ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লঞ্চ দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

লঞ্চ দুর্ঘটনা

নদীপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও প্রতিবছর নৌপথে কমবেশি দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত লোক মারা যায় অথচ এর কোন যথাযথ তদন্ত হয় না। এই দুর্ঘটনায় কত পরিবার অসহায় হচ্ছে তার খবরও হয়ত কেউ রাখে না। নদীপথে সাধারণত, লঞ্চের চালক ও সহযোগীদের অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য লঞ্চ দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। অনেক সময় অধিক যাত্রী বহন, লঞ্চের ডেকে ওভারলোড মালামাল নেয়া, লঞ্চের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া, সার্ভে ও ফিটনেস সার্টিফিকেটে ত্রুটি এবং রাতেরবেলা লঞ্চগুলোর সার্চলাইট বন্ধ রাখার কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু জানমালের ক্ষতি হয়ে থাকে। বুধবার বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় অসহায়ভাবে মারা গেল কয়েকজন যাত্রী। দুর্ঘটনাকবলিত এমএল ঐশী নামের লঞ্চটির কোন রুট পারমিট ছিল না। ছোট আকারের লঞ্চটি ৩৫ থেকে ৪০ যাত্রী নিয়ে পাশের উপজেলা উজিরপুরের হাবিবপুরের দিকে রওনা হয়। মাঝপথে বানারীপাড়ার রাজার খালের মোহনায় যাত্রী ওঠানামার পর ঘাট ছাড়ার সময় হঠাৎ নদী ভাঙ্গনে সামনের একটা অংশ ভেঙ্গে পড়লে লঞ্চটি কাত হয়ে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পর মাত্র পাঁচ-ছয়জন যাত্রী সাঁতার কেটে কূলে উঠতে সমর্থ হয়। সর্বশেষ ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে প্রবল স্রোতে অন্যদের লাশ দূরে সরে গেছে। ঈদের পরপরই লঞ্চডুবির ঘটনা ধারে কাছের জনপদে শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে প্রতিবছর লঞ্চডুবির ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন, চালকদের অদক্ষতা-অনভিজ্ঞতা, লঞ্চের নক্সায় সমস্যা, লঞ্চের ফিটনেস তদারকির অভাবসহ নানাবিধ কারণে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। যখনই কোন লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে বহু মানুষের মৃত্যু হয়, তখনই তা নিয়ে কথা ওঠে। প্রতিকারের নানা ব্যবস্থার কথা বলা হয়। অন্য সময় এ বিষয়গুলো দেখভাল করার যেন কেউ থাকে না। লঞ্চডুবির পর দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে বরিশালের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সান্ত¡না দিয়েছেন। যা প্রতিটি লঞ্চ দুর্ঘটনার পর আনুষ্ঠানিকতার অংশ মাত্র। কিন্তু আসল কাজ হয় না। রুট পারমিটহীন লঞ্চ চলাচল যেমন বন্ধ হচ্ছে না, লঞ্চ দুর্ঘটনার লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠনে ঘাটতি না থাকলেও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ এবং দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। লঞ্চডুবির কারণগুলো সবারই জানা, সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চ ডোবার পেছনেও সেগুলোই কাজ করেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ দেশে পর্যাপ্ত আইন-কানুন নেই। একটি সরকারী অধ্যাদেশ পাঁচ দফায় সংশোধন করার পরও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নামমাত্র জরিমানা। লঞ্চ দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু বন্ধ করতে হলে প্রথমেই কঠোর শাস্তির বিধান যুক্ত করা উচিত। পাশাপাশি নক্সা অনুযায়ী লঞ্চ নির্মাণ, লঞ্চের ফিটনেস নিয়মিত তদারকি ও চালক-সহযোগীদের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাসহ পুরো খাতটির ওপর বিশেষ নজরদারি দরকার। এ অবস্থা থেকে দেশবাসী পরিত্রাণ পেতে চায়। সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।
×