ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নীল অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নীল অর্থনীতি

বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বিশ্বে একটি সম্মানজনক সোপানে উন্নীত হলেও এটা সত্য যে, এতে সামুদ্রিক অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমির অবদান কম। প্রায় নেই বললেই চলে। মৎস্যসম্পদে বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ হলেও এতে সামদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ খুব কম। দেশের অধিকাংশ মানুষ মূলত মিঠা পানির মাছ খেতেই অভ্যস্ত। অগভীর সমুদ্র থেকে আহরিত যৎসামান্য মাছ অভ্যন্তরীণভাবে ভক্ষণ ও রফতানি হয় বটে; তবে তা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। স্থানীয় ফিশিং বোটগুলো সমুদ্রে ৩৫ কিলোমিটারের বেশি যেতে পারে না। গভীর সমুদ্রে মাছ ও অন্যবিধ জলজ সম্পদ আহরণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ও ট্রলার আমাদের নেই। অথচ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে প্রাপ্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি ভাবা যায়। এত বিপুল বিশাল জলধিতে কী পরিমাণ সমুদ্র সম্পদ এখনও পর্যন্ত প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অনারোহিত রয়েছে! আর এ তো শুধু বিচিত্র রকমের মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণিকুলের অফুরন্ত ভা-ার নয়; এর পাশাপাশি রয়েছে শৈবাল জাতীয় দুর্লভ-দুর্মূল্য উদ্ভিদ স্পিরুলিনা, সি প্ল্যাঙ্কটন বা সমুদ্র শৈবাল এবং অন্যবিধ বিচিত্র উদ্ভিদপ্রজাতি। এর অতিরিক্ত সমুদ্রতল বা বেসিনে রয়েছে বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাসসহ দুর্লভ ও মূল্যবান খনিজ সম্পদের অফুরন্ত মজুদ। সুবিশাল বঙ্গোপসাগরকে কয়েকটি ব্লকে ভাগ করে তেল-গ্যাস আহরণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও এক্ষেত্রে অগ্রগতি আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। সুবিস্তৃত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ নানা খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান পাওয়া গেলেও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে দক্ষতা ও পুঁজির অভাবে তার আহরণ ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। এমনকি বহুকথিত মেরিনড্রাইভওয়েকে কেন্দ্র করে পর্যটনশিল্পের অফুরন্ত সম্ভাবনাও একরকম অবহেলিত থেকে গেছে। এসবই হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর অদূরদর্শিতা সর্বোপরি নীতিমালার অভাবে। আরও যা দুঃখজনক তা হলো সমুদ্রসম্পদ আহরণ, রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ে কোন নীতিমালা পর্যন্ত নেই। ফলে, সমুদ্র অর্থনীতি বা বুø-ইকোনমির আদৌ কোন সুফল ভোগ করতে পারছে না বাংলাদেশ। বিলম্বে হলেও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। দেশের যাবতীয় সমুদ্র সম্পদ আহরণ, রক্ষণাবেক্ষণ, সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। ব্লু-ইকোনমি সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সহযোগে জাতীয় পর্যায়ে খুব শীঘ্র্রই উন্মুক্ত আলোচনাসহ সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান, বিশেষজ্ঞ, দক্ষতা ও বাজেট ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের জরিপ জাহাজ পর্যন্ত নেই। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-চীন-রাশিয়া-জাপানের বাইরে হল্যান্ড, সুইডেন-নরওয়ে-পর্তুগাল সমুদ্রসম্পদ আহরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সবিশেষ উন্নয়ন ঘটিয়েছে জাতীয় অর্থনীতির। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকেও বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি সহায়তা নেয়া যেতে পারে। বিশ্বায়নের পর্যায়ে সাহায্য-সহযোগিতা চাইলে যে কোন দেশ এগিয়ে আসবে। ব্লু-ইকোনমির অতি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে সেই পথেই অগ্রসর হতে হবে।
×