ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর জীবন অভয়নগরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর জীবন অভয়নগরে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অভয়নগরে কয়েক লাখ পরিবার পানিবন্দী হয়ে গত দুই মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। অনেক পরিবার এসব স্থানে আশ্রয় না পেয়ে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার ওপর। কিন্তু যাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন ত্রাণ সহায়তা। পরিবারপরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দেয়াল চাপা পড়ে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে তিনজন। ঠাঁই হয়নি পারিবারিক গোরস্তানে। দাফন করতে হয়েছে দূরের কোন গ্রামে। কবে নাগাদ এসব মানুষ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে তা অনিশ্চত হয়ে পড়েছে। একটি পুরাতন লক্কড়-ঝক্কড় স্কেভেটর দিয়ে শ্রী-হরি নদীর পলি অপসারণের কাজ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ছয় বছরেও পলি অপসারণের কাজ শেষ হবে না। পানিবন্দী মানুষের করুণ আর্তনাদ মন্ত্রী, এমপিদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেও আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন গত দুই মাস ধরে। কিন্তু পানি সরানোর দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে জলাবদ্ধ মানুষ। যে কোন মুহূর্তে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতার কারণে পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ায় প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মণ মাছ। দূষিত হয়ে উঠছে পরিবেশ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে পানিবন্দী এলাকায়। সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের পানিবন্দী এলাকা সরেজমিন ঘুরে ও পানিবন্দী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে তারা পরিবার পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেদভিটা ব্রিজের ওপর আশ্রয় নেয়া মোরশেদ ও মনিরুলের পরিবার গত দুই মাস ধরে গৃহপালিত পশু নিয়ে একত্রে বসবাস করছে। তাদের ভাগ্যে এখনও পর্যন্ত জোটেনি কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা। পানিবাহিত রোগে ভুগছে তার পরিবার। চিকিৎসার অভাবে ছাগল ও মুরগি মারা গেছে। বলারাবাদ গ্রামের বিকাশ ঢালী জানান, তাদের গ্রামে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ বা চিকিৎসা সহায়তা আসেনি। অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। তাদের গ্রামের শত শত কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। আন্ধা গ্রামের দেবাশীষ টিকাদার জানান, শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে অনেক পরিবার। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান। কোটা গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানান, দেয়াল চাপা পড়ে ছুটি বেগম ও জামেদ আলী শেখ মারা যান। তাদের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা সম্ভব হয়নি। দিঘলিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মাহাবুব মোল্যা জানান, দিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের বাড়িতে পানি উঠাই তার পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেয় সৈয়েদিয়া আড়পাড়া দাখিল মাদ্রাসায়। চিকিৎসার অভাবে তার স্ত্রী মর্জিনা বেগমের মৃত্যু হলেও পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা সম্ভব হয়নি। আমরা ত্রাণ চাই না, পরিত্রাণ চাই। চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাদির মোল্যা জানান, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, আমডাঙ্গা খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে, মহাসড়কের ওপর অবস্থিত ছয় ভেল্টের সøুইস গেট সম্পূর্ণভাবে তুলতে পারলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অনেক পানি কমে যাবে। ফলে দুর্ভোগ কমবে। এখন প্রয়োজন সরকারী সহযোগিতা।
×