ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রামবাংলার কাপড়ের হাট

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রামবাংলার কাপড়ের হাট

তাঁত শিল্পে সমৃদ্ধ ছোট জনপদ অর্থনৈতিক প্রধান চালিকাশক্তি। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি দেশের বস্ত্র খাতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান আজও দখল করে রয়েছে। এ তাঁত শিল্পে উৎপাদিত পণ্য ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বস্ত্রকে কেন্দ্র করেই ১৯৩৮ সালে কুমারখালী পৌর এলাকায় গড়ে ওঠে কাপড়ের হাট। যা পরবর্তীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড়ের হাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তখন এ হাটের যেমন ছিল সুনাম, তেমনই ছিল জৌলুস। সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে এই হাট চলত শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। বেচা-কেনা হতো রং ও সুতার পাশাপাশি শাড়ি, লুঙ্গি, শীতের চাদরসহ হরেক রকম কাপড়। সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক ব্যবসায়ীর আগমন ঘটত এ হাটে। সেই সঙ্গে স্থানীয় হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটত। বলতে গেলে এ কাপড়ের হাটকে কেন্দ্র করে সপ্তাহের তিন দিন এখানে চলত ক্রেতা-বিক্রেতাদের কর্মযজ্ঞের উৎসব। অথচ নানা সমস্যায় প্রাচীন এই হাটটি আজ ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এ হাটে এখন আর নেই অতিতের সেই জৌলুস। নেই সারাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীদের ব্যাপক উপস্থিতি। তারপরেও এ হাটে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়ে থাকে। কুমারখালীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন কাপড়ের হাট গড়ে ওঠা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের থাকার অসুবিধা, প্রান্তিক তাঁতিদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা, হাট ইজারাদারদের নানাবিধ অত্যাচার এবং পৌরসভা কর্র্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে ১৯৮০ সালের পর থেকে কুমারখালীর এ হাটের প্রতি বিমুখ হয়ে ব্যবসায়ীরা অন্যত্র চয়ে যায়। আগে বাইরের ব্যবসায়ীরা হাটে কম ভাড়ার দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করত। কিন্তু কয়েক বছর আগে কুমারখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ হাটে পাকা মার্কেট নির্মাণ করে অনেক চড়া মূল্যে বিক্রি ও বেশি ভাড়া আদায় শুরু করে। আবার দেখা যায় পৌর কর্তৃপক্ষের পছন্দের লোকেরাই সেসব দোকান ঘর বরাদ্দ পায়। এসব কারণেও ব্যবসায়ীরা এ হাটের প্রতি বিমুখ হয়। স্থানীয় তাঁতিদের উৎপাদিত লুঙ্গিই এখন এ হাটের অন্যতম আকর্ষণ। ইতোমধ্যেই কুমারখালীর লুঙ্গির সুনাম ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানকার লুঙ্গি টেকসই ও দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতাদের সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। রং সুতার দামের তুলনায় কুমারখালীতে উৎপাদিত লুঙ্গির মূল্য খুবই কম। এ ছাড়া এখানে উৎপাদিত বেডশীট, বেডকভার, পিলোকভার, তোয়ালের সুনাম রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। প্রতি মঙ্গলবার এখানে বসে শুধু গ্রে-লুঙ্গির হাট। তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত লুঙ্গির পসরা সাজিয়ে বসে এ হাটে। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বড় মহাজনরা এ হাট থেকে প্রথমে সমস্ত লুঙ্গি কিনে নেন। এরপর সেগুলো প্রসেস করার পর সারাদেশ থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। লুঙ্গির পাশাপাশি বেডশীট, বেডকভার, পিলোকভার ও তোয়ালেরও পাইকারি বেচাকেনা হয় এখানে। তবে এখনও এর জৌলুস ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান। তার মতে, হাটের উন্নয়নের জন্য চিকন সুতার লুঙ্গির উৎপাদন ও বিপণনের ব্যবস্থা করতে পারলে এবং হাটের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে এ হাটের জৌলুস ফিরে আসবে। তাছাড়া রঙের কাজ জানা দক্ষ কারিগর এবং ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড প্রসেস ব্যবস্থা গড়ে তোলাও দরকার। রাসেদ আহমেদ শিপলু
×