স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘জাতীয় নাট্যোৎসব ২০১৬’। জাতীয় নাট্যোৎসবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় মঞ্চস্থ হবে প্রাচ্যনাটের ষষ্ঠ প্রযোজনা ‘এ ম্যান ফর অল সিজনস’। নাটকটি ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর সর্বশেষ মঞ্চস্থ হয়েছিল। রবার্ট বোল্টের রচনা থেকে নাটকটি অনুবাদ করেছেন শাহেদ ইকবাল। নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম।
‘এ ম্যান ফর অল সিজনস’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, আজাদ আবুল কালাম, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন রেজভী, তপন মজুমদার, শিরিন সুলতান, শাহনাজ জেরিন সাত্তার, শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব, শতাব্দী ওয়াদুদ, জগন্ময় পাল, মোহাম্মদ রফিক, শাহেদ আলী, মিতুল রহমান, ফরহাদ হামিদ, সানজিদা প্রীতি, জাহাঙ্গীর আলম, রাহুল আনন্দ নীল কামরুল, ফুয়াদ বিন ইসি, গোপী দেবনাথ প্রমুখ। নাটকের সহকারী নির্দেশনা ও পোশাক পরিকল্পনা কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, নির্দেশকের সহকারী শাহেদ ইকবাল, মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনায় মোঃ সাইফুল ইসলাম, মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা সহকারী মোঃ নজরুল ইসলাম ছোট্কা, সঙ্গীত পরিকল্পনা রাহুল আনন্দ, সঙ্গীত পরিকল্পনা সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, পোশাক পরিকল্পনা সহকারী বন্যা মির্জা, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা প্রাণ রায়, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনা সহকারী মাসিহুদ্দৌলা আজাদ, মোস্তাক আহমেদ টিটু।
রাজা অষ্টম হেনরী সিংহাসনে আরোহণকালে তাঁর ভাইয়ের বিধবা পতœী স্পেনের রাজকন্যা ক্যাথরিনকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে খ্রিস্টীয় রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের কথা চিন্তা করে পোপ আইনের সংশোধন করে এই বিয়েতে মত দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দুই দেশের বন্ধৃত্ব নষ্ট হয়। ক্যাথরিন কোন পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে ব্যর্থ হন এবং রাজা এ্যান বুলেন নামক এক মহিলার প্রণয়াসক্ত হন। তারপর রাজা তাঁর বিয়ে অবৈধ দাবি করে পোপের কাছে বিচ্ছেদ অনুমোদন করার আবেদন করেন। পোপ তাতে অসম্মত হলে রাজা ‘এ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসী’ বিল পাস করে নিজেকেই ইংল্যান্ডের চার্চের প্রধান বলে অভিষিক্ত করেন ও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে অ্যান বুলেনকে বিয়ে করেন। রোমের সবাই এ বিয়ে মেনে নিলেও তৎকালীন লর্ড চ্যান্সেলর স্যার টমাস মোর এ বিয়েতে সম্মতি দেননি। তিনি প্রতিবাদও করেননি। শুধুমাত্র তিনি নিজ পদ হতে ইস্তফা দেন। এই নাটকের ঘটনাপ্রবাহ মূলত তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত এবং সমাজ ও নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর চিন্তাধারার সুস্পষ্টতাই নাটকের মূল উপজীব্য। নাটক প্রসঙ্গে নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেন, কত শত মনীষী ষোড়শ শতকের কথা লিখে গেছেন এবং এখনও লিখে চলেছেন নানা ব্যাখ্যায় নানানরঙে। এমনি এক সময়-যা শুধু ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং যার সুদূরপ্রসারী বিস্তার আজকের সময়েও সারাবিশ্বে বিরাজমান। তখন ইউরোপে রেনেসাঁ আর সংশোধনের কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, জীবনযাপন, সমাজকাঠামো সব বাঁক নিচ্ছে নতুন দিকে। এই সময়ের ঊষালগ্নে আমাদের ‘এ ম্যান ফর অল সিজন্স’ এর চরিত্ররা দর্শককের সামনে কথা বলে, আচরণ করে, পরস্পরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। নাটকটি প্রথম পড়তে গিয়ে আমি চমকিত হয়েছিলাম-আমার রক্ত চঞ্চল হয়েছিল টমাস মোরের দুর্ভাগ্য দেখে, পাশাপাশি আবিষ্কার করেছিলাম একজন মানুষকে, যে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সুবিধাজনক কোন অবস্থান গ্রহণ করেননি। আর সবাই যখন নিজের এবং অন্যের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অনাবিল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে, তাদের নীতি, বিশ্বাস সব বুক পকেটে লুকিয়ে রেখে তখন টমাস মোর পাথরের মতো একা দাঁড়িয়ে আছেন বিরুদ্ধ স্রোতে-তাঁর নিজের বিশ্বাস আর নীতিবোধের জমিনে।