ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমণীয় রমনা পার্ক

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রমণীয় রমনা পার্ক

রমনা পার্ককে আরও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে পার্ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে। উদ্যানের জন্য ক্ষতিকর মেহগনি গাছগুলো অপসারণ করে দেশের ঐহিত্য রক্ষা পায়- এমন গাছ রোপণ করা হবে। এমনকি পার্কের লেক বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদে সমৃদ্ধ করে তোলা হবে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলকে পাখির জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত। পার্কের প্রবেশপথগুলো করা হবে আরও সবুজ ও বর্ণিল। এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানালেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রমনা পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ঐতিহ্য সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ কথা সত্য যে, রমনা পার্ক এখন অযুত সমস্যার যাঁতাকলে পড়ে ধুঁকছে। পার্কের কৃত্রিম লেকে আবর্জনা ফেলায় এর পানি এখন ব্যবহারের অযোগ্য। পার্কের ভেতরের শতায়ু অঙ্গনটি অবহেলা-অনাদরে পড়ে আছে। শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার উপকরণগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখোমুখি। সন্ধ্যার পরে রমনা পার্ক পরিণত হয় মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে। অথচ রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বলা হয় রমনা পার্ককে। অক্সিজেন সরবরাহকারী হিসেবে ঢাকাবাসীকে নীরবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই পার্ক। বিলম্বে হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। রাজধানীর মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পার্কের স্বল্পতার কথা অনেক আগে থেকেই আলোচনায় রয়েছে। যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে রমনা পার্ক অন্যতম। আশার কথা হলো, দীর্ঘদিন ধরে অযতেœ থাকা এই রমনা পার্ককে সংস্কারসহ বৃক্ষায়নের মাধ্যমে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজধানীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত জায়গার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। রমনা পার্কের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য ঢাকার দুই সিটিতেই পার্ক রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। কিন্তু পার্কগুলো নিয়মিত সংরক্ষণ ও দেখভাল না করায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অবহেলা ও অনাদরের কারণেই বেদখল হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি ছিমছাম ও সুন্দর নগরীর জন্য নগরের মোট আয়তনের ১০ শতাংশ খোলা মাঠ ও পার্ক থাকা আবশ্যক। অথচ আমাদের আছে মাত্র ৪ শতাংশ জায়গা। যেটুকু আছে, তাও ধরে রাখা যাচ্ছে না। শুধু রমনা পার্ক নয়, রাজধানীর সব পার্ককে বিনোদনের উপযুক্ত স্থানে পরিণত করতে হবে। পার্ক রক্ষায় আদালতেরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিষয়টি উপেক্ষিত। রাজধানীর পার্কগুলো দখলমুক্তকরণ, সংরক্ষণ ও এ সুবিধা সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এই প্রত্যাশা সবার।
×