ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

জল ঘোলা করা জলযান

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জল ঘোলা করা জলযান

টাইটানিক পানিতে ভাসার আগে মানুষের যে উৎসাহ ও উদ্বেগ ছিল তা যেন সহসাই চুপসে গিয়েছিল টাইটানিক ডুবে যাওয়ার মতো করেই। অনেক আয়োজন এবং উৎসব ম্লান হয়ে গিয়েছিল ডুবে যাওয়া টাইটানিকের সঙ্গে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সবার সামনে হাজির করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটার জৌলুসতা আর ধরে রাখা যায়নি। কিন্তু ভারতের ডুবো জাহাজ ( সাবমেরিন ) কালভেরি বা স্করপেনের ভাগ্যে সেটাও হয়ত জুটবে না। পানিতে নামার আগেই যেন জলযানটির মৃত্যু ঘটল। ধারণা করা হচ্ছে- এই সাবমেরিন হয়ত কখনই আর পানিতে ডুব দেবে না। আর এ ডুব না দেয়ার পেছনে কারণও যে অজস্র। ব্যাপারটা এমন গোপন জিনিস রইবে না গোপন। অর্থাৎ ভারত যে স্পেশালাইজড সাবমেরিন তৈরি করতে যাচ্ছে তা অনেক রাষ্ট্রই জানত। কিন্তু সাবমেরিনটি কোন কোন দিকে স্পেশালাইজড তা ছিল কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে। কিন্তু ভাগ্য ভারতের সহায় হলো না। ফাঁস হয়ে গেল স্করপেনের নানা তথ্যাদি। ফলে সহজেই মানুষের বোধগম্য হয়ে গেল কি কি গুণে গুণান্বিত ছিল সাবমেরিনটি। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেজ্ঞদের মতে, এই নথি ফাঁস হওয়া বেশ বড় রকমের ধাক্কা প্রতিরক্ষা দফতরের জন্য। ভারতের ৬টি সাবমেরিন তৈরির দায়িত্ব নিয়েছিল ফরাসী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিসিএনএস। এগুলো তৈরি হচ্ছিল মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে। এ বছরের শেষ দিকে সাবমেরিনগুলো হস্তান্তর করার কথা ছিল। মূলত পাকিস্তান এবং চীন মোকাবেলা করার জন্যই এই সাবমেরিন তৈরির অনুমতি দেয়া হয়। বিশেষ করে চীন ভারত মহাসাগর বেষ্টনীতে যেভাবে শক্তি বাড়াচ্ছে তাতে অনেক দিন থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিল ভারতের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। সে হিসাব করেই এই স্পেশালাইজড সাবমেরিন তৈরি। তাদের হিসাব মতে, চীনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির জন্য নৌবাহিনীর চাহিদা মতে সাবমেরিন প্রয়োজন ৩৬টি সেখানে ভারতের রয়েছে ১৪টি। এগুলোর আবার অধিকাংশই বার্ধক্যে রূপ নিয়েছে। সাবমেরিনের কাজ হচ্ছে- শত্রুর চোখ ফাঁকি দেয়া। পানির নিচে স্করপেনের এতটাই নিঃশব্দে কাজ করার কথা, যে তাকে চিহ্নিত করা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু পানির গভীরে কতখানি শব্দ করছে, কোন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তথ্য আদান-প্রদান করছে, তা জানা হয়ে গেলে সাবমেরিনটিকে ধ্বংস করা কঠিন কাজ নয়। যে কারণে স্করপেন টাইপের ৬টি ডুবোজাহাজের আর কতখানি কার্যকারিতা থাকবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পুরো ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন। ভারতের সঙ্গে সঙ্গে তোলপাড় শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও চিলিতেও। কারণ, অস্ট্রেলিয়া একই ধরনের ডুবোজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। আর অন্য দেশগুলো এখনই স্করপেন ব্যবহার করছে। নথি ফাঁসের গুরুত্ব বুঝতে তদন্তে নেমেছে ফরাসী সরকারও। প্রধানমন্ত্রী দফতর সূত্রে খবর, নথি আদৌ ফাঁস হয়েছে কিনা, হলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই কূটনৈতিক পর্যায়ে ফ্রান্সকে অভিযোগ আকারে জানানো হবে। কোথা থেকে নথি ফাঁস হলো, তা নিয়েও গুঞ্জন চলছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সূত্রে বলা হচ্ছে, ফাঁস হওয়া নথিতে ফরাসী সংস্থার সঙ্গে অন্য দেশের তথ্যও চুরি হয়েছে। যা ভারতের হাতে থাকা সম্ভব নয়। অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রটিও জানিয়েছে, ২০১১ সালে ভারতের জন্য ফ্রান্সেই এই নথি তৈরি হয়েছিল। ফ্রান্সের এক নৌ-অফিসার তা সরিয়ে ফেলেন। কিন্তু ডিসিএনএস ইঙ্গিত দিয়েছে, ভারত থেকেই মূল তথ্য ফাঁস হয়েছে। তবে নৌবাহিনীর দাবি তথ্য ফাঁসের ঘটনা একটা বড়সড় ধাক্কা হলেও তা আশঙ্কাজনক কিছু নয়। সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ
×