ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার উত্তরা ও রমনার চার ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু ৩ অক্টোবর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঢাকার উত্তরা ও রমনার চার ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু ৩ অক্টোবর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার উত্তরা ও রমনা থানার চারটি ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। আগামী ৩ অক্টোবর থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হবে। এ দুটি থানায় স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ হলেই কেবল রাজধানীর অন্য থানাগুলোতে কার্ড বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোঃ সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, দুটি থানায় স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে ৫৫ জন অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন অপারেটর উত্তরা থানার জন্য একং ২৫ জন রমনা থানার জন্য। স্মার্টকার্ড বিতরণের পাশাপাশি ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মনির ছবি নেয়া হবে। সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দুটি থানার চারটি ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে অন্য থানাগুলোতে কার্ড বিতরণ করা হবে। অন্য থানাগুলোতে বিতরণের জন্য ইসির পক্ষ থেকে সময়মতো সময়সূচীও জানিয়ে দেয়া হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থানার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৩ হাজারের বেশি কার্ড বিতরণ করা হবে। ৩ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা হাইস্কুল ও কলেজ থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ চলবে। অপরদিকে রমনা থানার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। রমনা থানার নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল ও কলেজ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সেগুনবাগিচা হাইস্কুল ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে উদয়ন স্কুলে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। ৩ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটাররা উল্লিখিত স্থানে এসে স্মার্টকার্ড নিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে বহু কাক্সিক্ষত স্মার্টকার্ড নাগরিকদের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আগামী ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরই ওইদিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হাতে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের হাতেও ওইদিন স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হবে। এ জন্য জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে স্মার্টকার্ড প্রকল্পের ব্রান্ড এ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর প্রচারের জন্য মাশরাফিকে দিয়ে একটি স্মার্টকার্ড বিষয়ে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই এটি ৩ অক্টোবর থেকে সাধারণ নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়ার কাজ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি করে মোট দুটি থানায় এবং বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। সাবেক ছিটমহলবাসীদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ৩ অক্টোবর কুড়িগ্রামের দশিয়ারছড়ায় উপস্থিত থাকবেন। এ বিষয়ে ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ২ অক্টোবর স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদের স্মার্টকার্ডটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্টকার্ড তাঁর হাতে তুলে দেবেন সিইসি। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের স্মার্টকার্ড হস্তান্তর করবেন। তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির স্মার্টকার্ডটি পরে বঙ্গভবনে সিইসি ও অন্য কমিশনাররা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে হস্তান্তর করবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সোমবার সাংবাদিকদের আরও বলেন, মূলত ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ৩ তারিখ থেকে ঢাকায় ও কুড়িগ্রামে এর বিতরণ কাজ করা হবে। স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিতরণের সিডিউলসহ বিস্তারিত প্রচার চালানো হবে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় মোট ৭৫ হাজার ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এখানকার তিনটি ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীও স্মার্টকার্ড পাবে। আর ঢাকার প্রায় ৫০ লাখ ভোটারকে প্রাথমিকভাবে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে দেশের সব ভোটারকে উন্নতমানের এ কার্ড দেয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, স্মার্টকার্ড দেয়ার সময় ভোটারদের হাতে থাকা লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত নেয়া হবে। পাশাপাশি পরিচয়পত্রধারীদের প্রত্যেক্যের দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ ছবি সংগ্রহ করা হবে। এভাবে একজনের স্মার্টকার্ড প্রদান, পুরোনো কার্ড ফেরত নেয়া ও আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মনির ছাপ নিতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ তিন মিনিট। শুক্র-শনিবার হয়ত নাগরিকদের সাড়া বেশি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, কার্ড বিতরণে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আলাদা ক্যাম্প থাকবে। ক্যাম্প করে কাউন্টার বসিয়ে কাজ করবে অপারেটররা। লোক বেশি হলে ক্যাম্পের সংখ্যাও বাড়ানো হবে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্মার্টকার্ড জাল করা দুঃসাধ্য করা হয়েছে। কেউ এটি জাল করতে চাইলে অধিক মূল্যমানের মেশিন কিনতে হবে। মেশিন কিনতে না পারলে কেউ এটি জাল করতে পারবে না। ফলে কেউ ইচ্ছা করেও এটি জাল করতে চাইবে না। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, এখন উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড নিয়ে যে কোন তথ্য জানা যাবে এনআইডির কল সেন্টার থেকে। এ জন্য নাগরিকদের সুবিধার জন্য কল সেন্টার বসানো হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন থেকে তিন সংখ্যার (১০৫) একটি শর্ট কোড নেয়া হয়েছে। নাগরিকদের হাতে থাকা যে কোন মোবাইল নম্বর থেকে শর্ট কোড নম্বরে ফোন দিলেই চাহিদা অনুযায়ী মোবাইলের কি-প্যাডের নির্দিষ্ট বাটন চাপার অনুরোধ জানানো হবে। এভাবে সেবাগ্রহীতা এনআইডি নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে তার স্মার্টকার্ডটি কবে কোথায় দেয়া হবে সে তথ্যও জানতে পারবেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, স্মার্টকার্ডের সংশোধন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে যে কেউ যে কোন সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলত্রুটি সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তাদের এ আবেদন গ্রহণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মবর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি দেশে ৯ কোটির বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা রয়েছে।
×