ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জরাজীর্ণ কক্ষেই পাঠদান

গফরগাঁওয়ে স্কুল সংস্কারের টাকা কর্মকর্তার পকেটে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গফরগাঁওয়ে স্কুল সংস্কারের টাকা কর্মকর্তার পকেটে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, ২৫ সেপ্টেম্বর ॥ গফরগাঁওয়ে ২৩৯ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কার ও মেরামত (মাইনর ক্যাটাগরি ও রুটিন মেনটেনেন্স, পরিবেশ কার্যক্রম, টয়লেট মেরামতকরণ) কাজের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের রাজস্ব, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৩) ও সিøপ কার্যক্রমের বরাদ্ধ থেকে প্রতি অর্থবছরে প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বেশিরভাগ প্রকল্পের কোন কাজ হয় না। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা এলজিইডির এক শ্রেণীর কর্মকর্তা নামমাত্র কাজ দেখিয়ে পুরো প্রকল্পের টাকা পকেটে ভরছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, পিইডিপি-৩-এর আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গত ২২ এপ্রিল উপজেলার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুটিন মেনটেনেন্স কাজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে কাজটি করার কথা। গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে সব স্কুলে রুটিন মেনটেনেন্স কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম তার এ্যাকাউন্টে জমা করেন। বাস্তবে কোন স্কুলে কোন কাজ হয়নি। গত তিন মাসেও এ বরাদ্দের বিপরীতে কোন স্কুলে একটি টাকাও দেয়া হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপজেলার উস্থি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের পাঠ উপযোগী সংস্কারকাজের জন্য দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখের মধ্যে কাজটি সম্পাদন করার কথা ছিল। ওই অর্থবছরের জুন মাসে কাগজে-কলমে কাজটি সম্পাদন দেখিয়ে উপজেলা এলজিইডির কাজ সম্পাদনের প্রত্যয়ন ও ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে বরাদ্ধকৃত টাকা উত্তোলন করে নিজ এ্যাকাউন্টে রাখেন ওই সময়ের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, পরে টাকা দেয়া হবে। গত দুই বছরেও স্কুল কর্তৃপক্ষকে টাকা দেয়া হয়নি। ওই স্কুলের শ্রেণীকক্ষ পাঠ উপযোগী সংস্কার করা যায়নি। ওই স্কুলের শিক্ষিকা মুর্শিদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বরাদ্দ পেয়েও সংস্কারকাজ করতে না পারায় আমাদের জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। সরেজমিন চরমছলন্দ কালীবাড়িরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের আওতায় ওই বিদ্যালয়ের সংস্কারকাজের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্ধ হলেও নামমাত্র কয়েক হাজার টাকার কাজ করে পুরো টাকা উত্তোলন করে ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা এলজিইডি অফিসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা। উপজেলার পাইথল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কাউছার আকন্দ, ধোপাঘাট উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন খানসহ অর্ধশতাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, রুটিন মেনটেনেন্সের পাঁচ হাজার করে টাকা আমাদের না দেয়ায় স্কুলগুলো গত বর্ষায় ড্রেন পরিষ্কার, নলকূপ মেরামত, ওয়াশরুম ও টয়লেটের জিনিসপত্র ক্রয়সহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারে নাই। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রুটিন মেনটেনেন্সের মাত্র পাঁচ হাজার করে টাকা নিতে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা ইচ্ছুক নয়, এজন্য এতদিন কাজটি করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা দোষেগুণে মানুষ, কাজ করলে বুল তো হবে। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিস ভাল বলতে পারবে। আমাদের কাছে সিøপ এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্বাক্ষর করে তাদের দিয়ে দেই। এখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। এটা শিক্ষা অফিসের বিষয়।
×