ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে একে-২২সহ বহু অস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে একে-২২সহ  বহু অস্ত্র উদ্ধার

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে র‌্যাবের অভিযানে একে-২২ রাইফেলসহ ২টি রাইফেল ও কিছু ধারাল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনের দক্ষিণ পাশে থাকা বাস্তুহারা নামক বস্তি থেকে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। এই অবৈধ অস্ত্র সংরক্ষণে রাখার অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও বস্তির কয়েক মালিককে আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন অপরাধীকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে জানালেন র‌্যাব সেভেনের চীফ অফিসার (সিও) লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ। ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের সিও জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ী নয় জঙ্গীদের অস্ত্র হতে পারে এসব। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শহীদ হামজা ব্রিগেড ও জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের কাছ থেকে একে-২২ রাইফেল উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গীরা পালিয়ে যেতে পারে। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কেন্দ্রবিন্দু কোতোয়ালি থানা এলাকায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন লাগোয়া বাস্তুহারা বস্তি। রেলের জায়গাতেই গড়ে উঠেছে এই অবৈধ কলোনি। প্রায় ৪ হাজার লোকের বসবাস এই এলাকায়। এই এলাকা মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা বিশাল এই বস্তিতে অভিযান চালানো হয়। সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অভিযান চলে। টানা তিন ঘণ্টার অভিযানের আগে বস্তির চারদিক ঘিরে ফেলে র‌্যাব সদস্যরা। বস্তির বেশ কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালানো হয় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে। এই অভিযানে র‌্যাব সদস্যরা একটি একে-২২ রাইফেল, আরেকটি সাধারণ রাইফেল, একে-২২ রাইফেলের দুটি ম্যাগজিন, ৪টি রামদা ও ১৬টি রকেট ফ্লাইয়ার উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ার কারণে জঙ্গীদের অবস্থান থাকতে পারে এই এলাকায়। বস্তির একটি কক্ষ থেকে অস্ত্র ও আরেকটি কক্ষ থেকে ধারালো অস্ত্র ও ফ্লাইয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের ভেতর কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই দুই ঘরের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের পতেঙ্গার দফতরে নেয়া হয়েছে। এর আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীদের কাছ থেকে একে-২২ ছাড়াও বেশকিছু ভারি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে অনুমান করা হচ্ছে এসব অস্ত্র ও ম্যাগজিন জঙ্গীদের। অভিযোগ রয়েছে, পুরো বস্তিটি টিনের আর বেড়ার তৈরি কাঁচাপাকা ঘর। কয়েক ভূমিদস্যুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই বস্তি। ভাড়াটিয়ার কোন পরিচয়ের বালাই নেই। কারণ, বস্তিতে থাকা না থাকা কোন বিষয় নয়। রেলের জায়গায় অবৈধভাবে গেড়ে বসা এসব ভূমিদস্যু দিনের বেলাতেই মাদকের হাট বসায় । কোতোয়ালি থানা পুলিশের আনাগোনা রয়েছে এই বস্তির মাদক ব্যবসাকে ঘিরে। নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্য এই বস্তি। কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে অপরাধ। আর এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। টু-শব্দ করলেই বস্তিছাড়া করার অনেক ঘটনা রয়েছে এই ঘিঞ্জি এলাকায়। আশপাশের দোকান থেকে জানা গেছে, সারাদিনই এই বস্তিতে অচেনা লোকের আনাগোনা। কারও পরিচয় কেউ জানে না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের আগমন ঘটে। বস্তির কোন কোন ঘরের দরজা সারাদিন ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের পর পরিস্থিতি একেবারেই নিস্তব্ধ। কিছুদিন আগেও এই বস্তি উচ্ছেদে আসে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছুটা উদ্ধারের পর পরদিন আবার বেদখল হয়ে যায়। প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ঠেকাতে মাঝে মাঝে চাঁদাবাজিও হয়। পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলে অপরাধ বাণিজ্য। এ ব্যাপারে র‌্যাবের সিও কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, এই বস্তিতে যারা থাকে তাদের কোন নাম-পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না। এই বস্তি থেকে যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তা জঙ্গীদের হতে পারে। কারণ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে এর আগে। এছাড়াও শহীদ হামজা ব্রিগেড ও জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের কাছ থেকে একে-২২ রাইফেল উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গীরা পালিয়ে যেতে পারে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার নেই।
×