ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা জিততে জানি ॥ সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আমরা জিততে জানি ॥ সাকিব

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের কাছাকাছিই চলে যায় আফগানিস্তান। কিন্তু জয় আর মিলেনি। কেন? বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের যুক্তি, ‘আমরা জানি কিভাবে জিততে হয়।’ শুধু কিভাবে জিততে হয়, সেটি জানা থাকলেই হয়! এরসঙ্গে যে অভিজ্ঞতাও অনেক লাগে সেটিও মনে করিয়ে দিলেন সাকিব। এই অভিজ্ঞতাতেই আসলে মাত খেয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে তাই চাপে ফেলেও ৭ রানে হেরেছে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটিতে অবিশ্বাস্যভাবে জিতেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের মন্তব্যইতো বুঝিয়ে দেয় আফগানিস্তান যতই চাপ তৈরি করুক, বাংলাদেশ জয় পাবেই। অভিজ্ঞ দল হওয়ার সুবিধাই এটা। দুর্বল দলকে যে কোন সময় বিপদে ফেলতে পারে। জয়ও তুলে নিতে পারে। যেমনটি প্রথম ওয়ানডেতে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও এখন জিততে চায়। জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের হয়ে যাবে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় হয়ে যাবে। এরপর আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগও মিলবে। পারবে বাংলাদেশ তা করতে? সাকিব বলছেন, দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ আরও ভাল খেলবে। দলীয় ৪৬ রানে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার সাজঘরে ফিরলেও তৃতীয় উইকেটে রহমত ও হাসমতুল্লাহ মিলে ১৪৪ রানের জুটি গড়ে। তাতে হারের শঙ্কাই জন্ম নেয়। কিন্তু অনভিজ্ঞ দল যে অভিজ্ঞতার কাছে হার মানে বেশিরভাগ সময়। হঠাৎ সব ওলট-পালট হয়ে যায়। তাইতো সাকিব বলেছেন, ‘যে পরিস্থিতি ছিল, জেতাটা ওদের উচিত ছিল। আমার কাছে মনে হয় ওদের অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে পারেনি। আর আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ের অনেক বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা জানি কিভাবে জিততে হয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘প্রথম ম্যাচ সবসময়ই একটু কঠিন। আমরা যেহেতু অনেকদিন পর খেললাম, তাই আমার মনে হয় দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে সবকিছু আরও ভাল হবে।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে অনন্য এক কীর্তিই গড়েন সাকিব। এমন প্রাপ্তিই যোগ হলো ক্যারিয়ারে, যা বিশ্বের আর কোন বোলারের নেই। শাবির নুরির উইকেট শিকার করে আব্দুর রাজ্জাকের (২০৭ উইকেট) সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকার শীর্ষে বসেন তিনি। আর রহমত শাহর উইকেট নিয়ে শুধু বাংলাদেশকে জয়ের আশাই জাগাননি রাজ্জাককেও পেছনে ফেলে দেন। তাতে ক্রিকেটের তিন ফরমেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারে পরিণত হন। কীর্তিটা আরও উঁচুতে নিয়ে গেছেন তিনি। টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে তিন ফরমেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি একমাত্র বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সাকিব। যে কৃতিত্ব বিশ্ব ক্রিকেটে আর কারও নেই। বিশ্বের আর কোন বোলার নেই, যিনি তার দেশের হয়ে তিন ফরমেটেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আগেই টেস্ট ও টি২০তে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটি নিজের করে নিয়েছেন। টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ১৪৭টি। আর টি২০তে ৬৫ উইকেট। সাকিবই মূলত আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের নায়ক। নিজেও যে শেষ দুটি ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেন, সেটিকে টার্নিং পয়েন্টও মানছেন। বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আমার ৪১তম ওভারে ১ রান এবং ওদের বড় একটা জুটির পর আমার ব্রেক থ্রুটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’ আফগান দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান যখন টাইগারদের কাছ থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন; তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আসেন সাকিব। তৃতীয় উইকেট জুটিতে রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ মিলে ১৪৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন। তারা দু’জন মিলে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। দলীয় ৪১তম ওভারে এবং নিজের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিবকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মুশফিকের হাতে স্ট্যাম্পড হন রহমত শাহ। ওটাই বাংলাদেশের জয়ের টার্নিং পয়েন্ট। এছাড়া ৪৭তম ওভারে মাশরাফি যখন সাকিবের হাতে বল তুলে দেন, তখন আফগানদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৮ রান। সাকিব মাত্র ১ রান দেন ওই ওভারে। সাকিব বলেন, ‘ভাল লাগে যে কোন অর্জন বা স্বীকৃতি পেলে। আমার মূল কাজ হচ্ছে দলের জয়ে অবদান রাখা। নিয়মিত অবদান রাখলে ফল এমনিতেই আসবে। এটা আসলে চিন্তা করার বিষয় নয়। ম্যান অব দ্য ম্যাচ তো কেউ বলে-কয়ে হয় না। আপনি অবদান রাখার চেষ্টা করবেন। সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারলে দিনশেষে সেরা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে আপনার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা যারা শীর্ষে আছি, আশাকরি এভাবেই অবদান রাখব। আর কেউ আগে কেউ পরে তো থাকবেই (রেকর্ডে)। এটা নিয়ে আমরা কেউ চিন্তিত নই। সবারই লক্ষ্য দলে অবদান রাখা, ভাল করার চেষ্টা করা।’ বুধবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও তা রাখতে পারলেই হয়ে যায়। সিরিজ জয় হয়ে যাবে।
×