ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু আমলার বিরোধিতায় আটকে আছে নাগরিকত্ব আইন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কিছু আমলার বিরোধিতায় আটকে আছে নাগরিকত্ব আইন

তপন বিশ্বাস ॥ কিছু আমলার বিরোধিতায় আটকে আছে নাগরিকত্ব আইন। কিছু আমলার স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করা ও তাদের বংশধরদের এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিদেশী নাগরিকত্ব লাভের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিধান থাকায় এই বিরোধিতার মূল কারণ। এছাড়া ফিরে এলেও দেশের নাগরিকত্ব পাবে না। এতে সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারবিরোধী একটি চক্রও এ আইন পাস না করার জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস করা হলে দেশ-বিদেশে সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দ্বারা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, এমনকি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী অনেক তরুণ, মেধাবী ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ পাবে। ফলে দেশের আত্মসামাজিক শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মন্ত্রিপরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পরও রহস্যজনক কারণে নতুন নাগরিকত্ব আইন আলোর মুখ দেখছে না। আইনটি আদৌ সংসদে উত্থাপন করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, নাগরিকত্ব আইনের নতুন কিছু বিধানের ফলে সামরিক ও বেসামরিক আমলার একটি অংশ, বিহারী ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের একটি গ্রুপ সম্মিলিতভাবে পৃথক অবস্থান থেকে নতুন এ আইনের বিরোধিতা করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ সৃষ্টি করছে। আইনটি মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে যাচ্ছে না। নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মন্ত্রিসভা ২০১১ সালে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। দীর্ঘ চার বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এ আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের জন্য প্রেরণ করে। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে একাধিক মিটিং করে এবং আইনটি চূড়ান্ত করে ২০১৫ সালের শেষদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করে। পরে মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি প্রস্তাবিত কতিপয় বিধানে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনটি পাস করানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত নতুন নাগরিকত্ব আইনে সরকারী চাকরিজীবী (সামরিক ও বেসামরিক) উভয়েই সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ পদে বা চাকরিতে থাকাকালীন সময়ে বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যারা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এবং স্বাধীনতার পরে উক্ত ব্যক্তিগণ বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করেন বা পাকিস্তান বা অন্যকোন রাষ্ট্র থেকে এ আইন কার্যকর করা পর্যন্ত দেশে ফিরে না আসেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন না। এছাড়াও রোহিঙ্গা, বিহারী বা অন্যকোন ব্যক্তি যার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য নেই তারাও নাগরিকত্বের অযোগ্য হবেন। এছাড়া নাগরিকত্ব বাতিল হবে যদি কোন ব্যক্তি বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এছাড়া কখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল এমন কারও। বাংলাদেশ কখনও স্থায়ীভাবে বসবাস করেনি এমন কেউও বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারবে না। বাংলাদেশের জন্য এমন প্রয়োজনীয় এবং যুগোপযোগী আইনটি স্বার্থান্বেষী কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। পরোক্ষভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একটি আইন সরকারী-বেসরকারী আমলাতন্ত্র তথাকথিত সাংবিধানিক পদধারী কিছু ব্যক্তি এবং স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের ষড়যন্ত্রের ফলে আইনটি পাস করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র উল্লেখ করেছে। আইনটি গত বাজেট অধিবেশনের পূর্বেই সংসদে প্রেরণ এবং পাসের জন্য উপস্থাপন করার কথা ছিল। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, মন্ত্রীর একান্ত সচিব এবং তাদের নিজটজনদের অনেকেরই বিদেশী নাগরিকত্ব রয়েছে। আমলাদের অনেকেই চায় না সরকারী চাকরিজীবীদের বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণে কোন প্রকার বাধানিষেধ থাকুক কারণ অবসরের পর দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলাই বিদেশে পাড়ি জমান। তাই নতুন এ আইনটি পাস হলে দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলার বিদেশে পাড়ি জমানো বা আত্মগোপনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
×