ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাইফুল হক মিঠু

নিরামক গান

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিরামক গান

ব্যক্তি জীবনের সুখ-দুঃখ যে কোন অনুভূতিতে হৃদয় হতে উৎসারিত হয় গান। কারণ সুরের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে বাঁধা পড়েছে মানুষের মন। সে ছোট হোক কিংবা বৃদ্ধ, গানের প্রেমে মজেননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তবে সকলেই সব ধরনের গান পছন্দ করে তা কিন্তু নয়। একেক জন মানুষের একেক রকম গান পছন্দ। কারও হয়ত রোমান্টিক গান পছন্দ, কারও হয়ত লাউড মিউজিক, কারও হয়ত ক্লাসিক্যাল গান। তবে এই গান সম্বন্ধে এমন কিছু আজব তথ্য আছে যা শুনে অনেকেই হয়ত তাজ্জব হয়ে যেতে পারেন। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সেই আজব তথ্যগুলো- প্রশান্তির জন্য গান বলা হয় গানে বাঁচে প্রাণ। শরীরকে চনমনে এবং মনকে সুন্দর রাখতে গান অপরিহার্য। এছাড়া রোগ নিরাময়ে মিউজিক থেরাপি বহুল ব্যবহৃত। নিয়মিত ২৫ মিনিট গান শুনলে ব্যাক পেইন অন্যত্র পাড়ি জমায়, পাওয়া যায় প্রশান্তির ঘুম, এমনটাই মত চিকিৎসকদের। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার এক কলেজ হ্যাম্পডন-সিডনির এক দল গবেষকদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে গান নিয়ে এমন সব চমকপ্রদ তথ্য। শরীরচর্চায় গতি আনে গান ক্লান্তি দূর করতে গানের অবদান অনস্বীকার্য-এমনটাই বিশ্বাস করেন যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। সাইক্লিং, চিন আপসহ অনেক কষ্টসাধ্য ব্যায়াম নির্বিঘেœ সারতে পারেন শুধু মাত্র গান শুনেই। ব্যায়ামে সহনশীলতা বৃদ্ধি, চনমনে মেজাজ পেতে গান টনিকের মতো কাজ করে। যোগ ব্যায়াম, ইয়োগায় বিভিন্ন ধরনের ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীতের আয়োজন এই ধরনের শরীর চর্চায় ভিন্নমাত্রা আনে। রোগ নিরাময়ে মিউজিককে বলা হয় সর্বরোগের ওষুধ। হাজার বছর আগেই রোগ নিরাময়ে সঙ্গীতের প্রচলন শুরু করেন গ্রীকরা, এছাড়া তুর্কী অটোম্যান সময়কালে মানসিক ব্যাধি সারাতে রোগীকে বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের সুর শোনানো হতো। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ্রেশন, ঘুমে জড়তা এবং স্মৃতি লোপ প্রভৃতি অসুখ সারাতে মিউজিক থেরাপী বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়। একদল গবেষক মনে করেন সঙ্গীত ক্যান্সার রোগীর যন্ত্রণা উপশম করতে পারে। গান মূলত মস্তিষ্কের পেশীসমূহকে স্বাভাবিক রাখে, এছাড়া মস্তিষ্কের মটোর-কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রণে রাখে তাই অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ফলে লোপ পাওয়া বাকশক্তি ফিরে পেতে এবং পার্কিন্সস (মস্তিষ্কের রোগ) রোগ থেকে ধীরে ধীরে আরোগ্য লাভ করতে গান দারুণ কাজ করে। শিশুর বিকাশে উন্নতবিশ্বে ডাক্তাররা গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত গান শোনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভবতী মা শুনলে মূলত দুটি উপকার পাওয়া যায়, একে তো তিনি হাসিখুশি এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকেন, দুই মেলেডিয়াস সঙ্গীতে অনাগত শিশুর ঘুম ভাল হয়- উল্লেখ্য, মাতৃগর্ভে ২৩ সপ্তাহ পার করলেই পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় থাকা অনাগত শিশু শুনতে পায়। গর্ভবতী মা একটি সুস্থ শিশুর জন্মদান করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে কাজের ফাকে গান শুনেন না এমন মানুষ পাওয়া বিরল। কাজের সময় গান শুনলে সময়ের অপচয় হয় না- বরং কাজে ফোকাস হওয়া যায় এবং অনেক দ্রুত যে কোন কাজ শেষ করা যায়। পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে গান পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাঘাতে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে গান শুনার পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ জাগে, বৃদ্ধি পায় মনোযোগ এবং তাদের দক্ষতা বাড়ে। ব্যক্তিত্বের পূর্বাভাস আপনি কি ধরনের গান পছন্দ করেন তার ওপর ভিত্তি করে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এক ধরনের ধারণা পাওয়া যায়। এই যেমন ধরুন- - ব্লুজ ও জ্যাজ ভক্তরা উন্নত রুচির, উচ্চ আত্ম-সম্মানবোধ এবং সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করা হয়। - শাস্ত্রীয় গানের ভক্তরা অন্তর্মুখী, উন্নত রুচির, উচ্চ আত্ম-সম্মানবোধ এবং নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করে বলে মনে করা হয়। - অপেরা ভক্তরা ভদ্র, সৃষ্টিশীল এবং আভিজাত্যের অধিকারী। - পপ ভক্তরা পরিশ্রমী কিন্তু সে পরিমাণে সৃষ্টিশীল নয়, বহির্মুখী এবং আত্ম-সম্মানবোধ সম্পন্ন। গান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বেঁচে থাকার ফুয়েল। শারীরিক, মানসিকভাবে নিজেকে ফিট রাখতে গান শুনুন। প্রাত্যহিক কর্মচাঞ্চল্যতাকে রিলিফ দেয়ার এক মহাওষুধ হচ্ছে গান। মিউজিক ছাড়া একটা দিন কল্পনা করুন তো! মনে হবে জীবনটা একঘেয়ে, পানসে, যাচ্ছেতাই। কাজেই নিজের পছন্দমাফিক গান শুনুন। বিন্দাস থাকুন। আর গানের মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করতে একদম ভুলবেন না।
×