ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত জামায়াতের

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে  চক্রান্ত জামায়াতের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াত-শিবিরের অনুসারী ষড়যন্ত্রকারীরা কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কওমী আলেমরা। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কওমী শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কওমী আলেমরা এ অভিযোগ তুলে বলেছেন, রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী চক্র ও মওদুদীর দোসররা কখনোই কওমী মাদ্রাসার কোন উন্নতি চায় না। স্বীকৃতির বিষয়ে কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচ্য নয়। বেগম জিয়া স্বীকৃতির জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখন তো কেউ শর্তজুড়ে দেননি। এখন বিরোধিতার জন্যই কেবল কেউ কেউ বিরোধিতা করছে। স্বীকৃতি দিতে কারও চোখ রাঙানিকে পরোয়া না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী ও কওমী আলেমরা অভিযোগ করেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় হযরত আহমদ শফীর নামের ছদ্মাবরণে বেফাকের নাম ভাঙিয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতির ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে মুসল্লিদের সতর্ক থাকতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে কওমী শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদ বেশ কিছু কর্মসূচীও ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, জনমত তৈরির জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ, সেমিনার, মহাসমাবেশ, রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীলদের সঙ্গে যোগাযোগ কর্মসূচী। সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আরও ছিলেন মুফতি আবুল কাসেম, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইফী, মুফতি ইবরাহিম শিলাস্তানী, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, মাওলানা মাসউদুল কাদির, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মাওলানা আইয়ুব আনসারী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ গুলজার, মাওলানা আতাউর রহমান আরিফী, মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব প্রমুখ। পরিষদের সভাপতি মুফতি আবুল কাসেম বলেন, টানা আঠার দিন সারাদেশে সফর করে এ বিষয়ে আমরা সবার মতামত জানার চেষ্টা করেছি। দেখেছি কায়েমী স্বার্থান্বেষী ছাড়া সবাই সনদ জাতীয় স্বীকৃতি চান। কায়েমী কিছু স্বার্থান্বেষী জামায়াত-শিবিরের অনুসারী ষড়যন্ত্রকারী সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ হযরত আহমদ শফীর নামের ছদ্মাবরণে বেফাকের নাম ভাঙিয়ে কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে হীন ষড়যন্ত্র করে চলেছেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। কারা ষড়যন্ত্র করছেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী চক্র ও মওদুদীর দোসররা কখনোই কওমী মাদ্রাসার কোন উন্নতি চায় না। মুফতি আবুল কাসেম আরও বলেন, অনেক চড়াই উতরাইয়ের পর গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ জমিয়তুল ওলামার আয়োজনে এক লাখ আলিম, মুফতি ও ইমামের স্বাক্ষরসংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী শান্তি ফতোয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্পণ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত ওলামা সম্মেলনে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের আহ্বানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাসনদের স্বীকৃতিদানের যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতে কওমী শিক্ষাঙ্গণে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। স্বীকৃতি প্রদানের আশ্বাস ব্যক্ত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ কওমী মাদ্রাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের আট মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে স্বীকৃতি দিতে কিছু দাবিনামা উপস্থাপন করেন। যার মধ্যে আছে- কওমী মাদ্রাসার নেসাব ও নেযামে তালীমে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা চলবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা সম্পূর্ণভাবে অক্ষুণœ রাখতে হবে। মাদ্রাসার পরিচালনা পদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করা চলবে না। কওমী মাদ্রাসা কখনও এমপিওভুক্ত হবে না। কোন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রণয়ন করবে। প্রচলিত কওমী মাদ্রাসা বোর্ডসমূহ তাদের স্ব-স্ব বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। চলতি বছরের মধ্যেই স্বীকৃতিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কওমী নেতারা আরও বলেন, দেশজুড়ে পনেরো হাজারেরও বেশি কওমী মাদ্রাসা থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ শিক্ষা নিলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। ফলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এক দিকে যেমন রাষ্ট্রীয় অনেক ক্ষেত্রে সেবাদান থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে দেশও অনেক যোগ্যদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য ওলামায়ে কেরামরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসলেও এখনও তাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
×