ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ যুগেও ঘানি টেনে চলে তিন ভাইয়ের সংসার

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এ যুগেও ঘানি টেনে চলে তিন ভাইয়ের সংসার

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ একেবারে অসহায় গরিব তিনভাই। তারা শরীর খাটিয়ে বেঁচে আছে। আর এই পরিশ্রম একদিকে অমানবিক অপরদিকে অমানুষিক। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই তিনভাই স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ঘানি টেনে চলেছে। আজও তাদের এই অমানবিক কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তাদের দুই বেলার পরিশ্রমের আয় হয়ে থাকে মাত্র পৌনে দুইশ’ত টাকা। তবুও কয়েক গ্রামের জনসাধারণ বিশ্বাস করে বা আস্থা রেখে তেল ভাঙ্গাবার জন্য সরিষা ধার দিয়ে থাকে। তেল পিষিয়ে ফেরি করে তা বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করে। বড় ভাই হরিপদ সাহা। বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছে, স্ত্রী মিনতী রানী সাহার বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। তার মধ্যেই দুই বেলা পরিশ্রম করে কিংবা গরুর বদলে ঘানি টেনে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। ছোটটি স্কুলে পড়াশোনা করে। দিনে দুইবার স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে ঘানি টেনে জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করে তিন জনের পরিবার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবারটিকে এখন পর্যন্ত কেউ সহযোগিতা করেনি। মিনতী রানী (৬৫) জানান, তাদের এক সময়ে একটি বলদ থাকলেও বিক্রি করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। এরপর মাত্র পুঁজি দুই হাজার টাকা ছিল। তাদের পুঁজি দুই হাজার টাকাই। জীবন সংগ্রামের আরেক যোদ্ধা শম্ভু নাথ সাহা (৬০)। স্ত্রী গাজলী রানী সাহা (৫৫)। একইভাবে স্বামী স্ত্রী মিলে ঘানি টেনে বেঁচে রয়েছেন। এদের অপর ছোট ভাই তারাপদ সাহা (৫৮)। দুই ভাইয়ের ৮ সদস্যের পরিবার। তবে ছোট দুই ভাইয়ের অল্প কয়েক হাজার টাকার পুঁজি রয়েছে। তাই দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সরিষা কিনে ও পরিবারের সদস্যরা ঘানি টেনে দিন যাপন করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, এদের প্রত্যেকের তিনটি ছোট ছোট কুঁড়েঘর রয়েছে। তার মধ্যেই ঠাসাঠাসি করে ছেলেমেয়ে স্ত্রী নিয়ে কোনরকমে বসবাস করে। গরু বা বলদ কেনার সামর্থ্য নেই। তারাপদ জানান, সামান্য পুঁজি দিয়ে দিনে ১৭৫ টাকা আয় হয়। ইউনিয়ন পরিষদ তাদের নামে কোন ধরনের কার্ড ইস্যু করেনি। বার বার ধরনা দিয়েও ইউপি মেম্বারদের রিকোমেন্ট আদায় করতে না পারায় চেয়ারম্যান কোন ধরনের সাহায্য ভাতার কার্ড ইস্যু করতে পারেনি। এসব করতে পয়সা খরচা করতে হয়। ঘুষের পয়সা খরচের কোন সামর্থ্য নেই এসব অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করা পরিবার তিনটির। তিন পরিবার বসবাস করে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাজারদিঘী গ্রামে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা পরিশ্রম করেই আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। বৃদ্ধা মিনতী রানী, গাজলী রানী সাহা ও ছোট ভাই হরিপদ সাহার স্ত্রী বলেন, তারা পরিশ্রম করতে না পারলেও ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেবে না।
×