুলে দেয়া) করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। উইকিপিডিয়াতে সেলফির বাংলা করা হয়েছে ‘নিজস্বী’। সেলফি শব্দটি এসেছে ইংরেজী সেলফিস শব্দ থেকে। সেলফি অর্থ আত্ম প্রকৃতি বা দলীয় আলোকচিত্র। এছাড়া উইকিপিডিয়াতে এই সেলফি বা নিজস্বীর আরও কিছু সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই আত্মপ্রতিকৃতি, যা সাধারণত হাতে ধরা ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করে নেয়া হয়। সেলফি প্রায়ই ফেসবুক, গুগল, ইনস্ট্রিগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা হয়ে থাকে। ছেলে বুড়ো সবাই এখন এই সেলফি শেয়ারের মজা নিয়ে থাকে। ১৮৩৯ সালে রবার্ট কর্নিলিয়াস নামক একজন মার্কিন অগ্রণী চিত্রগ্রাহক তার নিজের একটি আত্মপ্রতিকৃতি ক্যামেরায় ধারণ করেন। এটি নাকি প্রথম কোন মানুষের আত্মপ্রতিকৃতি ছিল। বাজারে এখন কেউ মোবাইল কিনতে গেলে বিশেষ করে তরুণরা আগে দেখে নেয় কোন সেটের সেলফি রেজুলেশন কতটা ভাল। অনেকে আবার ফেসবুক এ্যাকাউন্টে সেলফি আপলোড না করলে তাকে ‘খেত’ বলে থাকে। তাই কাউকে কতখানি সুন্দর বা স্মার্ট লাগছে কিনা, নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার জন্যই ইচ্ছেমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে নিজের সেরা সেলফিটি। এছাড়া পোস্টগুলোতে কতটা লাইক, শেয়ার, কমেন্টস পড়ল তা দেখতেই যেন সেলফি তোলার হিড়িক। সবাই একত্রিত হয়ে সেলফি স্টিকার দিয়েও তুলে নিচ্ছে গ্রুপ সেলফি। এটা যেন অনেকটাই পাগলামি। এই পাগলামি করতে গিয়ে কত জীবন বিপন্ন হচ্ছে! এমনকি পাহাড়ে বা গভীর খাদে পড়ে গিয়ে জীবন দিতে ভুলে যাচ্ছেন না অনেকেই। কাজেই সেলফির উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাও যে বেশি তা বিভিন্ন সংবাদ থেকে পাওয়া যায়। গবেষকরা দাবি করছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলার অভ্যাসের সঙ্গে মানসিক ব্যাধির সম্পর্ক থাকতে পারে। পিসিবি লেন, ঢাকা থেকে
×