ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি কমিশনে উপজাতি সদস্যদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি হারানোর ভয়ে বাঙালীরা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি হারানোর ভয়ে বাঙালীরা

ফিরোজ মান্না ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনীর পর পাহাড়ী বাঙালীরা ভূমি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তারা এই আইনের সংশোধনী বাতিলের জন্য প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাহাড়ী বাঙালীরা বেশ কয়েক দফা হরতাল সমাবেশ করেছেন। আইনের সংশোধনীতে পাহাড়ী উপজাতিদের অনেক সুবিধা দেয়া হয়েছে। উপজাতিদের সুবিধা কাজে লাগাতে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে বলে পাহাড়ী বাঙালীরা অভিযোগ তুলেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের রিপোর্টে বলেছে, সংশোধনীতে আইনে ভূমির ওপরে অর্জিত অধিকার থেকে পাহাড়ী বাঙালীরা বঞ্চিত হবে। তাদের ভূমির দলিল বাতিল করার চেষ্টা চলছে। এর বাইরে পাহাড়ী উপজাতি প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো সরকারী অফিস আদালতের জমির ওপরও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্য জেলাগুলোতে সেনানিবাস, ডিসি অফিসসহ সরকারের সব দফতরই মূলত সরকারের নামে রেকর্ডকৃত। এখন উপজাতি নেতারা এসব ভূমি কমিশনের আওতাভুক্ত করেছে। এতে ভবিষ্যতে ওই সব এলাকায় সেনানিবাসের ভূমিসংক্রান্ত আইনী জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ধারাটি সংশোধনের কারণে জলেভাসা জমি বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদে জেগে উঠা জমিসহ অন্যান্য জমির ওপর এককভাবে উপজাতিদের একতরফা অধিকার তৈরি হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ৬টি সেনানিবাস স্থাপন বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব ভূমি বাঙালীরা বন্দোবস্ত পেয়ে থাকলেও নতুন আইনে তাদের ওইসব জমি ছেড়ে দিতে হবে। বন্দোবস্ত, লিজ, কবুলিয়ত নামে যেসব ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এসব জমি খাস জমি। যার মালিক সরকার। এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ করা বেআইনী। এছাড়া পার্বত্য এলাকার শতকরা ৩০ ভাগ জমি রিজার্ভ ফরেস্ট, সরকারী শিল্প কারখানা, সেনানিবাস, বিজিবি, পুলিশ ব্যারাক, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ভূমি অফিসসহ সরকারের সব দফতরই রয়েছে। এসব দফতরগুলোকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনীর পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হয়নি। আগের আইনে কমিশনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতির ভিত্তিতে গ্রহণ এবং তদ্রƒপভাবে সম্ভব না হলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু নতুন আইনে চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হবে। এর ফলে উপজাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা কমিশনে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ফলে পাহাড়ী বাঙালীরা এখন নিজেদের ভূমি হারানোর ভয়ে প্রতিনিয়ত কোন না কোন কর্মসূচী পালন করছে। এ কারণে পাহাড়ী বাঙালীদের সঙ্গে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর বিরোধ এখন চরমে উঠেছে। দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। গত কয়েক মাসে একশ’র বেশি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পাহাড়ী বাঙালী ও উপজাতিরা কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী দেড়শ’র বেশি মামলা হয়েছে। পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ পাস হওয়ার পর তিন পার্বত্য জেলা অশান্ত হয়ে উঠেছে। ৫টি বাঙালী সংগঠন এর বিরোধিতা করে কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে সম্প্রতি পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সরকার কর্তৃক সংশোধন করার কারণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্রপরিষদ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আহম্মেদ রাজু, পার্বত্য গণপরিষদের মহাসচিব এ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার ও গণপরিষদের নেতা এ্যাডভোকেট আলম খাঁন, ওই সভায় বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৬ মন্ত্রিসভা কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ায় বাঙালীদের ভূমি হাত ছাড়া হয়ে যাবে। অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তারা অভিযোগ করেন, কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পদে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ছাড়া বাকি সব সদস্য উপজাতি থাকায় কমিশন উপজাতি সদস্যদের কথায় চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত বাঙালীদের কোন প্রতিনিধি কমিশনে নেই। অথচ এখানে শতকরা ৪৮ ভাগ বাঙালী জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই কমিশনের মাধ্যমে পাহাড়ী বাঙালীরা ন্যায্য বিচার পাবে না। পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালীরা এই আইন কখনও মেনে নেবে না। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এই আইন প্রতিহত করা হবে।
×