ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বীকৃত জঙ্গীরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

স্বীকৃত জঙ্গীরাষ্ট্র

মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন হলো জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ। যখন তা রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন তা হয় যুদ্ধাপরাধ। পাকিস্তান নামক ভূখ-টি এই দুটি বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশটি সন্ত্রাসের বিশ্বখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে ভূখ-টি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বিদেশ হতে পাওয়া অনুদানের অর্থের বড় অংশ জঙ্গী গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করে আসছে তারা। সন্ত্রাসী বা জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে, অর্থ যোগানে এবং সাহায্য-সহায়তা করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কোটি কোটি ডলার খরচ করে এবং তার বেশিরভাগই বিদেশী সাহায্য হিসেবে প্রাপ্ত। এমন কি জঙ্গী দমনের জন্য প্রাপ্ত আর্থিক অনুদানও ব্যয় করে জঙ্গী উৎপাদনে। এই জঙ্গীদের ব্যবহার করা হয় প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে। এমনও হচ্ছে, প্রশিক্ষিত জঙ্গীরা প্রতিবেশী দেশে গিয়ে জঙ্গীগোষ্ঠী তৈরি করছে। অর্থ ও অস্ত্র সাহায্যও প্রদান করছে। বলা চলে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গী উৎপাদনের এক কারখানায় পরিণত হয়েছে। এসব জঙ্গী নিজ দেশেও হামলা চালাতে কসুর করে না। প্রাচীন যুগের শিক্ষাকেন্দ্র তক্ষশীলা এবং হরপ্পা-মোহেনজোদারের সভ্যতাধারণকারী অঞ্চলটির দিকে একালে সারাবিশ্ব থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে আসছে। আর সেই শিক্ষাকেন্দ্রের বিষাক্ত পাঠ্যক্রমের ফলটা গোটা পৃথিবীকে ভুগতে হয়। জাতিসংঘ যেসব জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ করেছে, সেসব সংগঠনের সদস্যরা কিভাবে পাকিস্তানে নিজেদের কার্যকলাপ চালায় এবং সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য রাস্তায় নেমে অবাধে কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করে, সেসব গণমাধ্যমে আকছার প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। পাকিস্তান তাদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসকে বাংলাদেশেও সম্প্রসারিত করেছে। জামায়াতসহ মৌলবাদী দলের তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এদেশে পাঠানো শুধু নয়, তাদের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে আসছে। এমনকি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের লোকজন জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত থাকায় ও অস্ত্র সহায়তা প্রদান করায় বহিষ্কৃতও হয়েছে। একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকাররা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণের পরও তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা ২০০১, ২০০৮ সালসহ সাম্প্রতিককালে ও জঙ্গী হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করেছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব দরবারকে জানিয়ে আসছে যে, পাকিস্তান সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং অনেকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এসেছে। বিস্ময়কর যে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের লালন-পালন কেন্দ্র হিসেবে যারা সার্বিক সহায়তা দিয়ে এসেছে, সেই তারাই আজ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ঘোষণার জন্য মার্কিন কংগ্রেসে বিল আনা হয়েছে। বিলটিতে পাকিস্তান কিভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে মদদ দিচ্ছে তার কিছু উদাহরণ দেয়া হয়েছে। বিল উত্থাপকদের একজন বলেছেন, পাকিস্তান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অবিশ্বস্ত এক সহযোগীই নয়, তারা দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে আসছে। বিশ্বাসঘাতকতার জন্য পাকিস্তানকে অর্থ প্রদান বন্ধ ও দেশটিকে জঙ্গীবাদের মদদদাতা হিসেবে ঘোষণা করা দরকার। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতও বলেছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিশ্বে পাকিস্তান আজ মূলত একঘরে। পাকিস্তান শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, আফগানিস্তান মিয়ানমারেও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে, এসব দমন বিশ্ব শান্তির জন্য জরুরী আজ। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে ঘোষণার জন্য আনা বিলকে স্বাগত জানাই। এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের প্রকৃত কারণকে বা এর জন্য দায়ী রাষ্ট্রটাকে বিশ্ববাসী যথাযথভাবে চিহ্নিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
×