ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা নিতে হবে ॥ জ্যেষ্ঠ বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিবিদ ইয়ং

ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে দরকার ১০ হাজার কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে দরকার ১০ হাজার কোটি ডলার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বসবাসের অযোগ্য’ নগরীর তকমা মিলেছে বহুবার। তবু একটুখানি ঠাঁইয়ের আশায় ঢাকাতেই ভিড় বাড়িয়ে চলেছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। গত ৪০ বছরে ১০ গুণ মানুষ রাজধানীর বাসিন্দা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ঢাকায় যেখানে লোকসংখ্যা ছিল ১৭ লাখ, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ। বর্ধিত এ জনগোষ্ঠীকে নাগরিক সুবিধা দিতে এবং পরিকল্পিত ঢাকা গড়তে আগামী ২০ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা) অনুযায়ী এর পরিমাণ ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে ‘নগর দারিদ্র্য : গবেষণা ও সমাধান’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে এ তথ্য জানানো হয়। পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে দেশ-বিদেশের শতাধিক নগর বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। শেষ দিনে পাঁচ অধিবেশনে নগর দারিদ্র্য এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। এতে সহযোগিতা করেছে বিশ্বব্যাংক এবং ইউএনডিপি। শেষ অধিবেশনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ইয়ং ওয়াং। এতে বলা হয়, অপরিকল্পিত এ ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়তে ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এর জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। বিপুল এ অর্থের সংস্থানের জন্য বিদেশী ঋণের সংস্থান করতে হবে। পাশাপাশি অর্থায়নের নিশ্চয়তায় নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রয়োজন পরিবহন খাতে। এ খাতের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। এর বাইরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে বড় অঙ্কের অর্থ দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এর আগে নগর দারিদ্র্য নিয়ে বিশদভাবে কোন গবেষণা কিংবা পরিকল্পনা করা হয়নি। ফলে নগর দারিদ্র্য প্রকট হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের ঢাকা গরিবদের নিয়ে গড়ে তোলা হবে না তাদের বাদ দেয়া হবে তা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকার কোন পরিকল্পনাতেই দরিদ্রদের আবাসন বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। নগর দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মেলনের সুপারিশগুলো শীঘ্রই সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সেক্টর ম্যানেজার মিং জাং বলেন, রাজনীতিকদের মানুষের চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ করে নীতি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের নগর দারিদ্র্য দূরীকরণে সব দিক বিবেচনা করে নীতিমালা তৈরি করে কাজ করা প্রয়োজন। যেখানে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের মতো প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এ অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা, বিবিএসের ভারপ্রাপ্ত সচিব বিকাশ কুমার দাশ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদনান মোরশেদ, ইউএনডিপির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর নিক বারেস ফোর্ড ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি মাইক রবসন। সমাপনী দিনে মোট পাঁচ অধিবেশনে নগর দারিদ্র্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং নীতি সমস্যা। এ অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী এবং অর্থনীতিবিদ ড. সাজ্জাদ জহির। একটি অধিবেশনে নগর দরিদ্রদের জন্য উপযোগী আবাসন বিষয়ে আলোচনা হয়। নগর দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশনে দুটি কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আন্তা ও’ ডনেল, ইউএনডিপির নগর কর্মসূচী বিশেষজ্ঞ আশেকুর রহমান। তৃতীয় অধিবেশনে নগর দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উগো জেনটিলিনি প্যানেল। চতুর্থ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক। এতে নগর স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা হয়।
×