ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নান্দনিক প্রযোজনা নৃত্যনাট্য ‘শকুন্তলা’

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নান্দনিক প্রযোজনা নৃত্যনাট্য ‘শকুন্তলা’

গৌতম পাণ্ডে ॥ মহাকবি কালিদাসের অনবদ্য সৃষ্টির মধ্যে একটি হলো ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’। ইউরোপের (জার্মান) বিখ্যাত কবি গ্যাটে এই নাটক সম্পর্কে বলেছেন, কেহ যদি তরুণ বৎসরের ফুল ও পরিণত বৎসরের ফল, কেহ যদি মর্ত্য ও স্বর্গ একত্রে দেখিতে চান, তবে ‘শকুন্তলা’য় তাহা পাইবেন’। এটি সাত পর্বের এক অসাধারণ ক্লাসিক। এই নাটকটিকে নৃত্যরসে রূপ দেয়া যে কত কঠিন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কঠিন কাজটি করেছে দেশের স্বনামধন্য নৃত্যসংগঠন ভাবনা। নাটকটিকে ‘শকুন্তলা’ নৃত্যনাট্যে রূপ দিয়ে মঞ্চে এনেছে এ সংগঠনটি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় হয়ে গেল এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই টিকেট কাউন্টার বন্ধ করতে হয় কর্তৃপক্ষের। কারণ, আর টিকেট নেই। বিভিন্ন মাধ্যমের অনেকে সিট না পেয়ে মিলনায়তনের মেঝেতে বসে উপভোগ করেছেন নৃত্য নাট্যটি। নৃত্য যে শরীরের ভাষা, এটা যেন পুরোপুরি দেখিয়ে দিল ভাবনা’র শিল্পীরা। যেমন ছিল এর হৃদয়গ্রাহী গান তেমটি ছিল নেপথ্য কথন। কস্টিউম, লাইট আর সেট ডিজাইনে ছিল নান্দনিকতার ছোঁয়া। সব মিলিয়ে অনবদ্য এক পরিবেশনা ‘শকুন্তলা’। নৃত্যনাট্যের শুরুটা ছিল হস্তিণাপুরের রাজা দুষ্মন্ত তার প্রিয় সহচরদের নিয়ে মৃগয়ার দৃশ্য দিয়ে। রাজা দুষ্মন্ত মৃগয়াতে এসে কর্ণ মুনির তপবনে প্রবেশ করলেন। তপোবনের সৌম্য শান্ত পরিবেশে মহর্ষির আশ্রমে থাকেন তার পালিতা কন্যা শকুন্তলা। চঞ্চলা নয়না একটি হরিণীকে অনুসরণ করতে রাজা দুষ্মন্ত মহর্ষির আশ্রমের কাছে চলে এলেন। মৃগটিকে অনুসরণ করতে করতে বহুদূর আসার পর দেখা গেল সেটি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। রথ দ্রুতগতিতে ধাবিত হতে লাগল। মৃগটি আবার রাজার দৃষ্টি গোচর হলে তিনি তীর নিক্ষেপের জন্য নিশানা করলেন। কিন্তু সেখানে অবস্থিত একদল ঋষি বালকের নিষেধে তীর ছোড়া থেকে বিরত হলেন। রাজা বালকদের কথা মান্য করায় তারা রাজাকে আশীর্বাদ করে বর দিল- রাজা গুণবান পুত্রসন্তান লাভ করবেন। বালকদের আমন্ত্রণে রাজা আশ্রমে গেলেন। আশ্রমে রাজা দুষ্মন্তের সঙ্গে শকুন্তলার সাক্ষাত এবং তৎপরবর্তী আনিন্দ্য সুন্দরী শকুন্তলার সঙ্গে রাজার বিয়ে হয়। বন থেকে চলে আসার সময় রাজা তার আংটি শকুন্তলাকে স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ দিয়ে গেলেন। শকুন্তলাকে দুর্বাসা মুনির অভিশাপে রাজা তার কথা একেবারে ভুলে গেলেন। কর্ণমুনি যখন জানতে পারলেন শকুন্তলার সঙ্গে রাজার বিয়ে হয়েছে তখন তিনি কন্যাকে পতি গৃহে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। জলে স্নান করতে গিয়ে রাজার দেয়া স্মৃতিচিহ্ন সেই আংটিটি গেল হারিয়ে। রাজা দুস্মন্ত রাজ সভায় বসে শকুন্তলাকে চিনতে পারলেন না, কোন দিন দেখেছেন বলেও স্বীকার করলেন না। মর্মাহত কন্যা এবার মা মেনকার আশ্রয় নিলেন। পরে এক জেলে মাছ ধরতে গিয়ে মাছের পেটে সেই আংটি পেল। নগরপালরা চোর বলে জেলেকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে এলো। এতদিন পরে সেই অভিজ্ঞান আংটিটি দেখে দুস্মন্তর স্মৃতি ফিরে এলো। কোন এক সময়ে তাদের পুনর্মিলন ঘটে। নৃত্যনাট্যের চিত্রনাট্য গ্রন্থনা আলোময় বিশ্বাস, নৃত্যপরিচালনা সামিনা হোসেন প্রেমা এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সুমন সরকার। এর কুশীলব হলেনÑ সামিনা হোসের প্রেমা, জায়না নূর জাকারিয়া, সুকোমল ইফতেখার কাকন, মোঃ হাদিউল ইসলাম হাদি, মোঃ আরাফাত হোসেন প্রমুখ। নেপত্থে কণ্ঠ দিয়েছেন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিমুল মুস্তাফা, তামান্না তিথি, দেবাশীষ চক্রবর্তী ও জয়ন্ত দাশ। কণ্ঠসঙ্গীতে খায়রুল আনাম শাকিল, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শীর্ষ রায়, সুমন সরকারসহ অনেকে।
×