ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান সন্ত্রাসের সূতিকাগার

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পাকিস্তান সন্ত্রাসের সূতিকাগার

বিশ্বের যে কয়টি রাষ্ট্র এখন সন্ত্রাসবাদের অন্যতম ধারক বাহক তার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে পড়ে পাকিস্তান। পাকিস্তান কেবল তার নিজ দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে না বরং তা ক্রমবর্ধমান হারে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহেও সম্প্রসারিত করছে। একটি সময় আজকের বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে সংযুক্ত ছিল তখন এ দেশ থেকে তৎকালীন অর্থনীতিবিদদের হিসাবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত ৩১১২ কোটি টাকা পাচার করেছে। ওই সময়কে অনেকে দ্বিতীয় ঔপনিবেশিক শাসনামল বলে অভিহিত করেছেন। ভাগ্য ভাল, বঙ্গবন্ধুর মতো দূরদর্শীসম্পন্ন নেতৃত্বের জন্ম হয়েছিল- যিনি এযাবতকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং একজন সর্বগুণসম্পন্ন মহৎ পুরুষ। প্রফেসর মোবাশ্বের মন্তব্য করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর মতো ঔদার্যসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সুভাষ বসুর চেয়েও অধিকতর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রজ্ঞার অসামান্যতম ধীশক্তিতে বহ্নিমান ও প্রোজ্জ্বল ছিলেন। পাকিস্তান কেবল এই বাংলাদেশ নয় বরং এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নরখাদকের ভূমিকায় লিপ্ত। তারা তাদের দেশের বেলুচিস্তানের বাসিন্দাদের প্রতি যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদের শোষণ-বঞ্চনা করছে তা কহতব্য নয়। তারা তালেবান সৃষ্টি করেছে। ছড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানের হিংস্রতার জ্বলন্ত অগ্নিকু-। পাকিস্তানীদের সন্ত্রাসবাদ শুধু তার নিজের দেশ নয়, কোন দেশেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানীরা চাকরি সূত্রে নানা ধরনের অপকর্ম করে এবং তারা তথাকথিত সালাফি এবং ওহাবী মতবাদকে ছড়িয়ে দিয়ে কর্মঠ বাঙালী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণার বীজ বপন করে চলেছে। আবার তারা নিজেদের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে অন্যায় কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশেও পাকিস্তানী এজেন্টের অভাব নেই যারা পাকিস্তানের সমর্থনে কাজ করে। এদের মধ্যে তথাকথিত সুশীল সমাজের কিছু সদস্য যেমন রয়েছেন তেমনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিকসহ নানা স্তরের লোকজন রয়েছেন। এই পাকিস্তানপন্থীদের চিহ্নিত করে তাদের যদি দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করতে দেখা যায় তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সাজার ব্যবস্থা করা জরুরী। পাকিস্তান আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। আর তাই তারা সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের উরি সেক্টরে পাকিস্তান যে নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে তা তাদের দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার একটি উদাহরণ। জঙ্গীরা উরি সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে ১৭ জওয়ানকে হত্যা আর জখম করে ৩০ জনকে। আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আরও জোরালো পদক্ষেপ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাছে প্রয়োজন। চলতি মাসের ২৪ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত সফটওয়্যার রফতানি করে পাকিস্তানে আর পাকিস্তান রফতানি করে সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার যে সন্ত্রাসবাদী তার বড় প্রমাণ হচ্ছে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেই তারা আঘাত পায় আর তাদের পার্লামেন্টে সে যুদ্ধাপরাধীদের প্রশংসা করা হয়। এতে প্রমাণিত হয়, এখন পর্যন্ত পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের বর্বরতায় বিন্দুমাত্র লজ্জিত নয়। কেননা পাকিস্তানীরা যেভাবে জঙ্গী তৈরি করছে আর তার সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে তাতে সার্ক আজ সত্যিকার অর্থে মুখ থুবড়ে পড়ছে। সার্কভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর উচিত নবেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলন বয়কট করা। প্রকাশ্যে পরমাণু হামলা চালানোর হুমকি-ধমকি পাকিস্তানের জন্য নতুন নয়। তারা মানুষের রক্তের ভেলায় শকুনির উল্লাসে মদমত্ত। বাংলাদেশে প্রকাশিত পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায় যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানী দূতাবাসের তৎকালীন কর্মকর্তা মাযহার খানের সংশ্রব ছিল এবং সে জঙ্গী তৎপরতার পাশাপাশি জড়িত ছিল জাল ব্যবসার সঙ্গে। আবার ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পাকিস্তান দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ফারিলা আরশাদকে এদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয় নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠীকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার জন্য। পাকিস্তান নিজের দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ তারা জোর করে অন্য দেশে সন্ত্রাসবাদ রফতানি করছে। যদিও সন্ত্রাসবাদ আজ একটি বৈশ্বিক সমস্যা- তবে পাকিস্তানের এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। পাকিস্তান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনের জন্য ক্ষমা চায়নি। বরং তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বারবার নাক গলিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটার পর তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার ভুট্টোর ভূমিকা বাঙালী ভুলে যায়নি। পাকিস্তানী বাহিনী ও তার সহযোগী আলবদর-রাজাকাররা এদেশে যে নির্মম পৈশাচিক কর্মকা-ে লিপ্ত ছিল তা আজ ক্রমে সন্ত্রাসের বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানী পণ্য আমাদের দেশে বয়কট করা উচিত। কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করা দরকার। পাকিস্তান এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মেনে নিতে পারেনি বরং তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চরম বৈরী মনোভাব দেখিয়ে চলেছে। ঘৃণ্য এ পাকিস্তানী এবং তাদের স্থানীয় কিছু এজেন্ট যারা পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত তারা বার বার এদেশে বিভিন্ন রকমের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় ও লালন-পালন এবং বিস্তার ঘটায়। পাকিস্তানের মতো একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের সার্কের সদস্যভুক্ত থাকা উচিত নয়। পাকিস্তানকে সার্ক থেকে বহিষ্কার করা উচিত। নওয়াজ শরীফের কর্মকা- প্রমাণ করে যে যারা সন্ত্রাস করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারলে তারা লাভবান হন। হয়ত কোন বিশেষ দেশ থেকে তারা সহযোগিতা পায়। তারা সন্ত্রাস ছড়িয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করে নিজের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বেলুচিস্তানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। অন্যদিক নওয়াজ শরীফ সরকার ও তার দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনও বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে না। তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ কিংবা উপযুক্ত সব মানসিকতার কোন স্থান নেই। জাতি হিসেবে পাকিস্তান একটি অভব্য রাষ্ট্র। তারা মানবাধিকারের চর্চা করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসের দিনে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫। এদিন তিনি জানান যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসলে জাতিগতভাবে পাকিস্তানীরা উদ্ধত স্বভাবের। তারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত নয়। কাশ্মীর নিয়ে যে বিরোধ তা সুন্দরভাবে সমাধানের জন্য কোন উদ্যোগ নেই। তারা কেবল শক্তিমত্তা ও বুদ্ধিহীনতা এবং বিবেকবর্জিত কর্মকা-ে ব্যস্ত থাকে। একটি রাষ্ট্র নিজে যখন দূষিত হয় তখন তারা অন্যত্র সে দূষণ ছড়িয়ে দেয়। পাকিস্তান আজ জঙ্গীবাদের যে ঘাঁটি গড়ে তুলেছে তা তারা বিভিন্ন দেশে রফতানিতে সচেষ্ট আছে। পাকিস্তানকে বর্জন করে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান একযোগে কাজ করতে পারে। এদিকে বিমসটেক গঠিত হলেও সেটি মূলত স্থবির প্রায়। থাইল্যান্ডকে সংযুক্ত করে যদি আঞ্চলিক শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশ গড়ে তোলা যায় তবে তা একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা হতে পারে। এ অঞ্চলে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাগুণে এক ধীমান শক্তি। তিনি শান্তির জন্য কাজ করে চলেছেন। জননেত্রীর কাছে আবেদন থাকবে, শান্তির অন্বেষায় বিমসটেককে জাগ্রত করার প্রয়াস নেয়া এবং অঞ্চলগত ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষার সম্প্রসারণের পাশাপাশি সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তিনি যে জিরো টলারেন্সের পরিচয় দিয়েছেন তাকে আঞ্চলিক সংস্থার আওতায় আনয়ন করা। কেননা শেখ হাসিনা যথার্থই বৈশ্বিক নেত্রী হিসেবে ডধৎ ধমধরহংঃ ঞবৎৎড়ৎ-এ কাজ করে চলেছেন। তিনি পাকিস্তানের হীন কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা দরকার। পাকিস্তানী নাগরিকরা যত কম এ দেশে ভ্রমণে আসবে ততই মঙ্গল। আজ সময় এসেছে সন্ত্রাসী পাকিস্তানকে ধর্মের দোহাই ও ব্যবসা দিয়ে পরিচালনা থেকে বিরত রেখে একঘরে করার। এবারে জাতিসংঘে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিবেশী দেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের সোচ্চার হওয়ারও সময় এসেছে। লেখক : শিক্ষাবিদ [email protected]
×