ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও দিকনির্দেশনার জরুরী দিক

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও  দিকনির্দেশনার জরুরী দিক

প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়ে এখন আর বিরোধী দলও বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। একটা সময় ছিল যখন সফরের ব্যাপারে সরকারী টিভি একা ঘণ্টা পেটালেও মানুষ তা বিশ্বাস করত না। সরকারপ্রধান কোন দেশে গেলে না আসা পর্যন্ত একটানা প্রচার চলত। আর ফিরে আসার পর চলত সাফাল্যের কল্পিত জয়গাথা। সেদিন এখন গত। এখন দুনিয়া মানুষের হাতের মুঠোয়। মোবাইলে, কম্পিউটারে চলমান দুনিয়া। সে জায়গায় মানুষকে বোকা বানানোর কোন সুযোগ নেই। ফলে আজ যা ঘটে বা যা হয় তাকে ঢাকা দেয়ার কোন সাধ্য নেই কারও। সে উদ্ভাসে শেখ হাসিনাকে পরাস্ত করার জায়গা নেই। সেটা জেনেই বিরোধীদের মুখ বন্ধ। সম্প্রতি সফরে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলাপ আর বাংলাদেশের সম্মান দেখেছি আমরা। কিন্তু বাংলাদেশের বড় সমস্যা তার ভেতরের মানুষদের নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হবে কোন্ সুখে? মিডিয়ায় দেখেছি আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সভা থেকে তিনি চলে আসার পরপরই নিজেদের ভেতর মারামারি আর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগারদের ছবি। মন খারাপ করা এই গল্প নতুন কিছু নয়। বলব সময় পার হয়ে যাচ্ছে এদের বাগে আনবার। আওয়ামী লীগের সঙ্কট জনগণের ভেতরে নয়, তাদের সমস্যার উৎস ও কেন্দ্রবিন্দু তাদের দলের ভেতর। আমি আজ সিডনিসহ সারা বিশ্বের এমন উপদ্রবের কথা বলব। শুরুতেই বলি বিদেশে দেশের রাজনৈতিক দলের শাখা-প্রশাখা থাকার ব্যাপারটা অবিতর্কিত কিছু নয়। না থাকলেও চলে। ভারত, পাকিস্তান বা প্রতিবেশী কোন দেশের বেলায় যেমন শাখা দেখা যায় না। তবে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ ভিন্ন। স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রয়ে গেছে, যারা সুযোগ পেলেই আমাদের দেশের অস্তিত্ব ও সম্ভাবনা বিনষ্টে মাঠে নেমে যায়। নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার এবং শাস্তির ব্যাপারে কঠোর হওয়ার পর আমরা দেশের চাইতে বিদেশেই এদের আস্ফালন দেখেছি বেশি। দেশে দেশে লবিং করে তারা এমন সব কা- ঘটিয়েছে বা ঘটাতে চেয়েছে যাতে বিচার বন্ধ হয়ে যায়। বিধাতার পরম আশীর্বাদ আর সময়ের কারণে তা হয়নি। জন কেরির ফোনকেও মোকাবেলা করেছেন আমাদের নেত্রী। এত সব ঘটনার সময় কি করেছে বিদেশের আওয়ামী লীগাররা? সিডনির আওয়ামী লীগের নেতারা কি মাঠে নেমেছিলেন? না অন্য কোন দেশের আওয়ামী লীগ পেরেছে এর যোগ্য উত্তর দিতে? অথচ প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও তারা সামান্য সৌজন্য বা সহযোগিতা বজায় রাখতে পারেন না। আমি যা দেখি তাতে মনে হয় বিদেশে আগত মন্ত্রী-এমপি বা সরকারী দলের লোকদের সম্মানের নামে পার্টি আর নিজেদের ফায়দা হাসিলই যেন মূল কাজ। নেত্রী হয়ত জানেন না বহুদেশে এদের মূল টার্গেটও আওয়ামীঘেঁষা জনগণ বা প্রবাসীরা। আমাদের এখানে অন্তত তাই। এরা কখনও প্রকৃত আওয়ামী লীগার বা বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের সঙ্গে থাকে না, তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে না। মর্জিমাফিক একদা বিএনপি বা বঙ্গবন্ধুকে মানেন না এমন লোক নিয়ে অনুষ্ঠান করে থাকে এরা। কেউ কিছু বলে না। বলার কারণও থাকে না। প্রান্তিক হোক আর ব্যাপক হোক বিদেশে এদের ধার না ধারলেও চলে সকলের। