ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হামলাকারীদের শাস্তি হবেই

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হামলাকারীদের শাস্তি হবেই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার তার মাসিক রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’ এ দেয়া জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তিনি বলেন, এই হামলার জন্য দায়ীদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে। গত সপ্তাহের ওই হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। মোদি কাশ্মীরী জনগণের উদ্দেশে বলেন, কাশ্মীরী জনগণকে রক্ষা করা ভারত সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং আমাদের জনগণ যেন শান্তিতে থাকতে পারে সেজন্য উরির মতো হামলা সেনাবাহিনী সবসময়ই ব্যর্থ করে দেবে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির। উরির সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গী হানায় ১৮ সেনার মৃত্যুর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার দাবি প্রবল হয়েছে গোটা দেশে। বিজেপি ও সংঘ পরিবারের একাংশও সেই পথে চলার পক্ষপাতী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে মোদি বিলক্ষণ বুঝছেন, জনসভায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলা এক জিনিস, আর ময়দানে নেমে তাদের মোকাবেলা করা আর এক জিনিস। তাই উরি হামলা, পাকিস্তান নীতি, সব কিছু নিয়েই চাপের মধ্যে রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কেরলের কোঝিকোড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখালেও এই মুহূর্তে মোদি রীতিমত অগ্নিপরীক্ষার সামনে। মোদি তার ‘মন কি বাত’ দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে রেডিও ভাষণে বলেন, সম্প্রতি উরিতে এক সন্ত্রাসী হামলায় আমাদের ১৮ সাহসী জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। এই ধরনের একটি কাপুরুষোচিত হামলা দেশে আলোড়ন সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ছিল। আর আমি নিশ্চিত যে আমাদের সৈন্যরা ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘৃণ্য হামলা ব্যর্থ করতে থাকবেন। তিনি বলেন, উরি হামলায় শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাই। সেনাবাহিনীর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে এবং হামলাকারীরা শাস্তি পাবেই। জওয়ানদের জন্য আমরা গর্বিত। সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা কথা বলে না। তাদের সাহসিকতাই কথা বলে। মোদি তার ভাষণে কাশ্মীর প্রসঙ্গে বলেন, আমি আজ কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কাশ্মীরীরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চান। তাই তারা এখন দেশবিরোধীদের চিহ্নিত করা শুরু করেছেন। তিনি কাশ্মীরীদের আশ্বস্ত করে বলেন, কাশ্মীরের মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রের। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই জানি যে, শান্তি ও ঐক্যই আমাদের সাফল্যের মূলমন্ত্র এবং একমাত্র এর মাধ্যমেই আমরা সব সমস্যার সমাধান করি। মোদি বলেন, কাশ্মীরী জনগণ শান্তি ও প্রবৃদ্ধির পথ অবলম্বন করেছে। বাবা মায়েরা চান, কাশ্মীর অশান্তি শেষ হোক, দ্রুত চালু হোক ছেলেমেয়েদের স্কুল, কলেজ। কাশ্মীরীরা চান, তাদের খাদ্য ও ফলমূল পৌঁছে যাক পুরো দেশের বাজারে। ব্যবসা-বাণিজ্য মসৃণভাবে চলুক। কাশ্মীরী জনতার প্রতি তার আহ্বান, শান্তি, সম্প্রীতি ও সংহতির মাধ্যমেই সমস্যা মেটাতে হবে, উন্নয়নের পথ ধরে এগোতে হবে সবাইকে। ব্রিটেনের উদ্বেগ ॥ উরিতে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ব্রিটেন। পিটিআই ও এনডিটিভি জানিয়েছে, পাকিস্তানে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার টমাস ড্রিউ শনিবার বলেছেন, উরিতে হামলার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত। তাই ব্রিটেন চায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এ উত্তেজনার অবসান হোক। ড্রিউ পাক পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাত করে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে যে কোন বিদেশী আগ্রাসনের মুখে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে চীন। এমনকী কাশ্মীর ইস্যুতেও পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। শাহবাজ শরীফের সঙ্গে লাহোরে ভারতের কনসাল জেনারেল ইউ বোরেনের একটি বৈঠকে এই বার্তা দেয়া হয়েছে বেজিংয়ের তরফে। পাঞ্জাব অফিসের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে বোরেন জানিয়েছেন, যে কোন বিদেশী আগ্রাসনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন জানাবে। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে আমরা আছি, থাকবও। ভারতের দখলে থাকা কাশ্মীরে নিরস্ত্র কাশ্মীরীদের ওপর অত্যাচারের কোন যুক্তি, বৈধতা নেই এবং কাশ্মীরীদের আশা-আকাক্সক্ষাকে মর্যাদা দিয়েই কাশ্মীর বিতর্কের সমাধান হওয়া উচিত।
×