ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালী ঐতিহ্যের খাবার, ডাল ভাত পিঠা থেকে পান সুপারি

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাঙালী ঐতিহ্যের খাবার, ডাল ভাত পিঠা থেকে পান সুপারি

মোরসালিন মিজান ॥ ভর্তা ভাজি। মাছ শুঁটকি। শাক। সে তো ঘরের খাবার। মামুলি রেস্তরাঁয় কখনও-সখনও হাত ডুবিয়ে খাওয়া যায়। তাই বলে, পাঁচতারকা হোটেলে? একটু অবাক হওয়ার মতো বৈকি! গরুর মাংসের মেজবানি, কালভুনাও ছিল। আরও ছিল খাসির কোর্মা। শাহজাহানী মোরগপোলাও যাদের পছন্দ, মজা করে খেয়েছেন। বাঙালী ঐতিহ্যের ফল-পীঠা থেকে পান-সুপারি- কিছুই বাদ যায়নি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশী ফুড ফেস্টিভ্যাল। তিন দিনব্যাপী এ ভোজন উৎসবের আয়োজন করে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। উৎসব উপলক্ষে গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার মোটামুটি মুখরিত ছিল হোটেলের ক্যাফে বাজার রেস্টুরেন্ট। সারাবছরই এখানে খাবার খান বিদেশী অতিথিরা। তাদের চাহিদামতো রাখা হয় থাই, কন্টিনেন্টাল ও চাইনিজ খাবার। বাঙালী খাবার মেন্যুতে থাকে না বললেই চলে। আর থাকলেও, হাতেগোনা কয়েকটি পদ। আর তার পর বাংলাদেশী ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন। এ আয়োজন উপলক্ষে আমূল বদলে যায় রেস্তরাঁর মেন্যু। রাতের খাবারে প্রধান হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের মুখরোচক খাবার। বিদেশীদের কাছে নিজেদের খাবারের গুণ তুলে ধরতেই এমন আয়োজন। আর বাঙালীরা তো রসনা তৃপ্ত করে খাচ্ছেন। গত মঙ্গল ও বুধবার হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশী খাবারের প্রচার চলছে জোরেশোরে। এখানে ওখানে ফেস্টুন। ব্যানার। বাঙালী ঐতিহ্যের যত খাবার, নাম লিখে রাখা হয়েছে। লবিসংলগ্ন রেস্তরাঁর সামনে একটি চমৎকার ডিসপ্লে। বাংলাদেশী খাবার ও রান্নার উপকরণ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা। সত্যি বলতে, চেষ্টা দেখেই জিহ্বায় জল চলে আসে! এখানে রাখা হয়েছে তাজা মাছ। একদিন ইলিশ। অন্যদিন দেখা যায় সি-কোড়াল। এভাবে একেক দিন একেকটি মাছের বিশেষ প্রদর্শনী চলে। ছিল সব রকমের সবজি। পাশেই বাংলাদেশী রান্নার প্রধান উপকরণ হরেক রকমের মসলা রাখা। হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা, দারুচিনীÑ কোনটাই বাদ যায়নি। বলা হয়ে থাকে, ভাতে মাছে বাঙালী। এ কারণেই হয়ত রাখা হয় কয়েক পদের চাল-ডাল। দেশীয় ফলের মধ্যে দেখা যায়, পেঁপে, কলা, আনারসসহ মৌসুমী ফল। রেস্তরাঁর ভেতরে খাবার গ্রহণের সুযোগ। চমৎকার রান্না করেছিলেন বিলেত থেকে রান্নার ওপর ডিগ্রী নিয়ে আসা শেফ আলী। এই তরুণ জানান, বাংলাদেশের মানুষের খুব প্রিয় এবং মুখরোচক খাবারগুলোই উৎসবে রেখেছেন তিনি। কী আছে? জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, কী কী নেই? আসলেই তা-ই। শেফ জানান, মাছ মাংস পোলাও কুর্মা থেকে শুরু করে শুঁটকি সবজি ভর্তা সব রাখা হয়েছে মেন্যুতে। মাছের মধ্যে ইলিশ নিয়ে কাজ হয় বেশি। ছিল ইলিশ পোলাও, শর্ষে ইলিশ। টক মিষ্টি স্বাদের ইলিশও ছিল। আর ইলিশ ভাজা তো না হলেই নয়! সামুদ্রিক মাছের মেন্যুও ছিল অনেক। খুলনার চিংড়ি দিয়ে রান্না করা হয় মজার মজার উপাদান। ছিল গরুর মাংসের বিভিন্ন পদ। চট্টগ্রাম অঞ্চলের খুব ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘মেজবানি’। মেজবানির গরুর মাংস রান্না করা হয় উৎসবের জন্য। ছিল কালাভুনাও। খাসির মাংসেও হয় আকর্ষণীয় রেসিপি। মাটন চপভুনা, মাটন শাহী কুর্মা ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। মোরগের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন স্বাদের খাবার। বাদ যায় না বিরিয়ানী। নওয়াবী চিকেন বিরিয়ানী, শাহজাহানী মোরগপোলাওÑ কত কী!
×