ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঢাবি চারুকলার অঙ্কন বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঢাবি চারুকলার অঙ্কন  বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রং-তুলির আঁচড়ে প্রস্ফুটিত পুরনো ঢাকার সরু এক গলি। সঙ্কীর্ণ সড়কের দুই ধারে যেন দানবীয় আকৃতি নিয়ে দ-ায়মান বহুতল দুই ভবন। একটি ভবনের গ্রিল ও জানালায় ঝুলছে শুকাতে দেয়া সারি সারি কাপড়। এসবের ভেতরে থেকে নজরে পড়ে জড়াজড়ি করে থাকা বিদ্যুত, টেলিফোন ও ডিশ লাইনের তার। আরেক ছবিতে উদাম শরীরে এক জোড়া গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক কিশোর। শিল্পীর নিপুণ কুশলতায় একটি ক্যানভাসে চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হয়েছে পুরনো এক মোটরসাইকেল। একই নারীর তিন রকমের অভিব্যক্তি মেলে ধরা চিত্রকর্মটি যেন দর্শককেও তাড়িত করে ভাবনার জগতে। গাছ-গাছালিতে আবৃত খালের পাড়ে ভিড়ে থাকা নৌকার ছবিটি বলে যায় আবহমান গ্রাম বাংলার রূপময়তার কথা। নগর-গ্রামসহ যাপিত জীবনের দৃশ্যকল্পময় এমন অসংখ্য ছবি এখন শোভা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১ ও ২ নং জয়নুল গ্যালারিতে। এখানে চলছে চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সৃজিত শিল্পকর্মের বার্ষিকী প্রদর্শনী। রবিবার বিকেলে এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী এবং চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিসার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রদর্শনী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মাধ্যমের নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের জন্য ১০ নবীন শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়। সকল মাধ্যমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিবেচনায় গাবতলী ব্রিজ শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার পেয়েছেন শেখ ফয়জুর রহমান। পেন্সিল মাধ্যমে ব্রোকেন ট্র্যাডিশন শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন ভুটানের চারু শিক্ষার্থী উগেইন শেরিং। পেন্সিল মাধ্যমে ক্লোজআপ স্টাডি শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য শহীদ শাহনেওয়াজ স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন সৈকত সরকার। জলরং মাধ্যমে ওল্ড মোটরসাইকেল শীর্ষক শিল্পকর্মের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন প্রসুন হালদার। তেলরং মাধ্যমে ওল্ড টাউন শিরোনামের চিত্রকর্মের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মৃণাল বণিক। তেলরং মাধ্যমে এন্ডিং এক্সিসটেন্স শীর্ষক চিত্রকর্মের মাধ্যমে দেলোয়ার হোসেন স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন পুর্ণিয়া মৃত্তিকা। তেলরং মাধ্যমে ট্রেন শিরোনামের ছবির জন্য মাহবুবুল আমিন স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন জয়ন্ত ম-ল। ন্যারোনেস অব মাইন্ড শীর্ষক নিরীক্ষাধর্মী কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন আফিয়া আবিদা সুলতানা। এছাড়া নিরীক্ষাধর্মী কাজের জন্য পিপল এ্যারাউন্ড আস শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য কাজী আবদুল বাসেত স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন ইমতিয়াজ আলম এবং ফিলিংস শীর্ষক চিত্রকর্মের জন্য আনোয়ারুল হক স্মারক পুরস্কার পেয়েছেন সুনন্দা রানী বর্মণ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ব এখন আক্রান্ত জঙ্গীবাদের আগ্রাসী তৎপরতায়। এই জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে শিল্পীর সৃজিত শিল্পকর্ম। অনেক কথা বলেও যে কাজটি করা সম্ভব হয় না, একটি শিল্পকর্মের মাধ্যমে সেই কাজটি সম্ভব হয়ে ওঠে। শিল্পের মাধ্যমে সহজেই বার্তা ছড়িয়ে দেয়া যায় সাধারণের মাঝে। তাই রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি শিল্পচর্চার মাধ্যমেও জানাতে হবে জঙ্গীবাদের প্রতিবাদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, চারুকলা অনুষদ আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ববহ। এ প্রদর্শনীতে নির্বাচিত হওয়াটা একজন চারুশিক্ষার্থীর জন্য অনেক বড় বিষয়। এটা তাঁদের শিল্পী জীবনে প্রবেশের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। কে কতটা ভাল কাজ করছে সেটাও প্রমাণিত হয় এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে। কারণ, মানসম্মত কাজগুলো ঠাঁই পায় এ আয়োজনে। নিসার হোসেন বলেন, এবার প্রদর্শনীর জন্য আগের তুলনায় কম ছবি জমা পড়েছে। ফলে মনে হচ্ছে যেন শিক্ষার্থীদের কাজের উš§ুখতা কমে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর কাজ ভাল হয়নি। ফলে সংখ্যা না বাড়িয়ে মানসম্পন্ন ছবিগুলোই এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ৬১ জন চারুশিক্ষার্থীর শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শেষ ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উš§ুক্ত থাকবে। সাংস্কৃতিক সংগঠন দিয়াড় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ॥ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দিয়াড়’-এর পথচলার ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংগঠনটি রবিবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে আলোচনাসভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অনুষ্ঠান আয়োজনের সদস্য সচিব আনোয়ার হক। আলোচনায় অংশ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও অধ্যাপক এরতাজ উদ্দীন। স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আমিনুল ইসলাম । প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, দিয়াড়ের বয়স মাত্র ১ বছর। এ বয়সে একজন শিশু ঠিকমতো দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। কিন্তু এ অল্পদিনেই দিয়াড় রীতিমত দৌড়াচ্ছে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে অগ্রগতিটা ঠিক এরকমই দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার দেশজ সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে সচেষ্ট রয়েছে। আমাদের বাজেটের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এ লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সংস্কৃতিচর্চাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দিয়াড়ের মতো সংগঠনগুলো যারা আঞ্চলিক ও দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে দিয়াড়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে অধ্যাপক এরতাজ উদ্দীন আহমদকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে আদি গম্ভীরা দলের শিল্পীরা পরিবেশন করে গম্ভীরা গান।
×