ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তাসকিন-সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৭ রানের জয় মাশরাফিদের, তীরে এসে তরী ডুবল আফগানদের

নাটকীয় জয় দিয়ে শুরু টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নাটকীয় জয় দিয়ে শুরু টাইগারদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফিরলেন তাসকিন আহমেদ, সেই ফেরাটা হলো দুর্দান্ত। বোলিং ত্রুটি কাটিয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যাচের শুরুর দিকে তাঁকে আচ্ছামতো পিটিয়েছিলেন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা। হাশমতুল্লাহ শহিদী ও রহমত শাহর জোড়া অর্ধশতকে জয়ের কাছাকাছি চলেও গিয়েছিল তারা। কিন্তু ৪৮ ও ৫০তম ওভারে তাসকিনের দুটি জোড়া আঘাতে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দিবারাত্রির প্রথম ওয়ানডেতে ৭ রানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১১ নবেম্বর ২০১৫ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬- সাড়ে ১০ মাসের লম্বা বিরতি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এই লম্বা বিরতি চোখ রাঙ্গাচ্ছিল। সেটাকে পেরিয়ে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জোড়া অর্ধশতকে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে তাসকিন ও সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে আফগানরা গুটিয়ে যায় ২৫৮ রানে। বছরের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে সেটাতেই জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। হারলেও দারুণ খেলে সবার মন জয় করেছে সহযোগী সদস্য দেশ আফগানিস্তান। একটা সময় মনেই হচ্ছিল হারতে বসেছে বাংলাদেশ- তাই দর্শকরাও মাঠ ছাড়তে শুরু করেছিলেন। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ওপেনার সৌম্য সরকার (০) ইনিংসের পঞ্চম বলেই পেসার দৌলত জাদরানের শিকারে পরিণত হন। অবশ্য ভীতিকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি তামিম ও ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। তামিমের ১৫ রান দরকার ছিল প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ হাজার রান করতে। যদিও ব্যক্তিগত ৩০ রানে সহজ একটি ক্যাচ দিয়েছিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সে যাত্রা বেঁচে গিয়ে ক্যারিয়ারের ৩৩তম অর্ধশতক হাঁকান। আগেই ফিরে গেছেন দারুণ খেলতে থাকা ইমরুল। ৫৩ বলে ৬ চারে ৩৭ রান করে তিনি মোহাম্মদ নবীর অফস্পিনে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তামিম তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে আরও ৭৯ রানের জুটি গড়েন। ১১ নবেম্বর বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডেতে তামিম (৭৩) ও মাহমুদুল্লাহ (৫২) দুজনই অর্ধশতক পেয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে। আবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন দুজন- হাঁকালেন টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক। তামিম ৯৮ বলে ৯ চারে ৮০ রান করেন। মাহমুদুল্লাহ ছক্কা দিয়ে শুরু করে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৩৩ বলে ৪০ রানের দ্রুতগতির জুটি গড়েন। ক্যারিয়ারের ১৫তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৭৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রান করে আউট হন মাহমুদুল্লাহ। এরপরই বিপর্যয়- টেলএন্ডাররা চরমভাবে ব্যর্থ হন। মুশফিকুর রহীম (৬) ও সাব্বির রহমান (২) এ দুজনকেই শিকার করেন আলোচিত লেগস্পিনার রশিদ খান। শেষ ৬২ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফলে খুব বড় স্কোর হয়নি। ফিরতি স্পেলে জাদরান পরিণত হন জাঁদরেল বোলারে। আগে এক উইকেট নেয়া এ পেসার ফিরতি স্পেলের ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। শিকার করেন ৪০ বলে ৩ চারে ৪৮ রান করা সাকিবকেও। ৫০ ওভারে ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে ওয়ানডেতে এত বেশি রান তাড়া করে হারাতে পারেনি আফগানরা। ২০১৪ সালের ২২ জুলাই বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ২৬১ রান তাড়া করে ২ উইকেটে জিতেছিল তারা। এটিই ছিল তাদের বড় কোন দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার রেকর্ড। তবে আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে একই বছর ২৭৩ রান তাড়া করেও জিতেছিল তারা। ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু দিয়েছিলেন মোহাম্মদ শাহজাদ ও শাবির নূরী। যদিও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এসে তাসকিন প্রথম বলটি ওয়াইড দেয়ার পরের বলেই শাহজাদকে পরাস্ত করেছিলেন এবং স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে ইমরুল সেটা ফেলে দেন। এরপর ২১ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করার পর মাশরাফি বিন মর্তুজা তাকে শিকার করে স্বস্তি আনেন। পরের ওভারেই নূরীকে এলবিডব্লিউ করে দলকে নিয়ন্ত্রণ এনে দেন সাকিব। এরপর আর বাংলাদেশী বোলারদের পাত্তা দেননি রহমত শাহ ও হাশমতুল্লাহ শহীদি- গড়ে তোলেন ১৪৪ রানের বিশাল জুটি। তৃতীয় উইকেটে যা আফগানদের নতুন রেকর্ড। এর আগে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে অবিচ্ছিন্ন ১০৪ রানের জুটি গড়েছিলেন আফসার জাজাই ও নাসির জামাল। রহমত ও হাশমত উভয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পান। জয়ের স্বপ্নটা ভালভাবেই দৃঢ়তা পায় আফগানিস্তানের। তাসকিন ছিলেন একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। মাশরাফি-সাকিব ছাড়া আর কোন বোলার বিন্দুমাত্র প্রভাব খাটাতে পারেননি। ৪০তম ওভারের শেষ বলে হাশমত ব্যক্তিগত ৬৩ রানে তাইজুলের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন, মাহমুদুল্লাহ ফেলে দেন। তবে পরের ওভারেই সাকিব স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন ৯৩ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৭১ রান করা রহমতকে। এই উইকেট শিকারের মাধ্যমে টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটের পর ওয়ানডেতেও (২০৮) সর্বাধিক উইকেটের মালিক হয়ে যান সাকিব। পেছনে ফেলেছেন বাঁহাতি আব্দুর রাজ্জাককে (২০৬)। দুই ওভার পরেই ১১০ বলে ৬ চারে ৭২ করা হাশমতকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। তবে মোহাম্মদ নবী ২৪ বলে ৩ চারে ৩০ রান করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিলেন। পুরো ম্যাচে নিয়ন্ত্রণহীন তাসকিন ৪৮তম ওভারে এসে স্বরূপে ফিরে শিকার করেন নবী ও আসগর স্ট্যানিকজাইকে। এতেই জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয় আফগানদের। শেষ ওভারে তিনি আরও দুটি উইকেট শিকার করলে ২৫৮ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। তাসকিন ৫৯ রানে চারটি এবং সাকিব ১০ ওভারে ২৬ রানে ও মাশরাফি ১০ ওভারে ৪২ রানে দুটি করে উইকেট নেন।
×