ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরু

আজই সিরিজ জয়ের লক্ষ্য টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজই সিরিজ জয়ের লক্ষ্য টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। এক এক করে ১০টি মাস চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়ানডে খেলতেই নামছে না। যে দলটি ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে সোনালী বছর কাটিয়েছে, তারাই কিনা ওয়ানডে খেলছে না! ক্রিকেটভক্ত, সমর্থক, ক্রিকেটার; সবাই অপেক্ষায়। অবশেষে তা শেষ হয়েছে। সেই শেষের শুরুটাও আবার জয় দিয়েই হয়েছে। গতবছর নবেম্বরের পর রবিবার আবার মাশরাফিবাহিনী ওয়ানডে খেলতে নামে। প্রতিপক্ষ থাকে আফগানিস্তান। নেমেই জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ রানে জয় তুলে নেয় সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও যায়। এবার বাংলাদেশের সামনে সিরিজ জয়ের পালা। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। জিতলেই আরেকটি সিরিজ জয় হয়ে যাবে। পারবে বাংলাদেশ আজই সিরিজ জিতে নিতে? প্রথম ওয়ানডেতে যেভাবে বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল আফগানিস্তান, তাতে দ্বিতীয় ওয়ানডের ভবিষ্যত আগাম বলে দেয়া কঠিনই হয়ে পড়ছে। তবে সবার ভেতরই বাংলাদেশ যে জিতবে, এমন ধারণা হয়ে গেছে; তা বলাই যায়। দুইদলের মধ্যে পার্থক্য যে অভিজ্ঞতা। যেমনটি প্রথম ওয়ানডেতেও দেখা গেছে। বাংলাদেশ ১ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায়। এরপর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাটসম্যানরা ঘুরে দাঁড়ায়। যদিও ক্যাচ মিস ম্যাচেরই অংশ ধরা হয়। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ‘নতুন জীবন’ পান। শেষ পর্যন্ত তামিমের ৮০, রিয়াদের ৬২, সাকিব আল হাসানের ৪৮ ও ইমরুলের ৩৭ রানে ২৬৫ রান করে বাংলাদেশ। আরও বেশি রান হতে পারত। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে দ্রুত উইকেট চলে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এরপর বাংলাদেশের হারের লক্ষ্মণই দেখা যাচ্ছিল। যখন রহমত ও হাসমতুল্লাহ মিলে বড় জুটি গড়ে ফেলেন। ১৪৪ রানের জুটি যখন হয়, দলের স্কোরবোর্ডে যখন ১৯০ রান যুক্ত হয়ে যায়; তখনই আবার অভিজ্ঞতার জয় হয়। বাংলাদেশ সেরা অলরাউন্ডার বল হাতে ঝলক দেখান। রহমতকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান। এরপর নিজের শেষ ওভার করতে এসে যখন মাত্র ১ রান দেন, তখন বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় যেন চলে আসে ম্যাচ। বাকি সময়টাতে তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন গতির ঝড় তুলে আফগানদের হারিয়ে দেন। বিশেষ করে তাসকিন শেষ দুই ওভারে যে ৪ উইকেট তুলে নেন, আফগানিস্তান অলআউটই হয়ে যায়। ২৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি আফগানিস্তান। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে। তবে ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ভুগেছে। কারণ ১০ মাস পর ওয়ানডেতে খেলতে নামেন ক্রিকেটাররা। শরীরে জড়তা ছিল। যে জড়তা কাটতে অনেক সময় লেগেছে। দলের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও তাই বলছিল। অনভ্যস্ততা থেকে আবার অভ্যস্ততায় ফিরতে কষ্টই হয়। সেই জড়তা কাটতেই সময় লেগেছে। তাসকিন ও রুবেল শুরুতে গতির ঝড় তুলতেই পারেননি। অবৈধ বোলিং এ্যাকশন থেকে নিজেকে মুক্ত করেই ওয়ানডেতে খেলতে নেমে যান তাসকিন। শুরুতে সমস্যা হলেও শেষে গিয়ে সমাধানই মিলেছে। ইনজুরি থেকে ফিরে