ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মো. শাহজাহান

অস্থিরতায় চামড়ার ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অস্থিরতায় চামড়ার ব্যবসা

সংগৃহীত চামড়ার একটা বড় অংশ আসে ঈদ-উল-আযহার পশু কোরবানি থেকে। তাই কোরবানি ঈদ ঘিরে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য পুরোদমেই প্রস্তুত ছিল রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের চামড়া আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু লবণের বাজারে অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া ও নানা জটিলতায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস নেমেছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে এ বছর। লোকসানে পড়েছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী। আর চামড়ার দাম অনেক কমে যাওয়ায় পাচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়ার দামের ওপর সমতা রেখে এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫, মহিষের চামড়া ৩০ থেকে ৩৫, খাসির চামড়া ২০ থেকে ২৫ এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন-চার বছর আগের কোরবানির ঈদে একটু মাঝারি সাইজের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। অথচ এবার তার চেয়ে বড় ও ভাল মানের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে ১ হাজার টাকায়। দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়াও বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এত কম দামে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার পরও আড়তদারের কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় লাভের পরিবর্তে অনেককেই উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে। লবণের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে গত বছরের ৫৫ টাকা বর্গফুটের তুলনায় এবার গরুর চামড়ার দাম ৫০ টাকা নির্ধারণ করেন ট্যানারি মালিকরা। এ ব্যাপারে একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছর গরুর দাম বাড়ছে, চামড়ার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে- তারপরও কমছে কাঁচা চামড়ার দাম। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যে ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন তারাই চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। কাঁচা চামড়া কিনে লোকসান গুনতে হচ্ছে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীকে। ফলে ঈদ মৌসুমে বাড়তি কিছু টাকা আয়ের আশায় চামড়া ব্যবসায় জড়িয়ে পুঁজি হারিয়ে বিপাকে পড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ট্যানাররা কাঁচা চামড়ার দাম খুব কম নির্ধারণ করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম এমন অজুহাত দেখিয়ে ট্যানাররা গত চার বছর ধরে চামড়ার দাম ক্রমাগত হ্রাস করে যাচ্ছেন। ২০১৩ সালে ঢাকার জন্য প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ২০১৪ সালে সেই দাম হ্রাস করে ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ২০১৫ সালে ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর এবার কাঁচা চামড়ার বর্গফুটপ্রতি দাম নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। চার বছরে চামড়ার দাম কমেছে। যেখানে সবকিছুর দামের উর্ধগতি সেখানে ট্যানাররা চামড়ার দাম কমিয়েছে। এই কম দাম নির্ধারণ আসলে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের ঠকানোর উদ্দেশ্যে এমনটাই দাবি করছেন প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা। এভাবে একে অপরকে দূষেছেন, কারসাজি করেছেন। এতে কারসাজিকারীরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও, ক্ষতি হয়েছে দেশের চামড়া শিল্পের।
×