স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমনা পার্ককে আরও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে পার্ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে। উদ্যানের জন্য ক্ষতিকর মেহেগনি গাছগুলো অপসারণ করে দেশের ঐহিত্য রক্ষা পায়- এমন গাছ রোপণ করা হবে। পার্কের লেক বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদে সমৃদ্ধ করে তোলা হবে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলকে পাখির জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। সেই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত। শৌচাগারগুলোকে আরও আধুনিক ও উন্নত করা হবে এবং তা ব্যবহারে জনসাধারণকে ব্যয় করতে হবে নির্দিষ্ট অর্থ। পার্কের প্রবেশপথগুলো করা হবে আরও সবুজ ও বর্ণিল।
শনিবার সকালে রাজধানীর রমনা রেস্তরাঁয় রমনা পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ঐতিহ্য সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিনিধি, গণপূর্ত মন্ত্রণায়লের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট প্রকৃতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি- রমনা পার্ককে বাঁচাব। এখানে নতুন করে এমন বৃক্ষ লাগাব- যা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করে। এখানে পহেলা বৈশাখের মেলা ছাড়া অন্য কোন মেলা হবে না। শৌচাগারগুলোকে আরও উন্নত করা হবে, ব্যবহারকারীরা তা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়েই ব্যবহার করতে পারবে। তিনি বলেন, অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা যে গাছগুলো লাগিয়েছেন তার গায়ে যেন নাম ফলকের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলোর পার্কে এ ব্যবস্থা রয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটনের লাগানো গাছে এখনও নাম ফলক রয়েছে।
এ সময় সোহরাওয়ার্দী প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেও সুন্দরভাবে সাজাব। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ৭ মার্চের ভাষণের স্থানটি তারা নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা বলেছিলাম শিশুপার্ক উঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিশুপার্ক থাকবে- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কেন্দ্রে শিশুরা যাবে, প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থানকে তারা নিজ চোখে দেখবে। কোন যায়গায় ভাষণ দেয়া হয়েছে- শিশুরা তাও দেখবে। সংসদ ভবন সংলগ্ন জিয়ার মাজার সরানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, লুই কানের নকশায় যদি কোন কবরস্থান থাকে তাহলে কবর থাকবে, না থাকলে থাকবে না।
আলোচানায় অংশ নিয়ে নৈসর্গবিদ ও লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা বলেন, আমার অভিজ্ঞতা ও কর্মে যা কিছু অর্জন করেছি সবকিছুই পার্কের জন্য ব্যয় করব। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিনিধি শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, আমি এই সিদ্ধান্তগুলোতে মুগ্ধ। গাছের পাতাগুলো যেন পার্কে স্তূপাকারে রাখা না হয়। প্রয়োজনে তা সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে অপসারণ করাতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, রমনা পার্কের মেহেগনি গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। এগুলো উদ্যানের জন্য ক্ষতিকর। মেহগনি গাছের পরিবর্তে ওই স্থানগুলো পরিবেশবান্ধব ও উদ্যানের জন্য উপকারী গাছ রোপণ করা হবে। কিছু কিছু গাছের ডাল-পালা ছাটাই করতে হবে। রমনায় একটিমাত্র বট গাছ আছে- তা যেন ঠিকভাবে বেড়ে উঠে তা নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে বটের আশপাশের গাছগুলো কাটা হবে। পাখির জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার জন্য পার্কের একটি অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হবে।
বক্তারা বলেন, পাখি যেসব গাছ পছন্দ করে, সেসব গাছ রোপণ করা হলে সেসব গাছে পাখি বাসা বাঁধবে। গাছের পাতার স্তূপ পার্কে রাখা যাবে না, তা দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। পার্কের লেক খনন করা হবে। বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদে লেক সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। জাতীয় ফুল শাপলার প্রসার ঘটাতে হবে।