ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান প্রথম ওয়ানডে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান প্রথম ওয়ানডে আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান নেই। ইনজুরি থেকে মুক্ত হতে অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় আছেন মুস্তাফিজ। তার অভাব বোধ আছে। তবে আজ যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, এই ম্যাচের দুইদিন আগে একটি সুসংবাদ মিলেছে। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ অবৈধ বোলিং এ্যাকশন থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। তার বোলিং বৈধ হয়ে গেছে। তাই শেষমুহূর্তে দলেও যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ দলও আরও শক্তিশালী হয়ে গেল। যে শক্তি দিয়েই আফগানদের সিরিজে হারানোর স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশ আফগানিস্তান সিরিজে না আবার জয়ী হয়ে যায় বৃষ্টি। সেই শঙ্কাও আছে। যেভাবে বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে তাতে প্রথম ওয়ানডেতেই শুধু নয়, পুরো সিরিজ জুড়েই বৃষ্টির প্রভাব থাকতে পারে। এ বৃষ্টির জন্যতো শনিবার কোন দলই ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারল না। যেন বৃষ্টি তার নজির দেখিয়ে দিল। আর জানান দিয়ে দিল, আমিও আছি সিরিজে। বিসিবিও তাই প্রতিটি ম্যাচেই ‘রিজার্ভ ডে’ রেখেছে। ‘রিজার্ভ ডে’ রাখা হয়েছে। তাতেও কাজ হয় কিনা, খেলা হয় কিনা; সেদিকেই সবার নজর থাকছে। তবে আবহাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী শনিবারই শুধু বৃষ্টি আছে। ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ওয়ানডের দিন কিংবা ১ অক্টোবর তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের দিন কোন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাহলেতো সিরিজ ভালভাবেই হচ্ছে। আর সিরিজ ভালভাবে হওয়া মানেতো বাংলাদেশেরই সিরিজ জেতার সুযোগ। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেতো বলেই দিয়েছেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সিরিজ জেতা।’ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কোচের সঙ্গে একমত না হয়ে উপায় নেই। বলেছেন, ‘আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে চাই। আমরা যেভাবে শেষ করেছি, সেভাবেই শুরু করতে চাই। চাইব আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে।’ শেষ থেকে শুরু করা মানে হচ্ছে, গতবছর যে টানা ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর জিম্বাবুইয়েকে বছরের শেষদিকে সিরিজে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলার পর এখন পর্যন্ত আর কোন ওয়ানডে খেলেনি। সেই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় মাশরাফিরা। একইভাবে তাই শুরু করতে চায়। মানে, জয় দিয়েই সিরিজ শুরু করতে চায়। আফগানিস্তানও একই স্বপ্ন দেখছে। অধিনায়ক আসগার স্ট্যানিকজাইতো বলেই দিয়েছেন, ‘জিততে চাই।’ তিনি বলেননি যে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়ানডে জিততে চান। সরাসরি বলেছেন, জিততে চান। মানে সিরিজ জেতার স্বপ্নই দেখছে আফগানরা! তবে আফগানিস্তানের কোচ লালচান্দ রাজপুত একটু সাবধানী পথেই হেঁটেছেন। তার কাছে, ‘বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। টেস্ট খেলুড়ে দল। দলটি দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে। এ দলের বিপক্ষে ভাল খেলাই লক্ষ্য।’ ভারতের জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দুটি টেস্ট ও চারটি ওয়ানডে খেলা এ ব্যাটসম্যান মনে করেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা কঠিন হবে। তবে অভিজ্ঞ ও তরুণ খেলোয়াড় নিয়ে আমাদের দলও ব্যালান্স।’ ২০০৭ সালে ভারত যখন প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ জিতে, তখন ভারতীয় দলের ম্যানেজার থাকা রাজপুত আরও যোগ করেন, ‘আমরা ভাল খেলা দেখাতে চাই। বাংলাদেশ দলে ভাল ব্যাটসম্যান আছে। দলের যে স্পিনাররা আছে, বাংলাদেশ দলের ভাল ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে কি করে তা দেখতে চাই।’ অধিনায়ক স্ট্যানিকজাই যতই জেতার কথা বলুক, কোচ রাজপুত যেন নিজ দলের সামর্থ্য সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত। তাইতো শনিবার সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জয়ের কথা একবারও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেননি। করবেনই বা কিভাবে। খেলা হলে বাংলাদেশ জিতবেই, এমন ধারণা যে সবার মধ্যেই ভর করছে। দলে যে ব্যাটিংয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন, নবাগত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। একের পর এক ব্যাটসম্যান। একজন ব্যর্থ হলে, আরেকজন হাল ধরতে প্রস্তুত। আরেকদিকে বোলিংয়ে পেস আক্রমণে মাশরাফি বিন মর্তুজা, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন এবং স্পিন আক্রমণে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, নাসির ও সৈকত আছেন। একজন ব্যর্থ হলে, আরেকজন উইকেট শিকারে পারদর্শী। এ ক্রিকেটারদের নামগুলোইতো এখন প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের জন্য যথেষ্ট। যে দলটি গতবছর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে পাত্তা দেয়নি। সেই বাংলাদেশ দল কি আর আফগানিস্তানকে গনায় ধরবে? আফগানিস্তানের অবশ্য বিসিবি একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে জেতাতেই আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। এ ম্যাচে জেতার সঙ্গে আফগানিস্তান যে ইদানীং ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলছে সেটিও আত্মবিশ্বাসে বাড়তি জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। গতবছর অক্টোবর থেকেই তাদের নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। জিম্বাবুইয়ের মাটিতে অক্টোবরে জিম্বাবুইয়েকে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টি২০ সিরিজের দুটি ম্যাচেই জিতেছে। এ বছর জানুয়ারিতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে জিম্বাবুইয়েকে আবারও ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে। দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের ফলও আফগানিস্তানের পক্ষেই গেছে। টি২০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ড, হংকং ও জিম্বাবুইয়েকে হারিয়েতো ‘সুপার টেনে’ খেলেছে আফগানরা। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হলো, তারা একটি ম্যাচেই হেরেছিল। যে দলটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল, সেই দলটি আর কেউ নয়; আফগানিস্তান। এরপর জুলাইয়ে এডিনবার্গে স্কটল্যান্ডকে দুই ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেলফাস্টে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছে। দুর্দান্ত সময়ই কাটছে আফগানিস্তানের। আফগানিস্তানের বোলাররা যে আসলেই ভাল বোলিং করেন, তা বিসিবি একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেই বোঝা গেছে। অভিজ্ঞ অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবীতো ৮ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে একাই চার উইকেট তুলে নিয়েছেন। আরেক লেগ স্পিনার রশিদ খান ৫.১ ওভার বল করে ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। আর বামহাতি পেসার ফরিদ আহমেদ ৫ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তার সঙ্গে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর অপেক্ষায় থাকা ডানহাতি পেসার করিম জানাত ৬ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন। শুরুতেই করিম ও ফরিদ মিলে গতির ঝড় তুলেন। এরপর নবী ও রশিদ মিলে স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু করেন। পেসার মিরওয়াইস আশরাফও কম নন। ৩ ওভার বল করে মাত্র ৪ রান দেন। উইকেটশূন্য থাকলেও বিসিবি একাদশের ব্যাটসম্যানদের ভালই চাপে রাখেন। তাইতো মিরওয়াইসের মুখে নিজেদের বোলারদের এত প্রশংসা। তবে আফগান ব্যাটসম্যানরাও কম নন। জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রাখা বিসিবি একাদশের আলাউদ্দিন বাবু, আবু হায়দার রনি, শুভাশিষ রায়, সৈকত, সানজামুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজদের বোলিংকেও টেক্কা দেন বামহাতি ব্যাটসম্যান হাসমতুল্লাহ শহীদি। একাই ৬৯ রান করেন। মিরওয়াইস আশরাফতো ঝড়ো ইনিংস খেলে ১৯ বলে তিন চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩২ রান করেন। অধিনায়ক আসগার স্ট্যানিকজাই (৩১) ও রশিদ খানও (৩০) দলের স্কোরবোর্ড মজবুত করতে নৈপুণ্য দেখান। তাতে বোঝা যাচ্ছে, বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও ভাল দল আফগানিস্তান। আর তাই মাশরাফি বলেছেন, ‘পুরো দলটাকেই আমরা সম্মান করছি।’ সেটি মাঠের বাইরে। মাঠের ভেতরতো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে আফগানিস্তানকে দুমড়ে মুছড়ে দেয়ার পরিকল্পনাই করে রেখেছেন মাশরাফিরা। আফগানদের হালকাভাবে না নিয়ে এখন মাঠে এর ফল মিললেই হয়ে যায়। আজ প্রথম ওয়ানডেই শুধু নয়, টানা তিনটি ওয়ানডে জিতে সিরিজ মুঠোয় বন্দী করুক বাংলাদেশ, সেটি এখন সবারই চাওয়া।
×