ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহাসড়কগুলোতে দূর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানীর দায় নিলেন সেতুমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৫০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মহাসড়কগুলোতে দূর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানীর দায় নিলেন সেতুমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ মহাসড়কগুলোতে সড়ক দূর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যেক মানুষের প্রাণহানীর ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে সংসদে দাঁড়িয়ে দায় স্বীকার করলেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যানজট ও সড়ক দূর্ঘটনা সরকারকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে আমরা দূর্ঘটনা রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রবিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও পীর ফজলুর রহমানের পৃথক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি চালকও নই, গাড়ির মালিকও নই। তারপরও আমি সড়ক দূর্ঘটনায় পাখির মতো মানুষের প্রাণহানীর দায় স্বীকার করে নিয়েছি। তিনি জানান, দেশের মহাসড়কগুলোতে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করে তা রোধে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সমীক্ষার মাধ্যমে মোট ২২৭টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান (ব্লাক স্পট) চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কের ৬৮টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানের প্রতিকারমূলক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে যানচলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অবৈধ স্থাপনা, হাট, বাজার অপসারণ করা হচ্ছে। সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনারোধে ১৪৪টি ব্লাক স্পটের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত অর্থবছরে সাড়ে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮টি ব্লাক স্পটের প্রতিকারমূলক কাজ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে অবশিষ্ট ৭০টি ব্লাক স্পটের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পন্ন হবে। এজন্য ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আকতারের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ফুটপাত যদি আমরা পথচারীদের জন্য ছেড়ে দিতে না পারি তবে যতই ফ্লাইওভার, মেট্টোরেল নির্মাণ করি না কেন, কোন লাভ হবে না। ঢাকায় ৫০ হাজার ছোটযানের লাইসেন্স থাকলেও চলে ২০ লাখেরও ওপরে। এসব অবশ্যই সাহসের সঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে রাজধানীতে যানজট নিরসণ সম্ভব হবে না। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাভানা আকতারের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী জানান, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের শতকরা ৩৮ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। স্প্যান নির্মাণের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারী নাগাদ সারাদেশের মানুষের সামনে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হবে। মূল প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, এলেঙ্গা হতে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয় পাশে ধীরগতি যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪-লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। যা মূল সড়কের যানবাহনের সঙ্গে দূর্ঘটনা এড়াতে সহায়ক হবে। এছাড়া মহাসড়ক হতে কারিগরী দৃষ্টিকোন থেকে অপ্রয়োজনীয় স্পীডব্রেকার অপসারণ কার্যক্রম চলমান আছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন/রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি জানান, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৩তম সভায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারাদেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোতে যানবাহন ভেদে মোটরযানের সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার এবং ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি এলাকায় সর্বোচ্চ গতি ৪০ কিলোমিটার নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত অনুসারে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। মন্ত্রী আরও জানান, সড়ক নিরাপত্তা বিধানে সরকার জনস্বার্থে ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা/অটোটেম্পু এবং সকল শ্রেণীর অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু মেরামত ব্যয় বছরে ৪২ কোটি টাকা ॥ জাসদের সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের পৃথক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু সেতু মেরামত বাবদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৭৬৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সে অনুযায়ী মেরামত বাবদ বছরে গড়ে ৪২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনরে পর হতে চলতি বছররে জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে। সেতু রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাংলাদশে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বাবদ মোট ৮২০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর চলতি বছররে জুন পর্যন্ত সেতুর ঋণ ৪৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ পরিশোধ করা হয়েছে।
×