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের বা স্বাধীনতার চেতনায় পথ চলেন, যারা দূর দেশে জামায়াতের অনাচার, বিএনপির আক্রোশ থেকে দেশের মঙ্গল কামনা করেন তাদের সঙ্গে এদের দূরত্ব এখন চোখে পড়ার মতো। আমার এক বিজ্ঞ বন্ধু বলেন, অর্ধ উন্মাদ বা ধান্দাবাজ না হলে নাকি প্রবাসে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যায় না। কথাটা যে কি পরিমাণ সত্য সেটা আমরা নিউইয়র্কের ঘটনাতেই দেখলাম। প্রধানমন্ত্রী জানেন কিনা জানি না, বিদেশে আওয়ামী লীগ করা মানুষ সমাজেও তেমন পপুলার নয়। আগে যারা আওয়ামী লীগ করতেন বা করেছিলেন তাদের প্রতি মানুষের এক ধরনের শ্রদ্ধাবোধ ছিল। সম্প্রতি প্রয়াত নূরুল আজাদ ছিলেন এখানকার আওয়ামী লীগের গোড়ার দিকের নেতা। তিনি এ দলটির দেখভাল করতেন পরম মমতায়। তার বাণিজ্য বুদ্ধির পাশাপাশি সংস্কৃতিবোধের কারণেই এই শহরে প্রথম মুদ্রিত একটি বাংলা কাগজ চালু হয়েছিল। সেই স্বদেশ বার্তা আজ নেই। নূরুল আজাদও আর নেই। সে আওয়ামী লীগও আর নেই। আমরা পরম বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি কারণে-অকারণে স্ববিরোধিতা আর আমাদের মতো মানুষের বিরুদ্ধাচরণ ছাড়া এদের যেন আর কোন কাজ নেই। এ চিত্র দুনিয়ার সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাই আমাদের চাওয়া নানা নেতার মত ও পথের আওয়ামী লীগারদের আপনি হয় এক পতাকাতলে আনুন, নয়ত এর একটা বিহিত করুন। কারণ এখন সুসময় বলে যারা এগুলো ঘিরে আছে আবার কোন দুঃসময়ে এদের নাও দেখতে পারি আমরা। তখন দেশের বাইরে বিদেশে শক্তির প্রয়োজনীয়তা পড়লেও কোন কূল-কিনারা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ করতে আসা মানুষ সব সময় নানাবিধ ও বিচিত্র। ইতিহাসের সেরা ও বড় দল বলে এর শাখা-প্রশাখা কা-ও প্রকা-। কিন্তু কা- যদি সহায়ক না হয় তবে তার ডালপালা ছাঁটাও জরুরী। যে সব আওয়ামী লীগার নামধারী প্রধানমন্ত্রীর সফরে তাঁর সংবর্ধনা সভায় শান্তি-শৃঙ্খলা মানে না তাদের দ্বারা দল ও দেশের কি উপকার হবে? কিভাবে তারা প্রবাসে বসবাসরত সুশীল সভ্য বাংলাদেশীদের মন কাড়বেন? আমি দেখি নেতৃত্বের লড়াই ব্যক্তির জেদ উগ্রতা আর সহিংস রূপ। এগুলো পুঞ্জীভূত হচ্ছে বলেই এর বহির্প্রকাশ এত উগ্র। আমরা এর অবসান চাই। প্রধানমন্ত্রী আপনি জাতির পিতার কন্যা, আপনার হাতে নিরাপদ বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রবাসেও নিরাপদ সভ্য আর শান্ত একটি জনগোষ্ঠীর নিশ্চয়তা কামনা করি আমরা। আপনি কঠোর হলেই তা সম্ভব। এখনও বিদেশে আওয়ামী লীগের দরকার ফুরোয়নি। এখনও আমাদের দুশমনরা সক্রিয়। তাই যতদিন এ পরিবেশ থাকবে আমাদের চাই দেশপ্রেমী আওয়ামী লীগার ও প্রবাসে বেড়ে ওঠা মেধাবী প্রজন্মের নেতৃত্ব। তারুণ্য এখন প্রস্তুত। তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার সময়ও হাজির। আমরা কি সেরকম আওয়ামী লীগ ও প্রবাসী পরিবেশ দেখব যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা থেকে বিদায় বা আগমন সবকিছু হবে শান্তিপূর্ণ ও সময়মাফিক? যারা নিজেদের দলের ও দেশের ইমেজ সমুন্নত রাখতে জানে না তারা মানুষের মন জয় করতে পারে না। এই সহজ বোধই এর সমাধান। আমরা যোগ্য দিকনির্দেশনার আশায় আছি।
×