ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে নতুন গতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যে নতুন গতি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের কর্মকা-ে নতুন গতি পাচ্ছে। আমদানি যোগ্য পণ্য আনতে ঢাকা-ইয়াঙ্গুন আর দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না ব্যবসায়ীদের। মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন ও কাছাকাছি শহর হিসেবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের মধ্যেই সুদৃঢ় হবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক দৃঢ় করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সহযোগিতায়। এ লক্ষ্যে আজ সোমবার মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৯ সদস্যের একটি দল কক্সবাজার শহরের অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদান করবেন। রবিবার বিকেলে মিয়ানমারের এ প্রতিনিধিদল টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছলে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাদের অভ্যর্থনা জানান। সোমবার সকাল ১০টায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আরাকান রাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিলিত হবেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। কলাতলীর তারকা মানের হোটেল ওশান প্যারাডাইজের শাহ সোজা হলে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দু’দেশের প্রতিনিধিদল ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করে তোলার বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। এটি হলে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে। কমে যেতে পারে ইয়াবাসহ অবৈধ ব্যবসা। সীমান্তের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও এটি একটি মাইলফলক হবে বলে আশা করছেন কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কক্সবাজারের ব্যবসায়ী দলের নেতৃত্ব দেবেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। রাখাইন প্রদেশের ৯ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক দলের নেতৃত্ব দেবেন রাখাইন এ্যাস্টেট চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান টিন অং উ এবং সিটুয়েস্থ (আকিয়াব) বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কাউন্সিল ও হেড অব মিশন শাহ আলম খোকন। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মিয়ানমার রাইখাইন প্রদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্টিজের ব্যবসায়ীদের সীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়ন শীর্ষক এক মতবিনিময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ সোমবার। বর্তমান সরকারের আন্তরিক বৈদেশিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল আজকের দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠক। ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক ও আস্থা সৃষ্টির পাশাপাশি সীমান্ত বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ ঘটানো। আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা আরও বলেন, মিয়নমারে বাংলাদেশী পণ্যের নতুন বাজার এবং চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আলোচনায় বর্তমান সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা, দুই দেশের স্থলবন্দরের সুবিধা বৃদ্ধিকরণ, ইমিগ্রেশন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানির মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা, পর্যটন ও সীমান্ত হাঁটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা হবে এ বৈঠকে। চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ, কাঠ, সিমেন্ট, স্টিল, ইলেকট্রিক লাইট, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী ও গার্মেন্টস সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। বিশেষ করে নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা এবং বাণিজ্যিক ঘাটতি কমানোই হবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য। আমদানি-রফতানি সহজীকরণসহ সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে উভয় দেশের আঞ্চলিক পর্যায়ের ভূমিকার ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ থাকবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন কক্সবাজারে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ বিষয়ক কি-নোট উপস্থাপন করবেন। আমদানি-রফতানিকারকদের প্রতিনিধি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও স্থলবন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী দফতরের কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের মতামত পেশ করবেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে উদ্বোধন হওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য ২১ বছর অতিক্রম করেছে। ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দেশের টেকনাফ এবং মিয়ানমারের মংডু টাউনশীপে পৃথক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণভাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া সীমান্ত বাণিজ্য হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২২তম বর্ষ চলছে। ২১ বছরে ১ হাজার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৪ টাকার রাজস্ব অর্জন করেছে সরকার। অবকাঠামোসহ নানা ধরনের সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সরকার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। রফতানি বাণিজ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্য নতুন পণ্য। টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে বৈধপথে মিয়ানমারে যাচ্ছে এদেশীয় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য। সরকার সীমান্ত বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে ক্রমান্বয়ে তা নিরসন করতে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার ট্রেড জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। বাংলাদেশের টেকনাফ ও কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের মংডুসহ বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে ওই গ্রুপের ৮টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সমস্যাসমূহ দূরীকরণের সুপারিশ এবং প্রস্তাব তৈরি, বিশেষত বর্ডার হাট চালু ইত্যাদি চূড়ান্ত করা হয় অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে, যা টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আজ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনায় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা গেছে।
×