ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ বিদ্যুত গ্রাহকের বিল বৈধদের ঘাড়ে

মিটার রিডাররা বেপরোয়া ॥ চট্টগ্রামে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয় না

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মিটার রিডাররা বেপরোয়া ॥ চট্টগ্রামে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয় না

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না কর্তৃপক্ষ। উল্টো বৈধ ব্যবহারকারীদের বিলে তুলে দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ইউনিট। চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলাসহ আরও তিনটি পার্বত্য জেলার মোট ২০টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া গ্রাহকদের বিদ্যুত বিলে চলছে এ ধরনের অনিয়ম। তবে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিদ্যুত অফিসে ধরনা দিলেই বিল কমে যায়। আবার মিটার রিডারদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ না রাখলে ভুতুড়ে বিল চাপিয়ে দেয়া হয় গ্রাহকের ঘাড়ে। অপরদিকে শনিবার নির্বাহী আদেশের বিপরীতে কার্যদিবস থাকলেও দুপুরে বাকলিয়া ও ষোলশহর বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলীদের টেলিফোনে কল করা হলে কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তবে অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ দুই নির্বাহী প্রকৌশলী শনিবার দফতরে ছিলেন না। তাদের কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় অন্য কেউ টেলিফোন রিসিভ করতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুত বিল নিয়ে জালিয়াতি ও কারসাজি করা হচ্ছে। অবৈধদের পক্ষে বিদ্যুতের লাইনম্যান, মিটার রিডার ও প্রকৌশলীরা। লাইনম্যানরা দিচ্ছে অবৈধ সংযোগ আর মিটার রিডাররা দিচ্ছে বিলে অতিরিক্ত রিডিং ইউনিট। মিটারে ২শ’ ইউনিটে রিডিং থাকলে সেখানে দেয়া হচ্ছে ৫/৬শ’ ইউনিট। নগরীতে থাকা পিডিবির ১৩টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগেই চলছেই লাইনম্যান, মিটার রিডার ও প্রকৌশলীদের অনিয়ম। অনিয়ম, দুর্নীতিসহ মিটার রিডারদের কারসাজির কারণে অতিরিক্ত অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। শুধু খুলশীই নয়, বাকলিয়া ও হালিশহরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং তিন পার্বত্য জেলাসহ ২০টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ কানে তুলছে না চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলীরাও। আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীরা লাইনম্যান ও মিটার রিডারদের মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা, উপজেলাসহ নগরীর ২০টি বিক্রয় কেন্দ্রের গ্রাহকদের পক্ষ থেকে মিটার রিডারদের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির মূলে রয়েছে উর্ধতন কর্মকর্তাদের পকেট ভারি করার নানা কৌশল। টার্গেট দেয়া হচ্ছে মিটার রিডারদের প্রতিমাসের রিডিংয়ের ওপর। অবৈধ সংযোগ পরিচালনা করতে গিয়ে মিটার রিডাররা বৈধ সংযোগ গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত বিলের বোঝা। গ্রাহকের বিলের তথ্য থেকে পাওয়া গেছে, বাকলিয়া এলাকার আবাসিক গ্রাহক নং-২৫৪১৩৩৫৮। আগস্ট মাসের বিল নং-১৯২৯৪৩৭, সিডি-৫৫। এই বিলে গ্রাহক গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩১৬০ ইউনিট থেকে ৩২৫০ ইউনিট পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ৯০ ইউনিটের বিল। অথচ ২৩ সেপ্টেম্বর মিটারে রিডিং রয়েছে মাত্র ২৭৮৭ ইউনিট। যা ব্যবহৃত রিডিংয়ের তুলনায় ৪৬৩ ইউনিট বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, গ্রাহক সচেতন না হলে এবং মিটারের রিডিং সম্পর্কে জ্ঞাত না হলে পিডিবির ধুরন্ধর দুর্নীতিবাজদের কাছে ধরাশায়ী হতো। এদিকে, ষোলশহর এলাকার আবাসিক গ্রাহক নং-২৪১৭২৩৪৪। আগস্ট মাসের বিল নং-১৯৩৪০৯৫, সিডি-৪১। এই বিলে গ্রাহক গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৭৮৫০ ইউনিট থেকে ৮০৮০ ইউনিট পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ২৩০ ইউনিটের বিল। অথচ ২৩ সেপ্টেম্বর মিটারে রিডিং রয়েছে মাত্র ৭৮৫২ ইউনিট। যা ব্যবহৃত রিডিংয়ের তুলনায় ২২৮ ইউনিট বেশি। তবে গত একমাস ধরে এই ঘরে কোন ভাড়াটিয়া নেই। তবে শূন্য ইউনিটের বিল ১১৬ টাকা হবার কথা। একই এলাকার আবাসিক গ্রাহক নং ২৪১৭২৩৫৯, বিল নং-১৯৩৪০৯৫, সিডি-৫৫। এই বিলে গ্রাহক গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ১০৯২০ ইউনিট থেকে ১১২৫০ ইউনিট পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ৩৩০ ইউনিটের বিল। অথচ ২৩ সেপ্টেম্বর মিটারে রিডিং রয়েছে মাত্র ১০৫৭৮ ইউনিট। যা ব্যবহৃত রিডিংয়ে তুলনায় ৬৬২ ইউনিট বেশি। খুলশী এলাকার বাণিজ্যিক গ্রাহক নং-২২৯৫৪৬১৩, বিল নং-১৯১২৯২৮, সিডি-৬৫। এই বিলে গ্রাহক গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ১৩৭০ ইউনিট থেকে ১৪২৫ ইউনিট পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন ৫৫ ইউনিটের বিল। অথচ ২৩ সেপ্টেম্বর মিটারে রিডিং রয়েছে মাত্র ৯৪০ ইউনিট। যা ব্যবহৃত রিডিংয়ে তুলনায় ৪৬৫ ইউনিট বেশি। অথচ এ মিটারটিতে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ইউনিট ব্যবহার হয় প্রতিমাসে। এ ব্যাপারে খুলশী বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমাম হোসেন জানান, আগে মিটার রিডার কম ছিল। এখন কিছু রিডার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না। অবৈধ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে লাইনম্যান ও রিডারের সখ্যতা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি আমার জানা নেই। তবে খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×