ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে যৌথভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ওপর জোর দিলেন বক্তারা

এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এশিয়ার অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও ভারতই হতে পারে এশিয়া মহাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। তবে উভয় দেশের অগ্রযাত্রায় যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যৌথভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া উভয় দেশকেই নদীর অববাহিকা উন্নয়নে জোর দিতে হবে। বুধবার ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক টেকসই উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে ইংরেজী পত্রিকা এশিয়ান এজ। এতে সভাপতিত্ব করেন এশিয়ান এজ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ড. জেসমিন চৌধুরী। সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) সদস্য ড. বিবেক দেবরয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা, সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি। সেমিনারের প্রধান অতিথি ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) সদস্য ড. বিবেক দেবরয় বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি সমস্যা বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে দুই দেশের সমুদ্রসীমানা ও স্থলসীমানা অন্যতম। এ দুটি সমস্যার ’৭০ দশকেই সমাধান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন কারণে হয়নি। এখন দেরিতে হলেও এ দুটি সমস্যার সমাধান হয়েছে। সে কারণে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এখন আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সন্ত্রাস প্রতিরোধে জোর দিয়ে আসছে। অন্য কোন দেশ থেকে ভারতে সন্ত্রাস যেন রফতানি না হয়, সেটাই এখন অন্যতম লক্ষ্য। তাই এ বিষয়টি আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। ভারতীয় এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, কোন কোন দেশের অগ্রাধিকার এক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সমস্যার সমাধানও দ্রুত করা সম্ভব। আমি মনে করি বাংলাদেশ ও ভারতের অগ্রাধিকার একই ধরনের। যেমন দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা সমান চ্যালেঞ্জ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের অগ্রযাত্রা আমরা একই সঙ্গে চাই। এ অগ্রযাত্রায় যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে, সেটাও আমরা যৌথভাবে মোকাবেলা করতে চাই। আগামীতে বাংলাদেশ ও ভারতই হতে পারে এশিয়া মহাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু। সে লক্ষ্যে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। সেদেশ থেকে আমরা বিদ্যুত আমদানি করছি। তবে এটা ছিল এক সময় অভাবনীয়। তারপরও এটা সম্ভব হয়েছে। উভয় দেশের সামনেই এখন ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বিস্তৃত হচ্ছে। ভারতের প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। আর আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বাড়াতে বিবিআইএন চুক্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী ভারত। সে কারণে এখানে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানিও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রিলায়েন্স ও আদানি গ্রুপ। সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা এখন বিস্তৃত হচ্ছে। তবে আমি মনে করি দুটি বিষয়ে আমাদের জোর দেয়া প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্য দিয়ে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীর অববাহিকা উন্নয়নে দুই দেশকেই জোর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন গড়ে তুলতে পারলে আঞ্চলিক ভেদাভেদ দূর হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। বাণিজ্য ভারসাম্য আনার জন্য উভয় দেশের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা কাজ করছে। এ মানসিকতা বদলাতে হবে। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন- এশিয়ান এজ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, উপদেষ্টা সম্পাদক মেজর জেনারেল (অব) এম শামীম চৌধুরী প্রমুখ।
×