ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দর্শক সমাগমে মুখরিত জাতীয় নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দর্শক সমাগমে মুখরিত জাতীয় নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর চারটি নাট্য মিলনায়তনে চলছে জাতীয় নাট্যোৎসব। নিয়মিত যারা মঞ্চনাটক দেখেন এমন দর্শকের পদচারণায় এখন মুখরিত উৎসব। ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এ মাটি মানবতার’ সেøাগান চলমান ১৮ দিনব্যাপী উৎসবের চতুর্থ দিন ছিল মঙ্গলবার। ৫৮টি নাটকে সাজানো উৎসবে এদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ও বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় তিনটি। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হককে শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় নীরবতা। উৎসবের চতুর্থ দিনের সন্ধ্যায় মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় নাট্যধারার নাটক অতীশ দীপঙ্কর সপর্ষা। প্রযোজনাটি রচনার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন অলোক বসু। নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ প্রাচ্যনাটের নাটক এ ম্যান ফর অল সিজন্্স। রবার্ট বোল্টের রচনা থেকে শাহেদ ইকবালের অনুবাদে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। নাট্যশালার এক্সরেপরিমেন্টাল থিয়েটার হলে পরিবেশিত হয় নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা তোরা সব জয়ধ্বনি কর। সৈয়দ শামসুল হকের রচনা থেকে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আবর্তিত হয়েছে তোরা সব জয়ধ্বনি কর নাটকের কাহিনী। নাটকের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে একজন সাধারণ মানুষ। ভুল বোঝাবোঝির ফাঁদে পড়ে মানুষটিকে বন্দী হতে হয় পাকিস্তানী সেনাদের হাতে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। একটা কবিতা আর তাকে ঘিরে চলতে থাকে দ্বন্দ্ব, আসে স্বীকারোক্তির চাপ। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে খুঁজে ফিরে পাক হানাদাররা মানুষটির মাঝে। এভাবেই এগিয়ে চলে কাহিনী। ছাপোষা নজরুল আর কবি নজরুল পৃথক থাকতে থাকতে কোথাও যেন এক বিন্দুতে মিলিত হতে থাকে ক্রমশ। ছাপোষা নজরুল অসহনীয় অত্যাচারের মুখে, অপমানিত হতে হতে এগিয়ে যেতে থাকে মুক্তির পথে। জেগে ওঠে তার বিদ্রোহী সত্তা। কবি নজরুলের অস্তিত্বের দিকে আকর্ষিত হতে থাকে তার সমস্ত সত্তা। ঘোরে-বেঘোরে, চেতনে-অবচেতনে মিলেমিলে যায় দেশ, ব্যক্তিগত অনুভূতি, প্রেম ও যুদ্ধ। একটি ক্ষুদ্র ঘটনা ও একজন মানুষকে ঘিরে উঠে আসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়। উপস্থাপিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা ও অনিশ্চয়তা। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল সৈকত, আবদুল্লাহ আল মামুন, জুয়েইরিযাহ মউ, সাইদুর রাহমান, শেফালী পারভীন, আবদুল আজিজ প্রমুখ। অতীশ দীপঙ্কর সপর্ষা নাটকটি এক অর্থে বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব অন্বেষণের এক প্রচেষ্টা। প্রাচীনকালের বাঙালী প-িত অতীশ দীপঙ্কর সম্পর্কে নতুনভাবে আলোকপাত করবার চেষ্টা চালানো হয়েছে এখানে। এই মনীষীল জ্ঞান অন্বেষণের আকাক্সক্ষা, তাঁর জীবন, দর্শন, নৈতিকতা ও মানবিকতার সন্ধান করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, মানবতার অবমাননা, শুভবুদ্ধি ও কল্যাণকর চিন্তার সঙ্কটের বিপরীতে অতীশ দীপঙ্করের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির পেক্ষাপটে দেখানো হয়েছে অতীশ দীপঙ্করকে। নাটকে বর্তমানের সঙ্গে অতীতের যেমন সেতু বন্ধন রচনার চেষ্টা চলেছে, তেমনি নাট্য নির্মাণেও চেষ্টা করা হয়েছে দেশীয় রীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিকতার মেলবন্ধন ঘটানোর, যা মূলত অতীশ দীপঙ্করের জীবন সাধনার সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ। অতীশ দীপঙ্কর সপর্ষা নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন লিটু সাখাওয়াত, বিশ্বজিৎ সরকার, আশরাফুননিহার দীনা, কামাল হাসান, হাসান মাহমুদ পলাশ, মাসুদ পারভেজ মিজ, রফিকুল ইসলাম, সব্যসাচী চঞ্চল প্রমুখ। এ ম্যান ফর অল সিজন্স নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, রাজা অষ্টম হেনরী সিংহাসনে আরোহণকালে তাঁর ভাইয়ের বিধবা পতœী স্পেনের রাজকন্যা ক্যাথরিনকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে খ্রিস্টীয় রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের কথা চিন্তা করে পোপ আইনের সংশোধন করে এই বিয়েতে মত দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দুই দেশের বন্ধৃত্ব নষ্ট হয়। ক্যাথরিন পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে ব্যর্থ হন এবং রাজা এ্যান বুলেন নামের এক মহিলার প্রণয়াসক্ত হন। তারপর রাজা তার বিয়ে অবৈধ দাবি করে পোপের কাছে বিচ্ছেদ অনুমোদন করার আবেদন করেন। পোপ তাতে অসম্মত হলে রাজা ‘এ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসী’ বিল পাস করে নিজেকেই ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান বলে অভিষিক্ত করেন ও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে অ্যান বুলেনকে বিয়ে করেন। রোমের সবাই এ বিয়ে মেনে নিলেও তৎকালীন লর্ড চ্যান্সেলর স্যার টমাস মোর এ বিয়েতে সম্মতি দেননি। তিনি প্রতিবাদও করেননি। শুধু তিনি নিজ পদ হতে ইস্তফা দেন। এই নাটকের ঘটনাপ্রবাহ মূলত তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত এবং সমাজ ও নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর চিন্তাধারার সুস্পষ্টতাই নাটকের মূল উপজীব্য। নাটকটির ঐতিহাসিক পটভূমি ষোড়শ শতকের ইংল্যান্ড। মধ্যযুগের শেষ দিকে শুধু ইংল্যান্ড নয় সমগ্র ইউরোপে তখন পরিবর্তনের জোয়ার সূচিত হচ্ছিল। ফলে ধর্ম, রাজনীতি এবং অর্থনীতির মধ্যকার বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ১৫২০ সালের দ্বিতীয় অর্ধ হতে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরী এবং পোপের মধ্যে বিরোধের সূচনা ঘটে। যার অনিবার্য পরিণতি ‘দি ইংলিশ রিফর্মেশন’। উদীচীর নৃত্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপ্তি আজ ॥ আজ বুধবার শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদের নাটক ও নৃত্য বিভাগ আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী নৃত্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উদ্বোধন হয় এ কর্মশালা। কর্মশালার প্রশিক্ষক ছিলেন কামরুল হাসান ফেরদৌস। কর্মশালায় মূলত ভরত নাট্যম এবং লোকনৃত্যের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
×