ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেসব কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যেসব কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক॥ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৃশংসতা আজও ভুলতে পারেনি বিশ্ববাসী। যার ছাপ এখনও অমলিন এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ জাপানে। অথচ এরই মধ্যে আবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় প্রহর গুণছে বিশ্ববাসী। পৃথিবীতে চলমান বিভিন্ন সংকট ও সংঘাতকে কেন্দ্র করেই এমনই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা। খবর কলকাতানিউজ টোয়েন্টি ফোর। মর্নিংগ্লেজারের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, এসব তাত্ত্বিকদের মতে নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তারা যেসব কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বশক্তিদের দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয়ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিনের পূর্ব ইউরোপ আগ্রাসন। এবং তৃতীয়ত, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থান। এরই সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ উসকে দেয়ার সর্বশেষ সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত। সম্প্রতি ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত পাকিস্তানে সার্জিক্যাল আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। পাল্টা জবাব দিতে দেশটির দিকে মিসাইল তাক করে রেখেছে পাকিস্তান। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পরিস্থিতির রাশ টেনে না ধরলে ভারত-পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। আর সত্যিই যদি পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে তা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী, ঘটবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে কল্পনাতীত প্রাণহানির শিকার হবে বিশ্ববাসী। তিন বছর আগে করা এক গবেষণা বলছে, ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। অন্তত ২০০ কোটি মানুষ এতে নিহত হবে। পৃথিবীজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানবসভ্যতা। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত পর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধ হলেও বিশ্বের আবহাওয়ামণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়্যার এবং ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি নামে দুটি সংগঠন ২০১৩ সালে এই গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। সংগঠন দু'টি ২০১২ সালের এপ্রিলে গবেষণাটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ালে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। পরে ২০১৩ সালে গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’দেশের সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে চীনের ওপরে প্রভাবের বিষয়টি বাদ রেখেই তারা ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে যে কার্বন অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে সুদূর আমেরিকাতেও কমপক্ষে এক দশক সময় ধরে কৃষি উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে। এ কণার প্রভাবে চীনে প্রথম চার বছরে গড়ে ২১ শতাংশ ও পরের ছয় বছর আরও ১০ শতাংশ ধান, গমের উৎপাদন কমে যাবে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জনের পর কাশ্মীরের স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত অন্তত চারবার দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি যে কোনো সময়ে ফের যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে, যা পারমাণবিক যুদ্ধে পর্যবসিত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা মার্কিন পরমাণু বোমায় দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৬৬ বছর পরেও হিরোশিমা নাগাসাকি শহরের মানুষেরা তেজস্ক্রিয়তার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এখনো দেখা যায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গসহ নানা প্রকার রোগব্যাধী। তবে, সেই পরমাণু বোমার থেকে এখন পারমাণবিক বোমা আরও বেশি শক্তিশালী, আরও ভয়ঙ্কর। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ওই গবেষণায় বলা হয়, এখন কোনো পারমাণিবক যুদ্ধ মানেই তা মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শামিল। সূত্র: কলকাতানিউজ টোয়েন্টি ফোর
×