ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় নাট্যোৎসবের পঞ্চম দিনে তিন নাটক মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জাতীয় নাট্যোৎসবের পঞ্চম দিনে তিন নাটক মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার তিনটি মঞ্চে চলছে ‘জাতীয় নাট্যোৎসব ২০১৬।’ ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ শ্লোগানে ১৮ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বুধবার ছিল এ উৎসবের পঞ্চম দিন। এদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় সুবচন নাট্য সংসদের নাটক ‘প্রণয় যমুনা’, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে লোকনাট্যদলের (সিদ্ধেশ্বরী) ‘সোনাই মাধব’ এবং মহিলা সমিতি মঞ্চে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাটক ‘ঠিকানা’। ‘প্রণয় যমুনা’ নাটকটি সুবচন নাট্য সংসদের ৩৭তম প্রযোজনা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রাধাকৃষ্ণ’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি লিখেছেন আসাদুল ইসলাম এবং নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকের শুরুটা ছিল গীতল। দুই শিশুশিল্পী রাধা-কৃষ্ণের ছোটবেলার কীর্তিকর্ম গানে গানে বয়ান করছে নৃত্যের সঙ্গে। শুরুতে এক নির্মোহ ভাললাগা আচ্ছন্ন করে দর্শকদের। রাধা বিহনে কৃষ্ণের কাতরতা, অন্যদিকে রাধার ঘর, পতি, সংসার ও সামাজিক শৃঙ্খলের বেড়া। প্রণয় যমুনায় দু’জনের ক্ষণিক দেখা যে আনন্দ নিয়ে আসে, পরক্ষণেই তা ভেসে যায় বিরহের পরম সায়রে। কৃষ্ণসখা ব্রত নেয় কংস নিধনের। অন্যদিকে বিরহী রাধা এলোচুলে যমুনার তীরে তারই প্রতীক্ষায় দ-ায়মান। কৃষ্ণ তার কর্তব্যে অবিচল। মোহনবাঁশি রেখে সে যাত্রা করে বৃন্দাবনের পথে। শূন্যতার অসীমে রাধা খুঁজে পায় পরমপ্রিয়রে। নাটকে কৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুল হক, রাধা চরিত্রে সোনিয়া হাসান। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহাম্মেদ গিয়াস, মোহাম্মদ আনসার আলী, মেহেদী হাসান, হোসেন ইমরান, তানভীর দীপু, ইমতিয়াজ শাওন, শাহ সালাউদ্দিন, আলামিন, মারুফ, সবুজ, আরিফ মহউদ্দিন, অনন্যা সোহান, যোয়া আযিম প্রমুখ। নাটকের কোরিওগ্রাফি করেছেন নৃত্যশিল্পী অমিত চৌধুরী। লোকনাট্যদল প্রযোজনা মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলি যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। নাটকে ব্যবহৃত গানের সুরারোপ করেছেন দীনেন্দ্র চৌধুরী ও লিয়াকত আলী লাকী। পরিকল্পনা, সঙ্গীত পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন লোক নাট্যদলের অধিকর্তা লিয়াকত আলী লাকী। নাটকে ফুটে উঠেছে সোনাই এবং মাধবের প্রেম এবং চির বিচ্ছেদের কাহিনী, আর এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে মানব সমাজের বিভিন্ন দিক। বাবা ও ভাই হারা, মায়ের একমাত্র সন্তান সোনাই। রূপে গুণে অতুলনীয় সোনাইকে ভাল পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য তার মা তাকে রেখে আসে তার মামার কাছে। ঘটকের আনা কোন পাত্রই মামা-মামির পছন্দ হয় না। এরই মধ্যে সোনাইয়ের সঙ্গে মাধবের দেখা হয়, পরিচয় এবং প্রেম হয়। এ গ্রামের ভাবনা নামে এক অত্যাচারী দেওয়ান বাঘরার মাধ্যমে জানতে পারে সোনাইয়ের কথা। মামা প্রথমে সোনাইকে ভাবনার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয় না পরে মৃত্যুর ভয় দেখালে সে বলে দেয় নদীতে জল আনতে গেলে যেন সোনাইকে সে বজরায় তুলে নেয়। ভাবনা তাই করে। পরে মাধব সেখান থেকে সোনাইকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে আসে, বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু দেওয়ান মাধবের বাবাকে ধরে নিয়ে যায়, তাই বাবাকে উদ্ধার করার জন্য মাধব যায় দেওয়ানের কাছে। সোনাই এক বছর একা থাকে ঘরে। পরে সোনাই যায় মাধবকে ছাড়াতে। দেওয়ান মাধবকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে এসে দেখে সোনাই বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকসানা আক্তার রূপসা, জাহিদুল কবির লিটন, লিয়াকত আলী লাকী, রহিমা খাতুন নীলা, উম্মে মরিয়ম রুমা, কিশোয়ার জাহান, সোহানুর রহমান সোহান, আজমেরী এলাহী নীতি, আব্দুল্লাহেল রাফি তালুকদার, শায়লা আহমেদ ও এম এ মোমিন। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় ‘ঠিকানা’ নাটকটি রচনা করেছেন সন্তোষ চক্রবর্তী এবং নির্দেশনা দিয়েছেন খোরশেদুল আলম। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় সমাজটাকে বদলে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথ খুঁজতে নামে হাছান আর সুনন্দা। দুজনেই ছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আর বাম রাজনীতির নিবেদিত কর্মী। হাছান মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সুনন্দা সংসার, সন্তান এবং স্বামী এ তিনের বাইরে নিজস্ব পৃথিবীটা সমৃদ্ধ ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা, সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা আর সৃষ্টিশীল পরিশীলিত ভাবনা নিয়ে। কিন্তু সে একদিন আবিষ্কার করল চারপাশের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত প্রগতি বিরুদ্ধে মুখোশধারী মানুষগুলোর মতো তার স্বামীও ভীষণভাবে বদলে যাচ্ছে। হাছান নারীকে অন্য পুরুষের মতো সাধারণ গৃহবধূ আর সংসার ভারাক্রান্ত অবলার চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে চায় না। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইনতিশা তাশদীদ তাহা, রওশন জান্নাত রুশনী, মোহাম্মদ উলাহ মাহমুদ, শাহিনূর সারোয়ার, নাজমুন নাহার নূরী, আব্দুল হাদী।
×