ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবির

এখন দলগতভাবে জামায়াতের বিচার করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এখন দলগতভাবে জামায়াতের বিচার করতে হবে

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ ‘যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘সভ্যতার বোধ সৃষ্টির জন্যই একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের বিকল্প ছিল না। বিচার না হলে গণহত্যা রোধ করা সম্ভব হয় না। ঘাতকরা আবারও হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠত।’ ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নিউইয়র্ক শাখার এ অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির নির্মিত ‘জার্নি টু জাস্টিস’ নামক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ৫৯ মিনিটের এ তথ্যচিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের জঘন্য অপরাধের ধারাবিবরণী এবং সেই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চলমান বিচার সম্পর্কে বিশ্ব বিবেক কী বলছে তাও উপস্থাপিত হয়েছে বিভিন্নজনের বক্তব্যে। এ তথ্যচিত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আড়াই শতাধিক বছরে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে শতভাগ সমর্থন কখনও ছিল না। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল স্বচ্ছ হয়েছে, নাৎসীদের বিচার ঠিকমতো হয়নি ইত্যাদি বলা হচ্ছে। অথচ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের সময়ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল না। বর্তমানে কম্বোডিয়ায় যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। সেখানেও অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনই শুধু নয়, প্রদত্ত রায়ের পর্যালোচনার সুযোগও পাচ্ছে।’ শাহরিয়ার কবির বলেন, এখন সময় হচ্ছে দলগতভাবে জামায়াতের বিচার করার। এ দাবিতে সোচ্চার থাকতে হবে প্রবাসীদেরও। একই সঙ্গে ঘাতকদের সহায়-সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা ভিকটিমদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিংবা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সব সময়ই অভিযুক্তদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে মতামত ব্যক্ত করছে। অথচ তারা একটিবারের জন্যও ভিকটিমদের অসহনীয় যন্ত্রণা আর কষ্টের কথা বিবেচনায় রাখছে না। আমরা সারাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতদের শুধু একটি বিষয়েই অনুরোধ জানাচ্ছি যে, একাত্তরে যে ধরনের নৃশংসতা চালানো হয়েছে এবং সে নৃশংসতা-বর্বরতার শিকারদের কথাও একই সঙ্গে বিবেচনায় রাখা উচিত’- বলেন শাহরিয়ার কবির। লন্ডনে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং নিউইয়র্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন যে তথ্য সরবরাহ করে তার ভিত্তিতেই তারা বিবৃতি দেয়, উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং মন্তব্য করতে পিছপা হয় না যে, বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নাকি আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না- উল্লেখ করেন শাহরিয়ার কবির। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘একাত্তরে ৩০ লাখ বাঙালী হত্যা এবং দুই লাখের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানী করেছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কোন বিবৃতি এসব সংস্থা এখন পর্যন্ত দেয়নি। এসব ভিকটিমের অসহনীয় কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা খেয়াল করা উচিত।’ ‘ঘাতক আর দুর্বৃত্তদের পক্ষাবলম্বন করে একচেটিয়াভাবে বিবৃতি প্রদানের কারণে গীতা শ্যাগল ২০০৬ সালে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশাল ত্যাগ করতে বাধ্য হন’- বলেন শাহরিয়ার কবির। বাংলাদেশের জঙ্গীবাদ দমনের ভূমিকা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সরকার এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে লড়ছি বলে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। জঙ্গীরা আত্মগোপন করে থাকতে পারছে না। আশপাশের লোকজন পুলিশকে ওদের তথ্য দিচ্ছে।’ মার্কিনীদেরও সেভাবেই সচেতন হতে হবে। জঙ্গীদের তথ্য সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানালে জঙ্গীরা আর অপতৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার সাহস দেখাবে না বলেও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার কবির। হোস্ট সংগঠনের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রশ্নোত্তরপর্বের সমন্বয় করেন সেক্রেটারি স্বীকৃতি বড়ুয়া। প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারীরা এতে অংশ নেন এবং ঘাতকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকার সংকল্প গ্রহণ করেন।
×