আবার ওয়ানডে খেলতে নামেন রুবেল। তারও অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের শেষ মুহূর্তে গিয়ে সবার সবরকম জড়তা কাটতেই আফগানদের চেপে ধরে হারিয়েই দেয় বাংলাদেশ। অনভিজ্ঞ দল হওয়ায় সেই চাপ সামলাতে পারেনি আফগানিস্তান। হারই হয় নিয়তি। এবার জড়তা কেটে গেছে। তাহলেতো আফগানদের কাছে বিধ্বংসী রূপেই বাংলাদেশের সব ক্রিকেটার ধরা দেবে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সিরিজ শুরুর আগে যেমন বলেছিলেন, ‘আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলব।’ সেই খুনে মেজাজ প্রথম ওয়ানডেতে শুরুতে ধরা না পড়লেও শেষে মিলেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেতো প্রথম থেকেই তা মিলে যাবে। তাহলেতো সিরিজ বাংলাদেশই জিততে যাচ্ছে? আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগার স্ট্যানিকজাই অবশ্য দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের আশা করছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বোলাররা অনেক ভাল বল করেছে। তাই জিতেছে (প্রথম ওয়ানডেতে)। আমরা কিছু বাজে শট খেলেছি। আশা করছি দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে তা শুধরে নেয়া যাবে। জেতার চেষ্টাই করব।’ তা কি হতে দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা? এ ম্যাচটি জিতলে যে প্রথমবারের মতো টানা ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতা হয়ে যাবে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জেতা হবে। আফগানদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলেই হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও থাকবে। সেই সঙ্গে শততম ওয়ানডে জয়ও মিলে যাবে। এত কিছু অর্জনের জন্য কি আর তৃতীয় ওয়ানডের অপেক্ষায় থাকবেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদরা? অবশ্যই না। আজই তাই সিরিজ জয়ের নেশায় বুদ হয়ে আছেন ক্রিকেটাররা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদতো বলেই দিয়েছেন, ‘প্রথম ম্যাচ ১০ মাস পর। পরের ম্যাচে কিভাবে আরও ভালভাবে কামব্যাক করা যায় এবং কিভাবে আরও ভাল পারফর্ম করা যায় সেদিকেই মনোনিবেশ করব। সিরিজটিও পরবর্তী (দ্বিতীয় ওয়ানডে) ম্যাচেই যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি সেই চেষ্টাই করব।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে এ সিরিজের আগে দুটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। ফল ছিল ১-১। প্রথমবারের মতো আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতেই জয় তুলে নিয়েছে। এরআগে ৬১টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ৩৯টি সিরিজ হার ও ২টি সিরিজ ড্রয়ের বিপরীতে ২০টি সিরিজে জিতে। আজ আফগানদের হারাতে পারলে ২১তম সিরিজ জয় হয়ে যাবে। বাংলাদেশ অধিনায়কের খুব আশা ছিল, ওয়ানডেতে যেভাবে গতবছর শেষ করেছিলেন, ওয়ানডেতে এ বছরের শুরুটাও যেন একইভাবে হয়। ওয়ানডেতে গতবছর নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে বছরটি শেষ করে মাশরাফিবাহিনী। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগে আর কোন ওয়ানডে খেলা হয়নি। মাশরাফির আশাই পূরণ হলো। জয় দিয়েই ওয়ানডেতে বছরটি শুরু করল বাংলাদেশ। এখন প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের আশা পূরণ হওয়ার পালা। তিনি যে শনিবার বলেছিলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে সিরিজ জেতা।’ এখন আজ জিতলেই সিরিজ জেতার আশাও পূরণ হয়ে যাবে। আজই কি সিরিজ জিততে পারবে বাংলাদেশ?
×