ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্যাম্পাকো কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৪ দিন পর কংকাল উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ট্যাম্পাকো কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৪ দিন পর কংকাল উদ্ধার

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম ॥ গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘটনার ১৪দিন পর শনিবার দুপুরে এক ব্যক্তির কংকাল উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। মৃতদেহটি গলে যাওয়ায় সেটি নারী না পুরুষের তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এনিয়ে ওই কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। নিহতদের মধ্যে ৭জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। এদিকে ঘটনার ১৫তম দিন শনিবারও নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছে। এদিনও কারখানার ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় নিখোঁজদের সন্ধানে ওই ঘটনার ১৫তম দিনে শনিবার সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালায়। উদ্ধার অভিযান চলাকালে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ধসে পড়া কারখানার ৬তলা ভবনের পূর্ব পাশে একটি মেশিনের নিচ থেকে মানবকঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশেই কেমিক্যালের বিস্ফোরিত ড্রাম পড়ে ছিল। মৃতদেহটি গলে যাওয়ায় এবং আগুনে ও কেমিক্যালে পুড়ে যাওয়ায় তা নারী না পুরুষের তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম ॥ এদিকে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনার ১৫তম দিন শনিবারেও নিখোঁজদের সন্ধানে সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ‘ফায়ার ফাইটিং এ্যান্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছেন। ভবনে অরক্ষিত অবস্থায় কেমিক্যালের ড্রামগুলো পড়ে থাকায় যে কোন মুহূর্তে অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ঝুঁকি নিয়েই নিখোঁজদের সন্ধানে সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধার কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধসে যাওয়া ভবনের ঢালাই, ইট-পাথর ড্রাম্প ট্রাক দিয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে কারখানার পাশে অবিস্থত সোনালী ব্যাংকের বিসিক শিল্প এলাকা শাখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে ॥ অপরদিকে ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে এবং বর্তমানে কর্মরত তদন্ত কমিটিগুলোর মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে। তদন্ত কমিটিগুলোর মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দু’এক দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন হবে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য রবিবার নমুনা দেবেন নিখোঁজ দু’জনের স্বজন ॥ ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অজ্ঞাত ৭ লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার মালিবাগে সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে নিখোঁজ ১১ জনের স্বজনদের মধ্যে ৯ জনের স্বজনরা গত বুধবার তাদের লালা ও রক্ত দিয়েছেন। অপর নিখোঁজ কারখানার ক্লিনার মোঃ মামুন (২৮) ও চুন্নু মোল্লার (২২) স্বজনরা রবিবার নমুনা দেবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি ॥ এদিকে কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাস্ফোর ঘটনায় কারখানার মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হেসেনকে প্রধান আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় দু’টি হত্যা মামলা দায়ের হলেও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আরও এক নববধূ নিহত হওয়ার দাবি ॥ ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় পথচারী এক নববধূ নিহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে তার স্বজনরা। ঘটনার ১২ দিন পর গত বৃহস্পতিবার নিহতের বাবা এ দাবি করলেও সত্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় নিহতদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে দেয়া হয়নি আর্থিক অনুদানও। নিহত ওই নববধূর নাম আসমা আক্তার। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার রউয়া গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে এবং সুমনের স্ত্রী। নিহতের বাবা আব্দুল মতিন জানান, টঙ্গী বিসিকের রেডিসন এ্যাপারেলস পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন আসমা। প্রায় দেড় মাস আগে আসমার বিয়ে হয়। ঈদের ছুটিতে আসমা ও তার স্বামী সুমন গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তারা টঙ্গী বিসিক প্রধান সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে হঠাৎ ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কারখানার ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আসমা। কিন্তু সামান্য আগে থাকায় সুমন অল্পের জন্য রক্ষা পান। পরে সুমন পথচারীদের সহযোগিতায় ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে আসমার লাশ বের করে হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয় মিরাশ পাড়ায় ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে গোসল করিয়ে ও কাফন পরিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার রউয়া গ্রামে নিয়ে দাফন করেন।
×