ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষী সামসুদ্দিনের জবানবন্দী

আমীর আলীর নেতৃত্বে পাক আর্মি ও রাজাকাররা শত ব্যক্তিকে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আমীর আলীর নেতৃত্বে পাক আর্মি ও রাজাকাররা শত ব্যক্তিকে হত্যা করে ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামের মোঃ আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলীর নেতৃত্বে ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মোঃ সামসুদ্দিন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেছেন, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের গ্রাম শ্রীপুরে শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে আমার দাদা ও চাচাও রয়েছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। অসমাপ্ত জেরার জন্য ২ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় সাক্ষীকে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম ও প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা। আসামি পক্ষে ছিলেন, এ্যাডভোকেট মিজানুল রহমান, এ্যাডভোকেট গাজী তামিম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ সামসুদ্দিন। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৪ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-শ্রীপুর, থানা-সুধারাম, জেলা-নোয়াখালী। একাত্তরে সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। আমি নোয়াখালী সদর থানার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। বর্তমানে আমি একটি বিদেশী সংস্থায় খ-কালীন চাকরি করি। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরের ১৫ জুন আমি বাড়িতেই ছিলাম। আনুমানিক দুইটা আড়াইটার দিকে আমি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাদের বাড়ির নিকটে আহমেদীয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে যাই। ঐ সময় আমি অনেকগুলো গাড়ির শব্দ পাই। আমি নোয়াখালীর যাওয়ার প্রধান রাস্তায় গিয়ে ১২/১৪টি গাড়ি দেখতে পাই। একাত্তরের ২২ এপ্রিল আসামি জয়নাল আবেদীন ও ইউসুফের নেতৃত্বে ৪/৫ জন রাজাকার ও ৭/৮ পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের শ্রীপুর গ্রামের পূর্ব দিকে আহমেদীয়া স্কুলের মাঠে প্রবেশ করে। এ সময় আসামিদের দেখানো মতে পাকিস্তান আর্মিরা তোতা মিয়া ও ইয়াসিনকে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে রাজাকারদের দেখানো মতে পাকিস্তানী সেনারা সুফী আব্দুর রশিদের পিতা আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে গুলি করে হত্যা করে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, একাত্তরের ১৫ জুন রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের শ্রীপুর গ্রাম ও সোনাপুর গ্রাম আক্রমণ করে শতাধিক ব্যাক্তিকে হত্যা করে। গ্রামে হত্যাকা- চালিয়ে রাজাকার ও পাকিস্তানী সেনারা চলে যাবার পর আমি ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসি। আমাদের গ্রামের আরও অনেকে বের হয়ে আসে। তখন আমরা আমাদের গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আমাদের গ্রামের আনুমানিক ৪০টি লাশ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এবং অনেক বাড়িঘর আগুনে পুড়ছিল দেখতে পাই। ঐ ৪০ লাশের মধ্যে আমার দাদা আব্দুল কাদের, চাচা আবু তাহের, আমাদের গ্রামের তোতা মিয়া, ইয়াছিন, আলী করিম, আলী হায়দার, আলী হোসেন, আক্কাস আলী, আবুল কাশেম, মোজাম্মেল হক, অদুদ মিয়া, সাখাওয়াত উল্লা, নুর মিয়া, আব্দুর রব (পিতা আব্দুর রশিদ), আব্দুর রব-(পিতা অজ্ঞাতদের) লাশও ছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর আমাদের শ্রীপুর গ্রামে নিহত ৪০ জনের স্মরণে আহমেদীয়া স্কুলের গেটে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। সেখানে নামফলকে শহীদের নাম রয়েছে।
×