আজাদ সুলায়মান ॥ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অস্ত্রসহ আটক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুই জার্মান নাগরিক আনিসুল ইসলাম তালুকাদার ও মোঃ মনির বেন আলিকে তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বুধবার ওই দুজনকে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম নূর নাহার ইয়াসমিন তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের আবেদনে এই দুজনকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুনানির সময় দুই আসামির পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াননি। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক আনিসুল ইসলাম ও মনির বেন আলীর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত নয়টি পিস্তল আসল নাকি নকল তা বুধবারও নিশ্চিত হতে পারেনি কাস্টমস কিংবা পুলিশ। সিআইডির ব্যালিস্টিক টিমের কোন সদস্য বুধবার বিমানবন্দরে যাননি। ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করতে আরও প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে-আদালতের আদেশ ছাড়া ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করান যাবে না। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলে তারপর পুলিশ আদালতের অনুমতির আবেদন জানাবে।
কাস্টমস যুগ্ম কমিশনার এসএম সোহেল রহমান জানিয়েছেন- আটক দুই নাগরিক জার্মানি থেকে ঢাকায় এ সব অস্ত্র নিয়ে আসে। এতে মনে হচ্ছে উড়োজাহাজে নিশ্চয় তাদের কোন বৈধতা হয়ত ছিল। যদিও এগুলো নিয়ে ঢাকাতেই দু’রকমের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কাস্টমস সূত্র জানায়- জার্মানি থেকে এগুলোকে নাটক সিনেমার শূটিং করার কাজে ব্যবহার করার ঘোষণা দিয়েই আনা হয়। একেকটি পিস্তল ১২০ ইউরো দিয়ে কেনা হয় যা বাংলাদেশী সাড়ে দশ হাজার টাকা দাম। ঢাকার বায়তুল মোকাররমের ইমরান আর্মস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এগুলো প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করার কথা ছিল। ওই দোকানের মালিক গত বছর জাার্মানিতে অস্ত্র মেলায় পরিদর্শনের সময় মনির বেন আলী ও আনিস তালুকদারের স্ঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানেই এ অস্ত্রের অর্ডার দেন ওই আর্মস ব্যবসায়ী।
এদিকে বুধবারও এ সব পিস্তলের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে র্যাব ও আর্মড পুলিশ দুরকম বক্তব্য দিয়েছে। র্যাব বলছে, এ সব পিস্তল খেলনা হলেও এর ব্যারেল পরিবর্তন করে আসল পিস্তলের মতোই কাজে লাগানো যাবে। সে অর্থে এটা বিপজ্জনক। অন্যদিকে আর্মড পুলিশ বলছে, এগুলো দিয়ে মানুষ মারার কোন উপায় নেই্। নাটক সিনেমায় শূটিং করার কাজে বা প্র্যাকটিস করার কাজেই এগুলো ব্যবহ্রত হয়।
তাদের বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা ও অস্ত্র আইনে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তারা দাবি করছেন-এগুলো খেলনা পিস্তলের ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় মনির বেন আলী ও আনিস তালুকদার শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক করা হয়। সে সময় তারা দুজনই দাবি করেন-খেলনা পিস্তল ঘোষণা দিয়ে একটি কার্টনে করে অস্ত্রগুলো আনা হয়। রাতে তাদের বিরুদ্বে বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতারকৃত যাত্রী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জার্মানির নাগরিক। দুজনেরই বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তারা জার্মানিতে বিত্তবান ব্যবসায়ী। বিগত ত্রিশ বছর ধরে তারা জার্মানিতেই থাকছেন। মাঝে মাঝে দেশে আসেন। মঙ্গলবার নয়টি পিস্তল ও ১২ বোতল মদসহ ধরা পড়েন কাস্টমস অভিযানে।