ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ব্রেক্সিটের প্রভাব ॥ ব্রিটিশ অর্থনীতি হবে মন্থর

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ব্রেক্সিটের প্রভাব ॥ ব্রিটিশ অর্থনীতি হবে মন্থর

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোটাভুটির দু’মাস সময় পেরিয়ে গেল। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ওপর ব্রেক্সিট কি প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতিতে কি ধস নেমেছে? শেয়ারবাজার কি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে? আরেক মন্দার দিকে কি এগিয়ে চলেছে ব্রিটেন? ব্যবসায়ী মহল নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ব্রিটিশ অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রেখে চলেছিলেন। সর্বশেষ যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ধস নামেনি। শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তা জোরালোভাবে সামলে নেয়া গেছে। খুচরা কেনাবেচা ভালই চলেছে। তবে তাই বলে অলক্লিয়ার সঙ্কেত দেয়া নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে। বরং এমন তথ্য প্রমাণের অভাব নেই যে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ধরে রেখেছে। পাউন্ডের দর কমায় প্রকৃত মজুরি বা বেতনও শীঘ্রই হ্রাস পাবে এবং এসব পুষিয়ে দিতে রফতানির ব্যাপক প্রসারও ঘটেনি। প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং অর্থনীতি মন্দার কবলে চলে যেতে পারে। অবশ্য সেটা ঠেকানোর জন্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড যা করতে পারার করেছে। সুদের মূল হার কমিয়ে প্রায় শূন্যে নিয়ে এসেছে এবং আরেক দফা বন্ড কেনা শুরু করেছে। ব্রেক্সিটের কারণে পাউন্ডের দর কিছু হ্রাস পাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এমনকি যতটা প্রত্যাশিত ছিল তার চেয়ে বেশি। এগুলো সবই স্বল্পমেয়াদী প্রভাব। প্রাথমিক লক্ষণ দৃষ্টে মনে হয় যে স্বল্পমেয়াদী প্রভাবগুলো গুরুতর আকার ধারণ করবে। তবে এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো ব্রেক্সিটের কারণে অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কতটা ও কিভাবে হবে। এটা ঠিক যে ব্রেক্সিট গণভোটের পর ব্রিটেনের অর্থনীতি গোল্লায় যাবে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল তা ঠিক হয়নি। তবে যেটা হয়েছে তা হলো অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছে। ভোক্তাদের ব্যয় স্বাভাবিক মাত্রায় আছে। জুলাই মাসে খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। ভোক্তারা খারাপ অর্থনৈতিক সংবাদকে সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে চেপে যায় না। এটা একটা স্বাভাবিক ধর্ম। তবে ব্রিটিশ অর্থনীতির ভবিষ্যত সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পেতে হলে কোম্পানিগুলোর আচরণ দেখতে হবে। গণভোটের আগে অর্থনীতিবিদদের প্রধান উদ্বেগটা ছিল এই যে কোম্পানিগুলো ব্যয়বহুল এবং পরিবর্তন করা কঠিন এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে যাবে নাÑ আটকে রাখবে। অন্তত ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যত সম্পর্ক নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত এমনই চলবে। তবে দুটো বড় চিন্তা হলো কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ নিয়ে। ব্যবসার জন্য ঋণ গ্রহণ বৃদ্ধি লক্ষণীয়ভাবে মন্থর হয়ে গেছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সর্বশেষ জরিপ থেকে দেখা যায় যে, পরিকল্পিত বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরা হয়েছে। জুলাই মাসে অবকাঠামো শিল্পে কন্ট্রাক্টের মূল্য জুন মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আদজুনা নামে চাকরি সন্ধানী একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যে জানা যায় জুলাই মাসের মজুরি ও বেকারত্ব জুন মাসের তুলনায় বেড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি ও পাউন্ড দুর্বল হওয়ায় প্রকৃত আয় আরও হ্রাস পেয়েছে। কম পারিশ্রমিকের ও চুক্তিভিত্তিক কাজের বিজ্ঞাপন বেড়ে গেছে। অন্য এক জরিপে দেখা যায় যে, বেকারত্বের হার এখন ৫.৩ শতাংশ। অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে রেকর্ডকৃত সরকারী হার ৪.৯ শতাংশের তুলনায় বেশি। ব্রেক্সিটের সমর্থকরা পূর্বাভাস দিয়েছিল যে পাউন্ডের মূল্যহ্রাসের পর রফতানি বাড়বে। সেই পূর্বাভাসের কি হলো? রফতানি কি সত্যিই বেড়েছে? ১ সেপ্টেম্বর কারখানা শিল্পগুলোর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায় যে, আমেরিকা ও চীনের মতো দেশগুলোতে পণ্য বিক্রি বেশ বেড়েছে। তথাপি রফতানির ব্যাপক বৃদ্ধির প্রত্যাশার রাশ টেনে ধরতে হবে। ব্রিটেনের রফতানির বেশিরভাগ আমদানিকৃত উপাদানে তৈরি সেগুলোর দাম এখন বেড়েছে। আর ব্রিটিশ রফতানি পণ্য প্রধানত গুণগত মান ও কাস্টমার সার্ভিসের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করে যার জন্য মুদ্রার মূল্যমান ওঠানামা করলেও ওগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে না। ব্রিটিশরা এখন আশা করছে যে তারা মন্দা এড়াতে পারবে। সেটা অংশত নির্ভর করছে অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডের ওপর। এ বছরের শেষদিকে তার যে, মিনি-বাজেট ঘোষণা করার কথা তা থেকেই এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। অর্থনীতিকে সহায়তা যোগাতে গেলে তাকে আর্থিক পরিকল্পনা যথেষ্ট শিথিল করতে হবে। এই সহায়তা যোগাতে তিনি ব্যয়সঙ্কোচ বাতিল করতে পারেন। যে জায়গায় অবকাঠামোর ওপর এক দফা অর্থ ব্যয় ঘোষণা করতে পারেন। এ জাতীয় সিদ্ধান্ত মন্দার আগমন ঠেকিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু তাই বলে অর্থনীতির শ্লথগতি ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। গণভোটের আগে অনেক অর্থনীতিবিদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষে রায় হলে অনিশ্চয়তার এক বিরাট উৎস দূর হয়ে যেত বিধায় প্রবৃদ্ধি বাড়ত। কিন্তু সেটা তো আর হলো না। গণভোটের আগে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস ছিল ২০১৭ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ২.৩ শতাংশ। এখন ব্যাংক আশা করছে যে এই প্রবৃদ্ধি হবে ০.৮ শতাংশ হারে। অর্থাৎ অর্থনীতি বেশ মন্থর গতিতে চলতে থাকবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×