ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝাড়ুদার যখন ডাক্তার!

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঝাড়ুদার যখন ডাক্তার!

সফদার ডাক্তারের কথা আমরা শৈশবে জেনেছি মিষ্টি একটি ছড়ার মাধ্যমে। হাতুড়ে এই ডাক্তারের বিচিত্র সব কর্মকা- এক সময় আনন্দ যুুগিয়েছে শিশুতোষ মনে। মজার সেই ছড়ার পরিণতি যে কত মর্মান্তিক হতে পারে, এবার তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর আগের দিন ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিপ্লব ম-ল নামের এক তরুণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হন ঢামেক হাসপাতালে। স্বজনদের ভাষ্যে জানা যায়, আহত যুবক মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তবে পরদিন অপরাহ্নে অকস্মাত তার অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার ডাকতে যান জরুরী বিভাগে। সে সময় সুমন নামের এক ব্যক্তি গলায় স্টেথেসকোপ ও হাতে অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে চিকিৎসা দিতে আসেন বিপ্লবকে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীর স্বজনরা ইনহেলার ইনজেকশন এনে দিলে সুমন নিজেই তা দেয় রোগীকে। দেয়া হয় অক্সিজেনও। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তরতাজা তরুণটি। বিপ্লবের স্বজনদের অভিযোগ, কিছুক্ষণ আগে সুমনকেই তারা ঝাড়ু হাতে দেখেছেন হাসপাতালের মেঝেতে। পরে সুমনকে ধরে উত্তেজিত স্বজন ও জনতা গণপিটুনি দিলেই বেরিয়ে পড়ে থলের বিড়াল। আসলে সুমন ডাক্তার তো দূর অস্ত, ঢামেকের কোন কর্মীই নয়। মূলত সে বহিরাগত তথা দালাল। সরদার জাতীয় এক ওয়ার্ডমাস্টারের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে ঢামেক হাসপাতালে। তথাকথিত সেবার বিনিময়ে তারা অর্থ আদায় করে থাকে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে। মূলত রোগীদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করাই এদের কাজ। যেটা আশ্চর্যের তা হলো, ঘটনার আগে-পরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্স কাউকেই পাওয়া যায়নি। ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় দিয়ে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। তারপর ব্যবস্থা নেয়ার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হলেও তা কোনদিন আলোর মুখ দেখবে কি-না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে শুধু ঢামেকেই নয়, ঝাড়ুদার তথা দালালদের উৎপাত-উপদ্রব ছড়িয়ে আছে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালসহ সর্বত্রই। তাদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ে প্রাইভেট ক্লিনিকেও। তবে সংগঠন ও দলবাজির কারণে সরকারী হাসপাতালগুলোতে তাদের আধিপত্য বেশি। আর এক্ষেত্রে ঢামেকই রয়েছে পয়লা নম্বরে। এর দু’দিন আগে এই হাসপাতাল থেকে চুরি হয়ে গেছে সদ্যজাত এক শিশু, যার খোঁজ মেলেনি এখনও। এরা এতটাই শক্তিশালী ও সক্রিয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহজে কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস পায় না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। যখন-তখন ধর্মঘট ডেকে একেবারে অচল করে দিতে পারে হাসপাতালের সব কার্যক্রম। দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রোগ ও রোগী অনুপাতে প্রশিক্ষিত ডাক্তারও কম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাব প্রকট। নার্স-আয়া, ওষুধপত্রসহ সার্জারি ও সেবার ব্যবস্থা প্রশস্ত নয়। এ অবস্থায় হাতুড়ে ডাক্তার এবং দালালদের উৎপাত বাড়বে অনিবার্য। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কঠোর হলে এই উৎপাত-উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব নিশ্চয়ই। আমরা বিপ্লব ম-লের অকালমৃত্যুতে স্বজনদের জানাই গভীর সমবেদনা এবং দাবি করি ঘটনার যথাযথ তদন্ত।
×