ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক

বহু দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতা এবং প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সীমান্তে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না একতরফা নির্যাতন ও হত্যাকা-। স্রেফ তুচ্ছ কারণে সীমান্তে সাধারণ নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হতাহত করা মেনে নেয়া যায় না। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তথা বিএসএফ বছরের পর বছর সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করলেও এর প্রকৃত কোন সমাধান হচ্ছে না। সীমান্তে চোরাচালান নৈমিত্তিক ঘটনা এবং এর সঙ্গে উভয় দেশের নাগরিকই জড়িত। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকরাই কেন বারবার হত্যাকা-ের শিকার হয়, এ প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ মজবুত; এরপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া দুঃখজনক। বাংলাদেশীরা বেশিরভাগই নিহত হয়েছেন বিএসএফের হাতে। কিছু হয়েছেন ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারাও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুচ্ছ কারণে হত্যা করা হচ্ছে বাংলাদেশীদের। বিপরীত দিক থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তথা বিজিবি কোন ভারতীয় নাগরিককে হত্যা বা নির্যাতন করেছে, এমন ঘটনা শোনা যায় না। বরং অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে আসছে বিজিবি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, আইনী ব্যবস্থার জন্য। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশের দরিদ্র নাগরিকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে রয়েছে জরুরী চিকিৎসা সেবা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাওয়া এবং কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয়। শুধু সীমান্ত অতিক্রম নয়, জিরো লাইনের কাছে ভুলক্রমে চলে যাওয়ার কারণেও বাংলাদেশের নাগরিকরা হত্যার শিকার হচ্ছেন। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হত্যার শিকার হওয়ায় অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। যদি বাংলাদেশের কোন নাগরিক অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিয়ে হত্যা কিংবা শারীরিকভাবে আঘাত করা গুরুতর অন্যায়। বিএসএফ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরাও রক্ষা পাচ্ছে না বিএসএফের হাত থেকে। সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত মে মাসে উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠকে। এজন্য বিজিবি কর্মকর্তারা প্রয়োজনে ভারতে গিয়ে তদন্ত কাজে যুক্ত হতে পারার বিধানও গৃহীত হয়েছে। তবুও, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। বিএসএফ প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে না বলে সিদ্ধান্ত রয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি হত্যাকা-। ফেলানী হত্যা আলোড়ন তুলেছিল। ভারতীয় আদালতে হত্যার বিচারের রায়ে ফেলানী পরিবার অসন্তোষ প্রকাশও করেছে। হত্যার ঘটনা চোরাচালানকে নিবৃত্ত করতে পারেনি। সীমান্ত রক্ষা ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অধিকার অবশ্যই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর রয়েছে। কিন্তু নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করা হবে কেন- এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলে না। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, মানুষ পাচার এবং চোরাচালান বন্ধে যৌথ উদ্যোগ ও দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা ও আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দু’দেশ কাজ করছে সেখানে এসব হত্যা কোনভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। কুড়িগ্রাম ও ঝিনাইদহে এ সপ্তাহে দু’জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। সীমান্তে যে কোন অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় রেখে হত্যা বন্ধ করা হোক- এটা সবারই কাম্য।
×