ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্প সাবমেরিন কেবলে ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিকল্প সাবমেরিন কেবলে ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে দেশ

ফিরোজ মান্না ॥ সি-মি-উই-৫ (সাউথ এশিয়া-মিডিলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) বিকল্প সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে ডিসেম্বরে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এই কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেবলটির স্থাপন কাজসহ অন্যান্য কারিগরি কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল দেশে যুক্ত হলে এক হাজার ৩শ’ জিবিপিএস (গিগা বিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। তখন ফোর-জি (চতুর্থ প্রজন্মের) ফাইভ-জি (পঞ্চম প্রজন্মের) নেটওয়ার্ক স্থাপন করা আরও সহজ হবে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় ১০ একর জমিতে ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনসহ নানা অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ করে বসে আছে। এখান থেকে কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত (প্রথম সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ল্যান্ডিং স্টেশন) ব্যাকবোন তৈরি করার কাজও শেষ। বর্তমানে সি-মি-উই-৪ কেবলের মাধ্যমে দেশে ব্যান্ডউইথ আসছে। এ কেবল কোন কারণে সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প সি-মি-উই-৫ কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ (ব্যাকআপ) দেয়া হবে। সি-মি-উই-৫ কেবলের দৈর্ঘ্য হবে সি-মি-উই-৪ কেবলের চেয়ে বেশি (২৫ হাজার কিলোমিটার)। বিএসসিসিএল সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬৬ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) দিয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা। বাকি ৩৫২ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা দেবে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। বিকল্প আরেকটি কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ আনার জন্য সি-মি-উই-৫ নামের নতুন কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সি-মি-উই-৪ এর (সাউথ এশিয়া-মিডিলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) কেবলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এ কেবলের মালিক হচ্ছে ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছেÑ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিসিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ নতুন কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিকও এই ১৬টি দেশ। কনসোর্টিয়াম ২০ হাজার কিলোমিটার সি-মি-উই-৪ কেবলের ‘আপগ্রেডেশন’ বা উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন দেশে বাড়তি ১৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ৪৪ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেশে আসত। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে উচ্চমূল্যেই ব্যান্ডউইথ কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কয়েক দফা কমিয়েছে। কিন্তু গ্রাহক সুবিধা পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হচ্ছে। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যই নিচ্ছে। এতে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে মনে করেন তারা। ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর দাবি অনেক দিনের। তারা মনে করেন, ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হলে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন যোগাযোগ ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ, দেশের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ (ডাটা ও ভয়েসের ক্ষেত্রে) চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সফটওয়্যার রফতানি, ডাটা এন্ট্রি ও ফ্রিল্যান্সিংসহ সার্বিক তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নত সেবা নিশ্চিত হবে। এদিকে কনসোর্টিয়াম দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের পর তৃতীয় কেবল স্থাপনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এ কেবল সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ ইতালি পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ১৬টি দেশের ১৬টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক একটি কনসোর্টিয়ামের অধীনে সাবমেরিন কেবল সিস্টেম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফ্রান্স, ইতালি, আলজিরিয়া, তিউনিশিয়া, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে একই কনসোর্টিয়ামের অধীনে সি-মি-উই-৪ নামে প্রথম সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারের ঝিলংজাতে স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে ঢাকার মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জে সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হয়।
×